ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন

উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন আজ (৬ অক্টোবর ২০১৮) শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তন উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও ভবন ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। কালো গাউন পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস জুড়ে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে। দিনভর ছবি তোলা, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, হৈ চৈ ও কোলাহলে মেতে থাকে সবাই।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো: আবদুল হামিদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ভাষণ দেন। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এসময় প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীনসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১জনকে পিএইচ ডি এবং ২৭জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের ইতিহাসে সর্বাধিক ২১ হাজার ১শ’ ১১জন গ্র্যাজুয়েটকে অনুষ্ঠানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনগণ অনুষদভুক্ত বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ডিগ্রিপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটদের নাম উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো: এনামউজ্জামান সমাবর্তন অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

Post MIddle

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো: আবদুল হামিদ দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গ্র্যাজুয়েটদেরকে সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ ধারণ করতে হবে। সত্যের সঙ্গে মিথ্যার বা ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়ের আপস করা যাবে না। সব সময় বিবেককে জাগ্রত রাখতে হবে। মাতৃভূমি ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি এবং বর্তমানের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতের ছাত্র-রাজনীতির আদর্শ ছিল দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধন করা। সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোন স্থান ছিল না। তিনি বলেন, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্রদের রাজনীতি করতে হবে। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর পেশাজীবীদের রাজনীতিতে আসার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ভাবতে হবে। ছাত্র নেতাদের মধ্য থেকেই জাতীয় নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি ডাকসু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, নিছক চাকরির জন্য উচ্চশিক্ষা নয়, উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য নিজে শিক্ষিত হওয়া, অন্যকে শিক্ষিত করা, মানবিক ও উদার হওয়া। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বা বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া নয়, মনুষ্যত্বের বিকাশই হলো উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা কতটুকু এগুতে পেরেছি, তা আজ বিবেচ্য বিষয়। বিত্তের পরিবর্তে চিত্তের প্রসারকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় অশুভ ও অনৈতিক প্রতিযোগিতা সমাজকে রুদ্ধ করবে, মনুষ্যত্বের বিকাশ হবে সুদূর পরাহত। তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে ও জাতীয় স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরিকল্পিতভাবে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গবেষণা ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজউকের বরাদ্দকৃত জমির আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শুরু হবে। যুগের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। বহির্বিশ্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং উন্নয়নেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বৃত্তি হিসেবে পুনরায় ‘বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ’ চালু করেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ও রাজনীতিমনস্ক গ্র্যাজুয়েট তৈরি ও ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্বের বিকাশ ধারা বজায় রাখার লক্ষ্যে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। সুষ্ঠুভাবে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। উপাচার্য তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, উচ্চশিক্ষা লাভ করে একজন গ্র্যাজুয়েট যদি ভালো মন্দ বিচার করতে না পারে এবং ভালোর পক্ষে দাঁড়িয়ে মন্দকে প্রতিরোধ করতে না পারে, তাহলে তার উচ্চশিক্ষা বৃথা। দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখনও সাক্ষরতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষের কল্যাণে গ্র্যাজুয়েটদের কাজ করতে হবে।

পছন্দের আরো পোস্ট