লন্ডন শিল্পকলা একাডেমিতে ফোজিত শেখ বাবুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী

চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে চীন-রাশিয়া ও ভারতের স্বার্থ জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। গতকাল (৮ জুন শুক্রবার) লন্ডন শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশী ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর “প্লিজ হেলপ ফর রোহিঙ্গা” স্লোগানে হু আর দ্যা নিউ ‘ভোট পিপল?’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী পূর্বক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথির বক্তেব্যে আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, আসলেই এই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এখন আর মানুষ হার্ট হয় না! কারণ সেই ১৯৭৮ সাল থেকে একের পর এক রোহিঙ্গাদের ওপর চলে আসছে বর্বর নির্যাতন। মানুষ এটা দেখতে দেখতে অব্যস্ত হয়ে গেছে। আজকে ফোজিত শেখ বাবু তার ছবির মাধ্যমে এমন কিছু তুলে ধরে চেষ্টা করেছেন যা আসলেই মানুষকে হার্ট করবে। এই রোহিঙ্গা সমস্যা বিশে^র মোড়ল দেশগুলো রাশিয়া, আমেরিকা, চীন ও ইন্ডিয়া চাইলেই সমাধাণ করতে পারে। কিন্তু কেনো করছে না জানেন? মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে সেখানে (আরাকান রাজ্যে) ব্যবসা করতে চাচ্ছে তারা। এটার সাথে তাদের স্বার্থ জড়িত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অন্যতম। এর আগেও পৃথিবীর অনেক দেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন হয়েছে কিন্তু আবার সেগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারও হয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় এই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক নির্যাতন হলেও এর কোনো বিচার হয়নি! এমনকি বিচারের কোনো উদ্যোগও আমরা দেখতে পাাচ্ছি না।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির নাম বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হলেই সমস্যার সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। মানতবতার তাগিদে বার বার বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে এদের দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশের মত দেশের জন্য অসম্ভব বললেই চলে। তাই আমার আহ্বান থাকবে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো এগিয়ে আসুক রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধাণে। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক। মুক্তি পাক রোহিঙ্গারা, মুক্তি পাক বাংলাদেশ। জয় হোক মানবতার।

Post MIddle

প্রধান আলোচক তাসলিম শাকুর বলেন, আসলেই রোহিঙ্গারা এমন এক জাতি যাদের কোনো অভিভাবক নেই! যাদের অভিভাবক নেই তাদের কোনো ঠাঁইও নেই। তা না হলে আপনারা দেখুন বার বার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়রে ওপর নির্যাতন হলেও এই সমস্যা সমাধাণে কেউই শক্তভাবে এগিয়ে আসছে না। যখনই রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হচ্ছে তখন জাতিসংঘ, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশগুলো বিবৃতি এবং প্রতিবাদের মাধ্যমে তাদের দায় সারছে। কিন্তু এটির স্থায়ী সমাধাণের কথা মুখে বললেও কাজের বেলায় কেউ নেই। এই জাতিগোষ্ঠীকে বাঁচাতে এখনই বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসতে হবে। জেতাতে হবে মানবতাকে। দমন করতে হবে মিয়ানমারকে।

ডা. রহমান জিলানীর সভাপতিত্বে ও ডা. শম্পা দেওয়ান পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়জুল ইসলামসহ স্থানীয় ব্রিটেনের নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

আলোচনা সভা শেষে ৪দিনব্যাপী প্রদর্শনীর ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন আবদুল গাফফার চৌধুরীসহ অতিথিরা। প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত। পরে তারা প্রদর্শনীর ঘুরে দেখেন। পরিশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যায় ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মূল উদ্দ্যেশ্য মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে বর্বরোচিত নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যা ও উচ্ছেদ অভিযানে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা। একই দাবিতে যুক্তরাজ্যের এজ হিল ইউনিভার্সিটিতেও চলছে ফোজিত শেখ বাবুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যেটা চলবে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত।

পছন্দের আরো পোস্ট