সৌন্দর্যের ‘প্রতীমা’ রাবির প্যারিস রোড

নির্মল বাতাস। পিচঢালা পরিষ্কার রাস্তা। সুবিশাল গগণশিরীষ গাছ রাস্তার দুধারে। সড়কের দুধারে বেড়ে উঠা গাছগুলো যেন একে অপরকে আলিঙ্গন করতে মরিয়া। গাছগুলোকে রৌদ্রস্মান করাতে সুর্য্যিমামার কত প্রচেষ্টা। সূর্যের আলো কখনো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রাস্তায় নেমে আসছে, কখনো বা পাতায় আটকে যাচ্ছে। এমনই আলো ছায়ার খেলায় সৌন্দর্যের প্রতিমা হয়ে জেগে আছে একটি রাস্তা। বলছিলাম সৌন্দর্যম-িত প্যারিস রোডের কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটা প্রাথমিক চিত্র ফুটে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে কিছুটা এগিয়ে বামদিকে চোখে পড়ে সুবিস্তৃত একটি সড়ক। সড়কের দুধারে গগণশিরীষ গাছগুলো দেখলেই যেন মন ভরে যায়। মনে হয় গাছগুলো যেনো রাস্তাটিকে পরম আদরে মুড়িয়ে রেখেছে। হাজারো শিক্ষার্থীর বয়ে বেড়ানো এ রাস্তাটির নামকরণ নিয়ে রয়েছে এক ইতিহাস।

Post MIddle

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের কাজলা রোড থেকে শের-ই-বাংলা হল পর্যন্ত এই গগণশিরীষ গাছ লাগানো হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম শামসুল হক ফিলিপাইন থেকে কিছু গাছ নিয়ে আসেন। তিনি এইগাছগুলো রোপনের দায়িত্ব দেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যানকে। তার হাত ধরেই লাগানো হয় গাছগুলো। রাস্তাটির নাম প্যারিস রোড কেনো? এমন প্রশ্নের উত্তরে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাদিরউজ্জামানের নেতৃত্বে গাছগুলো লাগানো হয় যা শীঘ্রই ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দনে পরিণত হয়। রাস্তাটির সঙ্গে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তাগুলোর অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় বলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এটিকে প্যারিস রোড বলতে থাকেন। সেই থেকে রাস্তাটি প্যারিস রোড নামে পরিচিত হয়ে উঠে।

ধারণা করা হয় দেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো প্রতিষ্ঠানে এরকম সুউচ্চ গাছের বিন্যাস নেই। কাজলা গেট থেকে শুরু করে শের-ই-বাংলা হল পর্যন্ত এরকম সৌন্দর্যম-িত রাস্তা সহজেই যে কারো মন কেড়ে নেয়। ক্যাম্পাসের অতীত বর্তমানের শিক্ষার্থী তো বটেই বাইরের দর্শনার্থীদের কাছ্ওে এটি একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর বিভিন্ন স্কুল কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে শিক্ষা সফরে আসেন। তারা সবাই প্যারিসের সৌন্দর্যে বিমোহিত। এমনই এক বসন্তের বিকেলে দেখা হয়ে গেল প্যারিস রোডে ঘুরতে আসা ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এ আর আজাদের সঙ্গে। তার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যারিস রোড সত্যিই আমাকে মোহিত করে। প্যারিস রোডের সৌন্দর্য আমার ভালোলাগার প্রতিটি শিরায় আন্দোলিত করে। এ রোডে আমি আলাদা জগতের স্বাদ পাই। তাই আমার প্রিয় কিছু সময় আমি এখানে ব্যয় করি।

কথা হয় ঘুরতে আসা আরেক সৌন্দর্য পিপাসু গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সঙ্গীতা পালের সঙ্গে। প্যারিস রোড কেনো ভালো লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সৌন্দর্যে ভরপুর প্যারিস রোড তার শান্ত সিগ্ধ পরিবেশের জন্যই আমার বেশি ভালো লাগে। প্যারিস রোড আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। কল্পনায় ফুঁটে উঠে ফ্রান্সের কোনো এক রাস্তা।

পছন্দের আরো পোস্ট