ইসরায়েলের বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন

মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের বর্বর হত্যাযজ্ঞ ও আগ্রসনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও মূকাভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধরণ শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ এ মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।

মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা অংশ নিয়ে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ভূমিকার জন্য লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বেলা ১২টার দিকে মূকাভিনেতা মীর লোকমানের নেতৃত্বে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন গাজা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন। মূকাভিনয়ের মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের ‘হুইল চেয়ার মানব’ খ্যাত প্রতিবাদী যুবক ফাদী আবু সালেহ সহ মুক্তিকামী মানুষকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেন।

আয়োজনের আহ্বায়ক জনপ্রিয় মূকাভিনেতা মীর লোকমান বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র মুসলিম হিসেবে নয়, এখানে এই রাজু ভাস্কর্যে এসে সম্মিলিত হয়েছি মানুষ হিসেবে, অন্যায়ের প্রতিবাদে। সমগ্র মানবিক বিশ্বের উচিত এই মিছিলে শামিল হয়ে প্রতিবাদ জানানোর।’

ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখন বসে, বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি কুরান-হাদিস চষে। বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ঠিক এ কারণেই মার খাচ্ছে। আজ তারা শতধা বিভক্ত। আজকে সৌদি আরবের ভূমিকা ফিলিস্তিনি শিশুর কান্নার কারণ।’

Post MIddle

তিনি বলেন, ‘এই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আমরা নাসিরনগর, রামুসহ সাওতাল নিগৃহের নিন্দা জানিয়েছি। আজ আমরা প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা জানাতে এসেছি। ওআইসির উচিত ইসরায়েলি পণ্যের তালিকা প্রকাশ করা। কারণ একজন মানুষ যখন ইসরায়েলি পণ্য হাতে নেয় তখন সে যেন কার্যত হুইল চেয়ারে বসে থাকা মুক্তিকামী ওই যুবকের বুকে বুলেট ছুড়লো। তাই সময় এসেছে তাদের পণ্য বর্জন করার।’

হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, গুলি নাই, বোমা নাই, নাই কোন বোমারু বিমান তাই বলে থেমে নেই মাজলুম আল-আকসাবাসী। প্রতিবাদী যুবক ফাদী আবু সালেহ নিজের দু-পা হারিয়েছেন আগেই কিন্তু অদম্য ইচ্ছা, সাহস আর প্রত্যয় তাকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে থামিয়ে রাখতে পারেনি। আর তাইতো জীবন দিয়ে সত্য আর স্বাধীনতার জয়গান গেয়ে গেলেন। আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং তার হত্যাকারী ইসরায়েলি সেনাদের ধিক্কার জানাচ্ছি।

মানবাধিকার সংগঠক সৈয়দ শিমুল পারভেজ বলেন, ‘আমাদের সরকারের উচিত, অনতিবিলম্বে সৌদি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করা ও তাদেরকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানানো। যেন ফিলিস্তিনিরা এ ধরনের বর্বর হামলা শিকার আর কখনো না হয়। এ হামলার দায় আমেরিকা ও দালালরাষ্ট্র সৌদি আরব কখনোই এড়াতে পারেনা।’

এ ছাড়াও উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হাফিজ আল মুনাদি, তোফায়েল আহমদ, তমিজ আহমদ, আব্দুল্লাহ আল রাশেদ, আহমদ বেলায়েত, মির শামিল, আওয়াল, ইসমাইল হোসেন, ইয়াকুব আলী প্রমুখ। শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মুক্তির পক্ষে ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্লোগানে স্লোগানে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ভূমিতে গনহত্যা চালিয়ে এবং ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের এথনিং ক্লিংজিং করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের এনে পুনর্বাসন করে অপরাষ্ট্র ইজরাইলের জন্ম দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলস্তিনের মানুষের অভ্যুত্থান হয়। এই অভ্যুত্থান “নাকবা” নামে পরিচিত। ১৫ মে ছিল নাকবার ৭০ বছর পূর্তি। নাকবা স্মরণে মিছিলে সন্ত্রাসী ইজরাইলি সেনা বাহীনির হামলায় শহীদ হন ৬২, আহত হয়েছেন ৩০০০ মানুষ। গত ৭০ বছর ধরে ইজরাইল এভাবে ফিলিস্তিনের নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করছে।

পছন্দের আরো পোস্ট