আমাদের গল্প

আমরা ছিলাম তিনজন। আমি, শুভ্র আর গল্প। তবে সবসময় তিনজন না। কখনো কখনো সাত, আটজন আবার কখনোবা দশ বারোজন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একসাথে থাকা, আড্ডা দেয়া, ঘুরতে যাওয়া এমনকি একসাথে ঘুমানো পর্যন্ত।

আমাদের মধ্যে গল্প ছিলো অদ্ভুত চরিত্রের। একজন হাস্যমুখী মানুষ। কখন যে মন খারাপ থাকে আর কখন ভালো থাকে তা আমরা কখনই বুঝতে পারিনি। তবে অনেকটা ইনসমনিয়ার মতো ছিলো গল্প। রাতে ঘুমায় না। আর শুভ্রর ছিলো অসাধারণ ক্ষমতা। ঠিক ক্ষমতা না, বলা যায়, মেনেজ করার ক্ষমতা। একসাথে চার- পাঁচটা গার্লফ্রেন্ড চালানোর পরও তার দাবি ছিলো, সে সিঙ্গেল। এমনকি একই রুমে দুই গার্লফ্রেন্ড চালানোর রেকর্ডও ছিলো তার।

আপাতত সম্মান শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ। তাই রোজই কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি। আজও যাবো। বেশ পুরানো রুটিন। আমার কাছে খানিকটা একঘেয়ে। একেকদিন একেকজনের বায়না! পরীক্ষা শেষ। চলো পদ্মার পাড় থেকে ঘুরে আসি। আবার ক্লাস হবেনা চলো আজ ঘুরে আসি। আনন্দভ্রমণ যখন রুটিনে পড়ে যায় তখন একঘেয়ে হয়ে যায়। আনন্দেরও তো ক্লান্তি আছে নাকি? তবে সব বিষয়েই মৃদু রকমের শাসন করিবার চেষ্টা করিত আমাদেরকে গল্প। অনেকটা স্পষ্টবাদী স্বভাবেরও ছিলো। তবে মাঝে মাঝে কিছু বিষয়ে খুব আগ্রহ থাকতো ওর। রাতে চা খেতে যাওয়া, বৃষ্টিতে ভেজা, জোছনা রাতে পুকুর পাড়ে বসে আড্ডা দেয়া, মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে গান গাওয়া। রোজকার রুটিনে

Post MIddle

কোন কারণে তিনজনের একজন না থাকলে দিনটা পূর্ণ হতো না, অসম্পূর্ণ থেকে যেতো। কখনো কখনো অজ্ঞাত বহিঃপৃথিবীর স্নেহহীন স্বাধীনতার জন্য তার মন অশান্ত হয়ে যেতো গল্প। একবার প্রেমে পড়েছিলো ও। মেয়েটি ছিলো অস্বাভাবিক রূপবতী, বর্ণনা দেয়ার সাধ্য নেই আমার। তবে মেয়েটি একটি দুর্ভেদ্য প্রহেলিকা। প্রচুর অশ্রুজলধারায় অতি শীঘ্রই নিঃশেষে ধৌত করিয়া ফেলিয়াছিল আমার বন্ধু গল্পকে। আর গল্প অতৃপ্ত আনন্দে বার বার জলে ঝাপ দিয়ে নদীকে যেনো আলিঙ্গণ করার চেষ্টায় মগ্ন থাকতো।

সে সর্বদাই নিশ্চিন্ত উদাসীন, অথচ সর্বদাই ক্রিয়াসক্ত থাকতো। ক্রিয়াসক্ত থাকতো ফেসবুকে আর নিশ্চিন্ত থাকতো পরীক্ষা নিয়ে। কোন মাথাব্যাথা থাকতো না পরীক্ষা নিয়ে এমন ছেলে আমার জীবনে এই একটিই দেখেছি। অথচ ফলাফল যে কখনো খারাপ করেছে এমন নয়। বরং বেশ ভালোই করতো বরাবর। আজ আমাদের অনার্সের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। গল্প ‘ফার্স্ট ক্লাস থার্ড’ হয়েছে। শুভ্র পঞ্চম স্থানে রয়েছে আর দুর্ভাগ্যক্রমে আমি প্রথম হয়ে গেছি। সবাই সবার ফলাফল জানতে পেরেছে। শুধু গল্পই তার ফলাফল জানতে পারলো না। রেজাল্ট প্রকাশের এক সপ্তাহ আগেই হঠাৎ উধাও হয়ে গেলো সে।

আজও জোছনা রাত। বারোটা, সবাই মিলে বিনোদপুরে রেলিং এ বসে চাঁদের আলোয় স্নান করতে করতে চা খাচ্ছি। শুধু গল্প নেই আজ। আর আমাদেরও ‘গল্প’ নেই। স্নেহ- প্রেম- বন্ধুত্বের ষড়যন্ত্রবন্ধন তাকে চারিদিক ইতে সম্পূর্ণরুপে ঘিরে ধরবার পূবেই সমস্ত হৃদয়খানি চুরি করে আসক্তিহীন অন্ধকার পৃথিবীর নিকট যাত্রা করেছে গল্প।

পছন্দের আরো পোস্ট