কান্না ঘুরিয়ে দিল ভাবনার স্রোত

চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামে ৪ মে ১৯৭৩ সালে জন্ম। বাবা মৃত প্রকৌশলী নন্দ দুলাল বড়ুয়া, মা রেখা রাণী বড়ুয়া গৃহিণী। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। মাদকাসক্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে প্রথম চিকিৎসা গ্রহণ করেন ১৯৯৭ সালে, বারবার চেষ্টা করেও কিছুতেই সুস্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছিলেন না। ২০০৮ সালে শেষ চেষ্টা হিসেবে আবার নিরাময় কেন্দ্রে যাওয়া। তখন প্রায় সব হারিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন।আত্মবিশ্বাস শূণ্যের কোঠায়। ধবংসস্তুপের ওপর দাঁড়ানো মানুষটি জীবনের যাবতীয় আগ্রহ হারিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায়।

একটিই ভাবনা আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় কিন্তু তার বড় ছেলে বর্ণ একদিন তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে দেখতে এসে ফিরে যাওয়ার সময় খুব কাঁদছিল। সেই কান্না ঘুরিয়ে দিল মানুষটির ভাবনার স্রোত। এবার দৃঢ় সংকল্প দাঁড়াতেই হবে এবং পারলেন।

নিজেকে ফিরে পেয়ে তার মধ্যে তারই মতো হতাশায় জীবনকে হারিয়ে ফেলা মানুষদের জন্য কিছু করার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা থেকে ২০১০ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সময় দিতে শুরু করেন বিভিন্ন নিরাময় কেন্দ্রে। আরো বৃহত্তর ও ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা থেকে দুই হাজার তেরো সালের সাত অক্টোবর বেজে উঠলো একটি গান ” বিদায় বন্ধু “।

স্বাভাবিক ভাবেই মনে হতে পারে কোন প্রিয়জনকে এই বিষাদময় বিদায়। গানের একটি লাইন ” ভুল করে আমি ধরেছি সে হাত,বুঝিনি তোমায় “। এই হাত মাদকের। এই বিদায় জানানো সর্বনাশী মাদককে। ” নিন্দিতজন ” শিরোনামে মাদক বিরোধী গানের অডিও সিডি প্রকাশের মধ্য দিয়ে মাদককে না বলার সচেতনতা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে অনুপ বড়ুয়া পিংকুর পথ চলার শুরু।

Post MIddle

এই অডিও সিডির গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী তিনি নিজেই।  এখানেই থেমে ছিলেন না। শুরু করলেন মাদক বিরোধী গল্প সংকলন লেখার কাজ। নিজের জীবনটা একসময় হারিয়ে গিয়েছিল মাদকের অন্ধকারে। শৈশব থেকে  নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলী যা তাকে মাদকাসক্তে পরিণত করে এবং বাস্তবিক ঘটনাবলীর অভিজ্ঞতার আলোকে লিখলেন বাংলাদেশের প্রথম মাদক বিরোধী গল্প সংকলন ” প্রজন্ম তোমার জন্য “।

সাহিত্যদেশ থেকে প্রকাশিত এই গল্প সংকলন এবার স্থান পেয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ১৯৮ নং স্টলে। একজন মাদকাসক্তের শৈশব থেকে মাদকাসক্ত হয়ে ওঠার বিভিন্ন পরিক্রমা গল্পের অবরনে নান্দনিক আবরণ পেয়েছে তার প্রাঞ্জল লেখায়। গল্পগুলো পড়লে যে কেউ খুব সহজে ধারনা পাবে মাদকাসক্ত হয়ে ওঠার কারণ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর। মোট আঠাশটি গল্পে সুন্দর এক সমীকরণ সাজিয়েছেন যা, যেকোন পাঠককে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা যায়। কঠিন আর্থিক টানাপোড়ন অথচ মানুষের জন্য মঙ্গলময় কিছু করার প্রেরনা এই মানুষটির মূল শক্তি। বইটি উৎসর্গ করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বুদ্ধিজীবী ও তাঁদের পরিবারকে।

বুদ্ধিজীবী দিবসের সম্মানে এই বইয়ে লেখা আছে একটি গীতি কবিতা। গানটি খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এটাই প্রথম একটি দেশাত্মবোধ গান।

প্রকাশিতব্য আরেকটি গান ” মতিন মাঝি “, যেখানে বাল্য বিবাহের পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মাদক বিরোধী তথা সামাজিক সচেতনতার জন্য নীরবে কাজ করে যাওয়া এই মানুষটি আজ বড্ড অসহায়ভাবে বললেন,” আমি আর একা পারছিনা, এবার একটু হাত ধরুন নয় আমায় মেরে ফেলুন।একদিকে মানবিক দায়বদ্ধতার বোধ ও সৃজনশীল মানসিকতা আর অন্যদিকে আর্থিক টানাপড়েন এই দুটোর সাথে যুদ্ধ করে আজ আমি বড্ড ক্লান্ত। “

পছন্দের আরো পোস্ট