স্টামফোর্ড শিক্ষকদের ঈদ ভাবনা

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটছেন নাড়ির টানে, বাড়ির পথে। এ চলে যাওয়াটা পরিবারকে কাছে পাওয়ার জন্য চলে যাওয়া, ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেবার আনন্দ। শিক্ষকদের ঈদ কেমন কাটে তা জানতে আমরা কথা বলি বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে,জানি তাদের ঈদ অনুভূতি বা মজার স্মৃতিচারণ।স্বাক্ষাতকার নিয়েছেন এডুকেশন ২৪ এর ফিচার হেড ও স্টামফোর্ড প্রতিনিধি হাসান সাকিব।

প্রফেসর ড.আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার।স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, সেই সাথে পরিবেশ বাচাও আন্দোলন “পবা” এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক প্রথম মাদক বিরোধী ফোরাম ” স্টামফোর্ড এন্টি ড্রাগ ” ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবারের ঈদ কিভাবে কাটাবেন তা জানতে স্বাক্ষাতকার নিয়েছেন এডুকেশন ২৪ এ ফিচার হেড হাসান সাকিব।

ড.কামরুজ্জামানছুটিতে কি করবেন?

ড.কামরুজ্জামান: আসলে আমাদের শিক্ষকদের জীবন জীবনটা পাঠদান ও গবেষণারমধ্য দিয়ে এতই ব্যস্ততায় কাটে যে পরিবারের জন্য সময় বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এবার ঈদের সবটুকু সময় আমার পরিবার, মা-বাবা, ভাই-বোন আর আত্মীয়দের সাথে ভাগ করে নিতে চাই।

গরীব অসহায় মানুষদের জন্য “স্টামফোর্ড মাদকবিরোধী ফোরাম”থেকে কি করছেন?

ড.কামরুজ্জামান: ক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবছরে ন্যায় এইবারও সবার জন্য দোয়া ও ইফতার এর আয়োজন ছিল, সাথে ছোট ছোট বাচ্চাদের ঈদের জামা উপহার দেওয়া হয়েছে।

ঈদ কোথায় করবেন?

ড.কামরুজ্জামান: প্রত্যেক বছর মা-বাবা, ভাই-বোন আর আত্মীয়দের সাথে গ্রামের বাড়িতে (ফেনী, ছাগলনাইয়া) ঈদ করা হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

ঈদের দিন কিভাবে কাটান?

ড.কামরুজ্জামান: ঈদের নামাজ যাওয়ার পূর্বে প্রথমে বাবা-মা কে সালাম করে ও দোয়া নিয়ে নামাজে যাই। নামাজ পড়ে এসে মায়ের হাতে রান্না করা অমৃত স্বাদের সেমাই খাই,পরবর্তীতে আমার সন্তানকে সাথে নিয়ে ভাই-বোন, আশেপাশেরআত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের সাথে দেখা করে আসি।

এবার ঈদ কিভাবে কাটাবেন?

ড.কামরুজ্জামান: যথারীতি বাবা-মায়ের দোয়া নিব এবং আশেপাশের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করব। এবারের ঈদটা পরিবার কেন্দ্রিক রাখতে চাই। পরিবারকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় হয় না। তাই এবার পরিবার, মা-বাবা, ভাই-বোন কে নিয়ে দূরে কোথাও যেতে চাই। এরই সাথে আমাদের চারপাশের গরিব দুঃখী মানুষদের পাশে থাকতে চাই, ঈদের সবটুকু আনন্দ সবার সাথে ভাগ করে নিতে চাই।

মহসীনুল করিম।তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।টি আই বি নিয়ন্ত্রিত সংগঠন “স্টামফোর্ড ইয়েস” এর উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।এবারের ঈদ কিভাবে কাটাবেন,তা জানতে কথা বলি এই শিক্ষকের সাথে।

এবারের ঈদ কিভাবে কাটাচ্ছেন?

মুহসীনুল করিম: সারাবছর শিক্ষকতা, ক্লাবিং সহ নানা কাজে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়, তাই ইদের ছুটির সময়টা বাড়িতে পরিবারের সাথেই কাটাতে চাই।

আপনি “স্টামফোর্ড ইয়েস” এর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।ক্লাব থেকে বছরজুড়ে কি কি পরিকল্পনা থাকে,সংক্ষেপে বলুন।

Post MIddle

মহসীনুল করীম : স্টামফোর্ড ইয়েস যুব সমাজের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কাজ করে এবং এর কার্যক্রমে সবসময়ই নতুন নতুন চমক থাকে। স্টামফোর্ড ইয়েস ক্লাব থেকে প্রতি বছরই ১২ টি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী পূর্বপরিকল্পিতপ্রোগ্রাম নিয়মিতই আয়োজন করা হয়। এগুলো ক্লাব মেম্বাররা নিজেরাই বছরের শুরুতে ঠিক করে রাখে। এছাড়া টিআইবির বিভিন্ন প্রোগ্রাম এ মেম্বাররা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সারা বছর ই অংশগ্রহণ করে থাকে।

ক্লাব থেকে এই ঈদে অসহায় বাচ্চাদের জন্য কি করছেন?

