গল্প কথায় পানাম নগর

উম্মে আরীশা গাজী

আমাদের আজকের সংক্ষিপ্ত ভ্রমনে আমরা বের হয়েছি পানাম নগরের দিকে। ভ্রমনের শুরুতে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক; সোনারগাঁয়ের পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা এবং পূর্বে মেঘনা নদী পথ থাকায়, আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে অর্থাৎ ১৫ শতকে তৎকালিন বাংলার সুলতান ঈসা খাঁ রাজধানি প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও বড় নগর, খাস নগর এবং পানাম নগর নিয়ে গড়েছিল সোনারগাঁ, কিন্তু পানাম নগর ছিল অন্যতম। শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী পথে মালবাহী পাল তোলা নৌকা ভিড়তো। এখান থেকে রপ্তানি হতো মসলিন কাপড় এবং আসতো বিলাতী থান কাপড়। যদিও কিছু কাল পরেই সোনারগাঁকে ইংরেজরা বানিজ্যকেন্দ্র বানিয়ে শুরু করে নীল বানিজ্য। কালের গর্ভে হারিয়ে যায় মসলিন কাপড়, মসলিন বাজার।

সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ নগরী ছিল।এতক্ষনে আমরা এসে গেছি পানাম নগরে। এক রাস্তার দু’পাশে ৫২ টি বাড়ির গুরুত্বপুর্ন ইতিহাস পাওয়া গেলেও এখন ৪০ টি বাড়ির অস্তিত্ব আছে। প্রবেশ করতেই আমার মেয়ের প্রশ্ন-আম্মি, অনেক পুরাতন বাড়ি! হ্যাঁ, অনেক পুরাতন; এ কারনেই ওয়াল্ড মনুমেন্ট ফান্ড এ নগরকে ধ্বংস প্রায় ১০০ নগরীর অন্তর্ভুক্ত করেছে।আমি উত্তর দিয়ে স্টেফেন হকিং-এর মত ভাবছি, সময়, কাল, ইতিহাস। নির্মান শৈলীতে স্পষ্ট- মোঘল ও গ্রীস নিদর্শন। ঢালাই লোহা দিয়ে কারুকাজ করা বাউন্ডারি, জানলায় লোহার গ্রীল, মেঝেতে লাল, সাদা ও কালো মোজাইকের কারুকাজ। আরীশার পুরায় প্রশ্ন-আম্মি, এটা কি ডুপ্লেক্স? বলতে পার; হতে পারে তারা ডুপ্লেক্সই বানিয়েছিল অথবা এমনও হতে পারে, সময়ে ভেঙ্গে গেছে।

Post MIddle

এ নগরীতে ঘুরতে আসলে দেখতে পাবেন, আবাসিক ভবন ছাড়াও চিত্রশালা, দরবার কক্ষ, নাচঘর, পান্থশালা, গোসলখানা, খাজাঞ্চিখানা, বিচারালয় ও কুয়া। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই বিশুদ্ধ পানির কুয়া ছিল।আম্মি, এটা কি খাল?হঠাৎ প্রশ্ন শুনে তাকালাম।হ্যাঁ, এটা তখনই তারা তৈরী করেছে। বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য অথবা পানির অভাব যেনো না হয়।তারা অনেক পরিকল্পনা করে কাজ করতো?অবশ্যই, তাইতো এতদিনেও টিকে আছে।

আম্মি, আমরাতো নগরীর শেষে চলে এসেছি; আর কিছু দেখার নেই এখানে?আছে, নির্মম ইতিহাসের সাক্ষি নীলকুঠির, পঞ্চপীরের মাজার, পানাম পুল, ফতেহ শাহের মাজার, গিয়াস উদ্দিনের মাজার সহ সোনারগাঁ জাদুঘর, যেখানে আছে ইতিহাসের অনেক নিদর্শন।যেভাবে যাবেন- গুলিস্তান থেকে সরাসরি সোনারগাঁয়ের গাড়ি আছে, অথবা মোরগা পাড়া নেমে রিক্সা বা অটো রিক্সায় পানাম নগর যাওয়া যায়। যাওয়ার সময় ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না, এবং খাবার বাসা থেকে নিয়ে যাওয়াই ভাল।

পছন্দের আরো পোস্ট