প্রেমের জন্ম ও মৃত্যু!

প্রেম-ভালোবাসায় মানুষ পরাজিত হতে পারে। তাই বলে প্রেম বা ভালোবাসার কখনও মৃত্যু হতে পারে না। পোড়ামন বাঁচিয়ে রাখবে হৃদয়ের স্পন্দন! বিজ্ঞানের বিস্ময়কর এ উৎকর্ষতার যুগেও প্রেম ভালোবাসা মানুষকে কাঁদায়।

স্বপ্ন দেখে বাস্তবতায় কোন মিল পাওয়া যাবেনা। স্বপ্ন আর বাস্তবতার হিসাব অনেক কঠিন ও দুরহ ব্যাপার! প্রেমের জন্ম বা মৃত্যু হতে পারে একটি মেয়র সাথে। প্রেমিক যুবকটাকে স্বপ্ন দেখিয়ে প্রেমিকা যুবতী এখন বাস্তবতায়। দুটি মন যখন এক হয়ে থাকে সেটাকে বলে প্রেম। আর জগতের মোহে মিশে একটি ঘরে যখন দুজন থাকে, সেটাও প্রেম। প্রেমের সাগরে ডুবে কিংবা সাঁতরে বেঁচে যাওয়া মানুষদের আর প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কে না জড়িয়ে নতুন পথের যাত্রি হয়ে ঘরে ফেরা উচিত। দুর্ভাগ্য বা ভাগ্যবান বলে একটা প্রবাদ আছে, আমার স্বপ্ন আর বাস্তবতার আলোকে এতটুকু বলতে পারি যারা নতুন করে প্রেম ভালোবাসা করতে চান না তাদের আর প্রয়োজন নেই এ সম্পর্কে জানার। তবে যারা পুরাতনকে ভেঙ্গে নতুন প্রেমের কথা ভাবছেন, একবার হলেও গল্পটা পড়বেন। এতে আপনি উপকৃত হবেন।

প্রেমের প্রকৃত অর্জন বা উপলব্ধি থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। প্রেমের মৃত্যু বলে কিছু নেই, তবে প্রেমিকার বা প্রেমিকের মৃত্যু হতে পারে। প্রেমের নৌকা স্রোতের টানে যেতে পারে সুন্দরবনে। তবে সুন্দরবনের প্রাণিরাও কিন্তু মানব প্রেমে পড়তে পারে। পারছিনা! এ বনে আর একা একা থাকতে। তাই তোমার মতো অন্যজগত যাচ্ছি এবার গড়তে। তুমি পাখির সুরে গান শুনিয়ে ঘুম পড়াতে আমায়। আমি প্রেমের জীবন-যন্ত্রনাতে কেঁদেছি রাতভর। অল্প বয়স, স্বপ্ন অনেক এখন হবে কি উপায়? অবুঝ প্রাণি, আমি তোমার স্বপ্নের রাজকুমার!

আমি এখনও কেন প্রতি রাতে ভাবছি তোমার কথা। নিরাপদ সড়কে প্রাণ গেলেও, পাবোনা হয়তো ব্যাথা। তবু প্রেমের জন্ম ও মৃত্যুর পরশ পেয়েছি তোমার কাছে। তাই সব অভিমান ভুলে এবার বাস্তবতার সাঁজে। মধুর স্বাদ যে ব্যক্তি কখনো লাভ করেনি, তাকে যেমন চিনি ও গুড়ে মিশেলে মধুর স্বাদ বোঝানো যাবে না, তেমনিভাবে ‘প্রেম কী’ জানতে হলে খোদ প্রশ্নকর্তাকেই প্রেমে পড়তে হবে। প্রেমের সত্যিকার উপলব্ধি অর্জন করা তখনই সম্ভব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন প্রেম-ভালোবাসা গড়ে উঠছে খুব সহজে। বাস্তবতার সাথে অনলাইন প্রেমের সাদৃশ্য অনেকটা তুচ্ছ। কথাটি এখন বাস্তবতার সাথে মিশে গেছে। কিছুদিন আগে যেটা ছিল চিঠিপত্র বা দুরু দুরু মনে কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতর। কিন্তু এখন আর সেটি কল্পনা করা যায়না। এখন ছেলে মেয়েরা প্রেম করছে ফেসবুকে। প্রেমিক প্রেমিকারা ফেসবুক থেকে খুঁজে নিচ্ছে তার প্রিয় সঙ্গীকে। তবে অনেকে আবার প্রচারণার ফাঁদে পড়ে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় দেখা যায় ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ছেলে-মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠছে।