মহসীনুল করিম: সমাজে দুর্নীতি হ্রাস পেলে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে, এর সুবিধা দরিদ্র এবং বঞ্চিত মানুষই বেশি পাবে। সেইঅর্থে বলতে গেলে ক্লাবের সকল কার্যক্রমই পরোক্ষভাবে আসলে বঞ্চিত মানুষের জন্য। এছাড়া নিয়মিত প্রোগ্রাম এর বাইরে ক্লাবেরসদস্যরা এইবছর একটি বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শন করেছে এবং সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রায় ৭০ জন শিশুর সাথে ইফতার করেছে ও তাদের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরন করেছে। নিয়মিত প্রোগ্রাম এর বাইরে ক্লাব এর সদস্যরা ১/২ মাস অন্তর অন্তর যে বিশেষ কাজটি করে, তা হচ্ছে এ আই ডেস্ক। এ আই ডেস্ক এর দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছেলে মেয়েরা ক্যাম্প করে থাকে এবং মেডিক্যাল এর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ কে সহযোগিতা ও সচেতন করে। মূলত গরীব ও অশিক্ষিত মানুষেরাই এই ক্যাম্প থেকে বেশি উপকার পায়।

এবারের ঈদ কিভাবে কাটাবেন?

মহসীনুল করিম: আগে ঈদ ছিল শুধু নিজের আনন্দের জন্য। সেই আনন্দ এখন দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। অন্যসব ঈদের মতো পারিবারিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের খোঁজ খবর নিয়ে ই কেটে যাবে এবারের ঈদ।

“কেওড়া ফুলের ঝোল খেয়ে যে কোল ছেড়েছে মা’র,
তার কি থাকে ঘরবাড়ি না তার থাকে সংসার”।
মাঝেমাঝে আনমনে এই দুটি লাইন আওড়ানো যেন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে! কিন্তু ঈদ আসলে ভিন্ন কথা।কথা গুলি বলছিলেন মোকাররম হোসেন চৌধুরী। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের লেকচারার।তার সাথে ঈদ আনন্দ নিয়ে কথা বলে এডুকেশন ২৪.

এবারের ঈদ কোথায় কাটাবেন?

মোকাররম হোসেন: ঈদ মানে প্রতিবারের মত এবার ও নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ী। যেখানে আমার বেড়ে উঠা, আমার অস্তিত্ব, যে মায়ের কাছে আমি জন্মজন্মান্তরের ঋনী।
তাই বছরে দু একবার তার কাছে ছুটে না গেলে নিজেকে অভিশপ্ত মনে হয়। যাইহোক আমার ঈদ মানে নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ী, ছোটবেলা বন্ধুরা,আমার পরিচিত গ্রামের অলিগলি, গ্রামের মানুষের সহজসরল ভাষা! এরচেয়ে মধুর আর কি হতে পারে?

ঈদের দিন কি করেন সাধারনত?

মোকাররম হোসেন: সকাল সকাল উঠে গোসল করে,
পাঞ্জাবী পায়জমা পরে, আম্মার হাতের সেমাই খেয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া! এই যেন জীবন! জীবন এর চেয়ে সুন্দর হতে পারে কি? দুপুরের পর থেকে বন্ধুদের বাসায় অনেকগুলো দাওয়াত। সাথে কতশত অভিযোগ, অভিমান দিনশেষে সবাই এক। এটাইতো বন্ধুত্ব! সামাজিক কিছুকাজ , আত্মীয় স্বজনদের খোঁজখবর নেয়া এভাবেই কেটে যায় ঈদের ছুটি!

রোজার শুরু থেকেই ঈদ নিয়ে থাকে হাজার পরিকল্পনা!

ক্লাব থেকে এই ঈদে কি করছেন?

মোকাররম হোসেন:যেহেতু আমি আমার লেকচারার পজিশনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বনামধন্য ক্লাব “স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি সাহিত্য ফোরাম” এর কনভেনারের দায়িত্বে আছি। ক্লাবের কিছু পরিকল্পনা ও আমার ব্যাক্তিগত পরিকল্পনার সংমিশ্রনে আমরা প্রতিবার সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।যেমনটি এবার আমরা একসাথে ইফতার করেছি বিজয়নগরে অবস্থিত “ঢাকা বধির হাইস্কুল ” এর সাথে।ঈদের পর ক্লাবিং নিয়ে আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে রয়েছে।

মৃত্যুঞ্জয় আচার্যমৃত্যুঞ্জয় আচার্য

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট এর সিনিয়র লেকচারার।পাশাপাশি কাজ করছেন “স্টামফোর্ড ভলান্টিয়ার্স ক্লাব ” এর কনভেনর হয়ে।এবারের ঈদ এ ক্লাব এর পক্ষ থেকে কি করেছেন জানতে চাইলে , তিনি বলেন ” প্রায় শ খানেক অসহায় বাচ্চাদের আমাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে ইফতার করিয়েছি,এবং এই বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য আমরা ব্যাবস্থা গ্রহন করেছি,এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই শিক্ষক।

শিক্ষকদের ঈদের স্মৃতিগুলো আর শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার মধ্য দিয়ে আবার জানান দিচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।অপেক্ষায় গোটা মুসলিম উম্মাহ। ঈদময় হোক সবার জীবন প্রতিদিন এ প্রত্যাশা সকলের জন্য।

পছন্দের আরো পোস্ট