প্রেরণায় উজ্জ্বীবিত ‘স্ফুলিঙ্গ’

কোন এক আগুনের শিখা হতে নিরন্তর আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছে। আর সেই আগুনের ফুলকি চারদিকের সমস্ত অন্ধকারকে ধুয়ে মুছে আলোকিত করছে। যে আলো কখনো শেষ হবার নয়। জ¦লছে এবং জ¦লবেই অনন্তকাল।

ড.শামসুজ্জোহাকে নিয়ে নির্মিত স্মৃতিস্ত স্ফুলিঙ্গ ওপরের অর্থগুলোই বহন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজোহা হলের মুল ফটকের পাশে পুকুর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই ভাস্কর্যটি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক সভাপতি কনক কুমার পাঠক এই ভাস্কর্যটির স্থপতি। ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।

মেধা মনন আর ভালোবাসা দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে দেয়া মানুষের সংখ্যা হাতে গুণা। তাদেরই মধ্যে অন্যতম ড. শামসুজ্জোহা। যিনি ১৯৬৯ এর গণঅভুত্থানের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। “কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে যেন গুলি লাগে”-এই কথাগুলো বলেছিলেন তৎকালীন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা শামসুজ্জোহা।

১৯৬৯ এর ১৮ ফ্রেব্রুয়ারী পুলিশের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে পড়ে ছাত্ররা। তারা পুলিশের একটি জিপে আগুন লাগিয়ে দেয়। ক্ষিপ্ত পুলিশ সদস্যরা ছাত্রদের উপর গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তখনি এগিয়ে যান প্রক্টর শামসুজ্জোহা।

তিনি ছাত্রদের গুলি না করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু শোনেননি পাক সরকারের পুলিশ বাহিনী। এক পর্যায়ে শামসুজ্জোহাকেই গুলি করে পুলিশ। আর এভাবেই নিজের জীবন দিয়ে ছাত্রদের রক্ষা করেন মহান শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহমেদ ফরিদ বলেন, ‘জোহা স্যারের মহান আত্মত্যাগ ও ছাত্রদেও প্রতি তার যে ভালোবাসা ছিল তা কখনো ভুলবার নয়। আর স্ফুলিঙ্গ তার স্বাক্ষরকেই বহন করছে।

Post MIddle

তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা দিবে আর জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে সবসময় স্যারের আত্মত্যাগ ও ভালোভাসার কথা স্মরণ করে নিজেকে গর্বিত মনে হয়।’

‘শামসুজ্জোহা স্যার সম্পর্কে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে পড়েছি। তখন থেকেই স্যারের প্রতি আলাদা ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে। একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসতে পারে,এটা শুধু শামসুজ্জোহা স্যারই স্বাক্ষর হিসেবে রেখে গেছেন।

স্যারের হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় আমাকে। সবসময় স্যারের ভালোবাসা আর আত্মত্যাগ আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তিনি তার জীবন দিয়ে আমাদের প্রতি যে অগাধ ভালোবাসা প্রমাণ করে গেছেন সে ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারব না।

স্ফুলিঙ্গ তার স্মৃতিকেই ধরে রাখবে। তবে সরকারের প্রতি দাবী একটিই ১৮ই ফেব্রুয়ারিকে যেন শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাহলেই আমরা আমাদের এই মহান শিক্ষককে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারবো বলে মনে হয়।’ এমনটিই মনে করেন শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইয়াজিম পলাশ।

ড.শামসুজ্জোহার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য কখনো উদাসীনতা দেখায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে তার কবরকে ঘিরে যে চত্তর রয়েছে তার নামকরণ করা হয়েছে জোহা চত্তর।

এছাড়াও প্রত্যেক বছর ১৮ ফেব্রুয়ারিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য অনেক দিন থেকে দাবী জানিয়ে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সহিদুল হাবীব।গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পছন্দের আরো পোস্ট