দেশীয় ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজননে নোবিপ্রবি গবেষক দলের সাফল্য

দেশীয় ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজননে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক এবং গবেষক ড. শ্যামল কুমার পাল ও তাঁর অধীনে অধ্যয়নরত মাজহারুল ইসলাম রাজু, মো: বোরহান উদ্দিন আহমেদ সিয়াম,তৌফিক হাসান, মামুনুর রশিদ, মিঠুন দেবনাথ, নাজমুল হাসান, সৃজন সরকার, কাজী ফরিদুল হাসান ও প্রনব ভক্ত সাফল্য পেয়েছেন ।

বাংলাদেশ বিশাল বৈচিত্রের প্রাকৃতিক জলজ সম্পদের আধার । দেশের অভ্যন্তরীন জলাশয়ে রয়েছে অসংখ্য চোখ জুড়ানো ছোট মাছের সমাহার যারা স্বাদে ও পুষ্টিতে অনন্য । বউরাণী (পুতুল, রাণী,দাড়ি মাছ) ও গুতুম বেতরঙ্গী/পুইয়া/বুইচ্চা) যাদের মধ্যে অন্যতম । এই মাছ গুলোর প্রজনন ও আবাসস্থল উম্মুক্ত প্রাকৃতিক জলাশয় যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বর্তমানে প্রায় ধ্বংসের মুখে । ফলে মাছ গুলো আজ তাদের প্রাচুর্যতা হারিয়ে বিপন্ন প্রায় প্রজাতি । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সমস্যা উত্তরণ ও দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদনের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রমের উপর জোর দিয়েছেন । তারই ধারাবাহিকতায় এনএটিপি-২ প্রকল্পের অর্থায়নে নোবিপ্রবির শিক্ষক ও গবেষক এবং তাঁর দল গত বছরের আগস্ট মাস হতে বউরাণী ও গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্যে গবেষণা প্রকল্পে হাত দেন ।

এজন্য তারা কুমিল্লা জেলার নাঙলকোট উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সামছুদ্দিন কালুর মালিকাধীন বিসমিল্লাহ মৎস্যবীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামারে কার্যক্রম শুরু করেন । বৃহত্তর নোয়াখালী ,ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় ও হাওর হতে ব্রুডফিশ ( মা ও বাবা মাছ) সংগ্রহ করে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচর্যার মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজননের জন্য প্রস্তুত করা হয় । পূর্ণ প্রস্ততি শেষে গত ২৮ এপ্রিল ব্রুডফিশ গুলোকে বিভিন্ন উদ্দীপক হরমোন প্রয়োগ করা হয় । ফলে পরদিন গুতুমমাছের কৃত্রিম প্রজনন সফল ভাবে সম্পন্ন হয় । বর্তমানে গবেষণা দলটি গুতুমমাছের রেণুপোনার চাষ ও লালন-পালন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে । এই গবেষণা প্রকল্পে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন নোবিপ্রবির মৎস ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব ভক্ত সুপ্রতিম সরকার এবং বিসমিল্লাহ মৎসবীজের টেকনিশিয়ান জনাব উত্তম বসু । এই গবেষণা দল আশা করছেন খুব শীঘ্রই বউরাণী মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও রেণুপোনা লালন-পালন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফল হবেন ।

Dr Shamol Kumar Pul Sirগবেষণা কার্যক্রমের ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. শ্যামল কুমার পাল বলেন, নোবিপ্রবির মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগ দেশের মৎস্য গবেষণা সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় তাঁর দল বিভিন্ন দেশীয় ছোট মাছ বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গবেষণা প্রকল্প শুরু করেন এবং সফলতা অর্জন করেন । তিনি এই সাফল্যে থেমে না থেকে ভবিষ্যতেও তার গবেষণা কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন। সফল গবেষণা ও মানুষের সচেতনতাই দেশীয় ছোট মাছকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে বলে তিনি জানান ।

এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান বলেন, ”আমরা আমাদের শিক্ষকদের আবিষ্কারের সাফল্যে আনন্দিত হই এবং গবেষণার ফলাফল দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই যাতে করে জাতি এর সুফল ভোগ করতে পারে । শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য আমরা বাজেটে বরাদ্দ সবসময়ই বেশী রাখার চেষ্টা করি” ।

পছন্দের আরো পোস্ট