আজ শনিবার, রাত ১০টা বাজে। আকাশ নিজের বেড রুমে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছিল। হটাৎ চাঁদনি নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ম্যাসেজ! আকাশও মেয়েটির সাথে অনেক সময় ধরে বার্তা আদান প্রদান করলো। এক পর্যায় চাঁদনি আকাশকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। আকাশ চাঁদনিকে আগে থেকে চিনতো, কিন্তু কখনো ভালো করে তাকে দেখিনি। তাই আকাশ চাঁদনিকে বললো আগামীকাল রবিবার কলেজে দেখা করবো। চাঁদনি রাজি হলো। পরদিন সকালে তারা কলেজ ক্যাম্পাসে দেখাও করলো। দুজন দুজনের মধ্যে জন্ম নিল ভালোবাসা। চাঁদনি আর আকাশের মধ্যে প্রায় ৩ মাস ধরে চলতে থাকে প্রেমের সম্পর্ক।

হটাৎ একদিন রাত ১২টার দিকে আকাশ চাঁদনি’র ফোনে কল করলো। সেদিন চাঁদনির ফোনটা ছিল ওয়েটিং। এর আগেও এভাবে অনেকবার চাঁদনির ফোন ওয়েটিং ছিল। কিন্তু আকাশকে এতোদিন যা বুঝানো হয়েছে তাই বুঝেছিল। প্রায় ১ ঘন্টা যখন চাঁদনির ফোনটা ওয়েটিং তখন আকাশ তার ল্যাপটপ টা ওপেন করে চাঁদনির ফোন নাম্বারটি ট্রাকিং করলো। তারপর থেকে আকাশ প্রতিনিয়ত চাঁদনি কখন, কোথায় কথা বলছে তা আকাশ নোট করতে শুরু করলো। এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর আকাশ দেখলো চাঁদনির ফোনে আকাশের চেয়ে বেশি বার কথা বলা হচ্ছে একটি মেয়ের নামে সেভ করা নাম্বারে।

তখন আকাশের সন্দেহ হলো। আর ঐ মেয়েটির নাম্বারে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে ফোন দিল। কিন্তু ফোনটি রিসিভ কলো একটি ছেলে। আকাশ কোন কথা না বলে ফোনটি রেখে দিল। আকাশ তখন ঐ ছেলেটির নাম্বারটি ফেসবুকে সার্চ দিয়ে দেখলো এবং তার পরিচয় পেল। সেই সেলেটির নাম ছিল নীল। কিছুক্ষণ পর চাঁদনির ফোন থেকে আকাশের ঐ অপরিচিত নাম্বারে কল আসলো।

Post MIddle

আকাশের তখন পায়ের তলের মাটি সরে যেতে লাগলো। এটা কি হচ্ছে? কিভাবে সম্ভব। আকাশ ফোনটা রিসিভ না করে। আকাশের নাম্বার থেকে চাঁদনিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো নীল তোমার কি হয়? চাঁদনি তখন রেগে গিয়ে বললো এটা জেনে আপনার কি হবে? আর আপনি কেন ওর পরিচয় জানতে চাচ্ছেন? আকাশ অনেক সময় ধরে তর্ক-বিতর্ক ও রাগারাগির এক পর্যায় চাঁদনি বললো আমি নীলকে ভালোবাসি। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পরে আকাশ যখন জানতে পারলো চাঁদনি অন্য একজনকে ভালোবাসে। তখন সে আত্মহত্যা বা অনেক দুরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

