‘ঘাড় কাত’ থেকে ‘মাথা নত’ প্রজন্ম

অাশির দশকের কথা। রাজধানীতে এলো মিনি বাস। যাত্রাপথ গুলিস্তান টু মিরপুর এবং গুলিস্তান টু নারায়ণগঞ্জ। মিনি বাসের ছাদ ছিল বেশ নিচু। সিটে যারা বসতেন তারা ছিলেন সৌভাগ্যবান। দাঁড়িয়ে থাকা দীর্ঘকায় এবং মধ্যম উচ্চতার যাত্রীদের মাথা ছুঁয়ে যেত বাসের ছাদে। কোন উপায়-গত্যন্তর না দেখে যাত্রীদের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।

চারদিক থেকে রব উঠল এই বাস চলবে না। এই বাস জাতির মাথা নিচু করে দিচ্ছে। বদলাও বাস। জাতিকে অার মাথা নত করতে দেওয়া হবে না। অনেক দেনদরবারের পরে পরবর্তীকালে রাস্তায় নামে নুতন মিনি বাস (মডিফায়েড)।

সবাই ভাবল, যাক অাপদ দূর হয়েছে। অার মাথা নত করে থাকতে হবে না। মাথা উঁচু করেই চলা যাবে।

একুশ শতকের কথা। হাতে হাতে ফিরছে মোবাইলফোন। স্মার্টফোন অাসার অাগে সবার হাতে হাতে ফিরত ফিচার অথবা বার ফোন। মোবাইল অপারেটরগুলোর বিভিন্ন টাইপের প্যাকেজের কল্যাণে কথা বলা যাচ্ছিল বেশ কম খরচে।

দীর্ঘক্ষণ হাত কানের কাছে নিয়ে মোবাইল ধরে কথা বলতে গেলে হাত ব্যথা করত। ফলে তরুণদের মোবাইল জায়গা করে নেয় কাঁধে।

কাঁধ দিয়ে কানে চেপে মোবাইল কথা বলা ‌ দেখে নুতন করে বলাবলি শুরু হলো ‘এই প্রজন্ম হইল ঘাড় কাইত‘ প্রজন্ম। এদের ঘাড় অার সোজা হইব না।‘ না, তরুণদের ঘাড় ঠিকই সোজা হয়েছে। এজন্য কোনও থেরাপি বা ওষুধের প্রয়োজন হয়নি। তবে একটা জিনিস ঠিকই লেগেছে তা সারাতে। অার তা হলো স্মার্টফোন!

তবে স্মার্টফোন, ট্যাব ‘ঘাড় কাত‘ প্রজন্মর ঘাড় কাত রোগ সারাতে পারলেও অারেকটি মারাত্মক বদ অভ্যাস তাদের তৈরি করে দিয়েছে। এবার তরুণ প্রজন্মর ‘মাথা নত‘ রোগে ধরেছে।

Post MIddle

দেশ-বিদেশ সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে এই রোগ। সবাই স্মার্টফোনে বা ট্যাবে মাথা নত করে গেম গেলছে, না হয় মুভি দেখছে অথবা নিদেন পক্ষে বিভিন্ন অ্যাপস দেখছে। মাথা অার তুলছে না এই মাথা তোলারা।

এই কিছু কাল অাগেও বিদেশে কোথাও গেলে ট্রেনে বা বাসে থাকা তরুণরা চোখের সামনে মেলে ধরত খবরের কাগজ না হয় কোনও বই। কিন্তু হালে এই চিত্র এখন অার তেমন দেখা যায় না।

দেখা যায় ছেলে-বুড়ো সবাই স্মার্টফোনের নেশায় বুঁদ হয়ে অাছে। হুমড়ি খেয়ে অাছে হাতে ধরা ট্যাব বা স্মার্টফোনের ওপরে। কোনও দিকে তাদের খেয়াল নেই।

সদ্য সিঙ্গাপুর সফরে গিয়েও সব জায়গায় একই চিত্র দেখা গেল। মেরিনা বে স্যান্ডস থেকে পাতাল ট্রেনে ফেরার সময় কথা হলো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের কমিউনিকেশন অ্যান্ড নিউ মিডিয়া বিভাগে অধ্যয়নরত অরিন এটাংয়ের সঙ্গে। তিনি তার অাইপ্যাডে মুভি দেখছিলেন।

তিনি বললেন, সিঙ্গাপুরে ফোর-জি সেবা রয়েছে। তাই ট্রেনেই মুভি দেখছি। শুধু শুধু বসে থাকার কোনও মানে হয় না। অন্যদের দেখিয়ে ‌‌‌তিনি বললেন, বয়স্করা ছাড়া সবাই হয় ফোন না হয় ট্যাবে কিছু না কিছু করছে। গান শুনলেও এয়ারফোন দিয়ে। চোখ কিন্তু ঠিকই ফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনের ওপর।

অামাদের দেশেও এমনই সব ঘটনার দেখা মিলছে। ধানমন্ডি, মিরপুর, বনানীসহ বিশেষ করে যেসব এলাকায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অাছে সেসব এলাকায় এ চিত্র খুবই কমন। তবে এর বাইরে শপিং মল, ফাস্টফুড শপ বা বাসে বা ব্যক্তিগত গাড়িতে তরুণরা যেন হুমড়ি খেয়ে অাছে স্মার্টফোন বা ট্যাবে।

অাশির দশকের সেই চিত্র কী সামনে অাসছে অাবার? মাথা তোলারা মাথা নত করে থাকবে?

 

স/ইএইচ//

পছন্দের আরো পোস্ট