রাশিয়ায় বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষা

হামিদুল হক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া, হতাশাগ্রস্ত, উচ্চশিক্ষা নিয়ে জীবনমরণ সন্ধিক্ষণে কিংবা স্নাতক শেষ করে বিদেশে স্নাতকোত্তর করার ইচ্ছা। কিন্তু মধ্যবিত্তের জীবনের আশা-দুরাশার খেলায় হয়ে ওঠে না। সাধ আছে তো সাধ্য নেই। আশার দুয়ারে আমি আনিব আজ রাঙা প্রভাত!

মনে পড়ে সেই বিজ্ঞাপন চিত্রের কথা সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ। হ্যাঁ আপনার মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যেই রাশিয়ার উচ্চশিক্ষার সবটুকু সুখ এনে দিতে পারে। রাশিয়ান সরকারের বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিতভাবে ডাকছে নবদিগন্তের উদ্বেলিত সূর্যের মতো।

Post MIddle

বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও রাশিয়ান সরকার মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের অনার্স, স্পেশালিস্ট ও মাস্টার্স কোর্সে বৃত্তি প্রদান করবে। লক্ষ্য যদি থাকে উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞান অর্জন করে একজন ভালো মানুষ হওয়া এবং একই সঙ্গে সফল ক্যারিয়ার গড়া, তবে রাশিয়ান সরকারের শিক্ষাবৃত্তি হয়ে উঠবে সোনায়-সোহাগা। সর্বোপরি বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কোটি টাকার সুবর্ণ সুযোগ।

ব্যাচেলর বা স্পেশালিস্ট কোর্সের বৃত্তির জন্য আবেদন প্রার্থীকে অবশ্যই SSC ও HSC বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম প্রথম শ্রেণি পেতে হবে। মাস্টার্স কোর্সের জন্য SSC, HSC বা সমমানের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি ও অনার্স বা সমমানে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ থাকা অত্যাবশ্যক। অতঃপর সর্বোচ্চ GPA ও CGPA-এর ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মৌখিক ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত নির্বাচিত করা হয়। তারপর ঢাকার রাশিয়ান দূতাবাস চূড়ান্তভাবে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে ও সময়সাপেক্ষে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার ধরন পরিবর্তনও হতে পারে।

নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে হয়। প্রথমে শিক্ষার্থীদের সকল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট সত্যায়িত করতে হয় যথাক্রমে শিক্ষাবোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। পরবর্তীতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সকল কাগজপত্র রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে রাশিয়ান দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হয়। একই সঙ্গে পাসপোর্ট ও জন্মসনদের ইংরেজি কপিও রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ ও সত্যায়িত করতে হবে। শেষ ধাপে সমস্ত কাগজের ন্যূনতম চার কপি নোটারি করতে হবে। এ ছাড়া মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন যাতে আপনার এইচআইভি (HIV) ও অন্যান্য জটিল কিছু রোগব্যাধি নেই প্রমাণের জন্য। এবার আপনার সমস্ত কাগজপত্র মোটামুটি তৈরি।

স্কলারশিপ শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগে প্রদান করে। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় বই বিনা মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া যায় ও পরীক্ষার ফি প্রদান করতে হয় না। কিন্তু জীবনযাপন, হেলথ-ইনস্যুরেন্স ও অন্যান্য খরচ ছাত্রছাত্রীকেই বহন করতে হয়। জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলক অনেক কম। বাংলাদেশি টাকায় আট-দশ হাজার টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করা যায়। বাকিটুকু নিজের ওপর।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নামমাত্র মূল্যে আবাসন প্রদান করা হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নত ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আবাস প্রদান করে থাকে। বলে রাখা দরকার, এখানে একজন মেয়ে শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে অধিক নিরাপত্তা, অগ্রাধিকার ও সম্মান পেয়ে থাকেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাত খরচ বাবদ কিছু বৃত্তি প্রদান করা হয়। তাতে টুকিটাকি খরচ চলে যায়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাশিয়াতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে। যা ইউরোপ-আমেরিকায় সম্ভব। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ঐতিহ্য ও রীতি অনুসারে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রথমে এক বছর রাশিয়ান ভাষায় পড়ার জন্য প্রস্তুতিমূলক কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় রাশিয়ান ভাষা, রাশিয়ান ভাষায় পদার্থ, গণিত, রসায়ন ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। প্রস্তুতি কোর্স সম্পন্ন হলেই মূল কোর্সে শিক্ষার্থীদের রাশিয়ান ভাষায় পাঠ্যক্রম শুরু হয়।

তাছাড়া নিজ খরচেও রাশিয়ান ও ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা করা যায় । এ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী কে সরসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। কিন্তু উপরের নিয়মে নয়, উপরের নিয়ম শুধুমাত্র্য স্কলারশিপ এর জন্য। রাশিয়া থেকে ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

নতুন একটি ভাষা ও সংস্কৃতিতে নিজের জ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত করার জন্য সুযোগ আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মহাবিশ্বের মহাযজ্ঞের নানা নিত্য-নতুন অনেক কিছু শেখার ও দেখার। শিক্ষা, ভ্রমণ ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন। তা ছাড়া আধুনিক যোগ্যতা সম্পন্ন ক্যারিয়ারের গড়তে ইংরেজির পাশাপাশি অন্য আরেকটি ভাষা জানার গুরুত্ব বর্ণনাতীত।

সম্পূর্ণ তদারকি, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা, তথ্য ও সার্বিক সহযোগিতা এবং ভিসার অন্যান্য সকল কার্য সম্পাদনের জন্য ঢাকায় রাশিয়ান বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। কেন্দ্রটি রোড নম্বর ১০ (ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন সড়ক) ধানমন্ডিতে অবস্থিত। রাশিয়ান সরকারের বিজ্ঞান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে।তাই এখনই সময় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার।

হামিদুল হক ।শিক্ষার্থী, জাতীয় পরমাণু গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া।

পছন্দের আরো পোস্ট