পরদিন সকালে আকাশ রাজধানীর উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো। চাঁদনি বার বার আকাশকে ফোন দেওয়ার পর আকাশ ফোনটা রিসিভ করলো। তখন চাঁদনি বললো আমি আপনাকে ভালোবাসি, আর আপনাকেই চাই। আকাশ সব কষ্ট সহ্য করেও চাঁদনির অনুরোধে আবার গ্রামে ফিরে আসলো। কিন্তু আসার পরেও চাঁদনি নীলের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। আকাশ তখন চাঁদনিকে বললো, তুমি দুজনের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবেনা। যদি একজনকে ভুলে আমার কাছে আসতে পারো তাহলে আমি তোমার সব কিছু মেনে আবার নতুন করে ভালোবাসাতে পারবো। চাঁদনি কোন ভাবেই রাজি হতে পারলো না।

এক পর্যায় বললো আমাকে কিছুদনি সময় দিতে হবে। কিছু দিন নীলের সাথে কথা বলার পর আস্তে আস্তে ওর সাথে আর কথা বলবো না। আকাশ তখন এটা আর মেনে নিতে না পেরে চাঁদনিকে বললো, তাহলে তুমি আমাকে ভুলে যাও। কারণ একটা মেয়ে একসাথে দুজনের সম্পর্ক রাখবে। এটা আমি মেনে নিতে পারবো না। এভাবে আকাশ চাঁদনির জীবন থেকে সরে গেলে।

এদিকে নীলও জানতে পারলো, চাঁদনি আকাশ নামে একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চাঁদনিও নীল কে বলেছে সে আকাশের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে। অবশ্যই আকাশের সাথে চাঁদনির সম্পর্ক হওয়ার ৩ বছর আগে থেকে নীলের সাথে চাঁদনির সম্পর্ক ছিল।

কিন্তু চাঁদনি সেটা গোপন রেখে কোন স্বার্থের কারণে আকাশের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছিল। স্বার্থ ফুরানোর পর আবার নীলকে আপন করে নিয়ে হয়ত সুখে আছে। এভাবে কিছুদিন পার হয়ে যাওয়ার পর হটাৎ একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে চাঁদনির সাথে আকাশে দেখা হলো। আকাশ কষ্ট ভরা হৃদয় নিয়ে চাঁদনির সামনে গিয়ে বললো- আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি। যদি মন চায় তাহলে আবার আমার কাছে ফিরে এসো। কিন্তু চাঁদনি আর রাজি না হয়ে আকাশকে তার মতো নতুনভাবে জীবন শুরু করার কথা বললো। আকাশও তাতে রাজি হলো এবং নতুনভাবে জীবনের গতি শুরু করলো।

এভাবে যখন দুজনের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল কিছুদিন তাদের খুব কষ্ট ও বিষন্নতা লাগলেও অল্প কিছু দিনের মধ্যে তার সমাধান হয়ে গেল। পরে আবার নতুন করে আকাশ ও চাঁদনির মধ্যে সম্পর্ক শুরু হলো কিন্তু তা আবেগময়।

প্রেমের পথে মানুষের জীবনে কখনো কখনো হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো এমন কেউ এসে পড়ে যা মনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যায়। কেউ কেউ সেই মানুষটিকে মনে রাখে সারাজীবন। আবার কেও কেও প্রেমে করলেও পৃথিবীর কোন প্রাণিকুল তা জানতে পারে না। এ ধরনের অনুভূতি বা সম্পর্কের নাম কী? রবীন্দ্রনাথের ভাষায় হয়তোবা এরা ‘ক্ষণিকের অতিথি’। কিন্তু ক্ষণিকের অতিথি হয়েও কেউ কেউ সারাজীবন জুড়ে থাকেন।

বনলতা সেন’ সেই রকমই একজন অসাধারণ নারী। কবির সঙ্গে তার দীর্ঘস্থায়ী কোনো সম্পর্ক ছিল না। তারপরও বনলতা সেন আধুনিক বাংলা কবিতায় ক্ল্যাসিক প্রেমিকার প্রতীক।

লেখক: সম্পাদক: মাসিক সাহিত্যপাতা।

পছন্দের আরো পোস্ট