খণ্ডকালীন চাকরি বইমেলায়

রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় ঢাকা বাঙালির প্রাণের এ মেলা। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। বরাবরের মতো এবারও মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি। মেলা উপলক্ষে দেশি-বিদেশি প্রচুর পাঠক ছুটে আসেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। তারা পছন্দের বই কিনেন। পাঠকদের চাহিদামাফিক বই সরবরাহ করতে প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে হিমশিম খেতে হয়। নিয়মিত ও স্থায়ী কর্মীদের দিয়ে এ সময় বেচাবিক্রি সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। প্রয়োজন হয় একঝাঁক চৌকস খণ্ডকালীন কর্মীর। তাই প্রতি বছর বিভিন্ন স্টলে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মেলা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে শুরু করেছে তাদের প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগ-প্রক্রিয়া। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো সিভি সংগ্রহ করা শুরু করেছে। বেশিরভাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লোক নিয়ে থাকে। আবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। বই মেলায় যারা খণ্ডকালীন ভিত্তিতে কাজ করতে চান, তাদের জন্য আবেদন করার এখনই সময়।

সুযোগ অপেক্ষা করছে আপনার জন্যও : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর মেলায় সাড়ে তিনশ’ থেকে ৪০০ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে থাকে। গেল বছরের বইমেলায় চার শতাধিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল ছিল। এ বছর স্টলের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে। আশার বিষয় হচ্ছে, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলের সংখ্যা বাড়লে বইমেলায় খণ্ডকালীন কাজের অনেক সুযোগও তৈরি হবে তরুণদের।

‘নতুন নতুন বই সম্পর্কে জানা, লেখক-পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, আর মাস শেষে কিছু সম্মানী তো আছেই। সব মিলিয়ে বইমেলায় কাজ করাটা সত্যিই অনেক আনন্দের।’ বইমেলায় খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাওজিয়া মাহরিন। তিনি তিন বছর ধরে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছেন। আপনিও চাইলে এই সুযোগ নিতে পারেন।

Post MIddle

যেসব পদে সুযোগ : মেলায় অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী বা বিক্রয় সহযোগী নিয়োগ করে থাকে প্রকাশনা সংস্থাগুলো। মেলায় বিক্রয়কর্মীর পাশাপাশি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ক্যাশিয়ার, জনসংযোগ কর্মকর্তা ইত্যাদি পদেও জনবল নিয়ে থাকে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হয়। আর এসব কর্মীর প্রায় বেশিরভাগই নেয়া হয় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষ থেকে মাস্টার্স পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। অন্য প্রকাশ প্রকাশনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শরীফ রায়হান বলেন, বইমেলায় আমাদের বই পাঠকদের কাছে প্রদর্শন ও বিক্রি করতে আমরা এক মাসের জন্য কিছু সেলস অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগ করে থাকি। গেল বছর আমাদের স্টলে ২০ জনের মতো খণ্ডকালীন বিক্রয় সহযোগী নিয়োগ করেছিলাম। এ বছরও সিভি সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিভি যাচাই-বাছাই শেষে ভাইভা নিয়ে যোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হবে।

যোগ্যতা : বইমেলায় বিক্রয়কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাই অগ্রাধিকার পান। স্নাতক পড়ুয়াদেরই নিয়োগ দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটরাও সুযোগ পেয়ে থাকেন। শুদ্ধোশ্বর প্রকাশনার নির্বাহী কর্মকর্তা জাকারিয়া সজীব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, সিভি সংগ্রহের পর আমরা একটা শর্টলিস্ট করি। পরে ভাইভার মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আবেদনকারীর কাজ করার আগ্রহ, চাপ নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা, আর্ট অব প্রেজেন্টেশন তথা উপস্থাপন কৌশল, বুদ্ধিমত্তা, স্মার্টনেস, যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। সেই সঙ্গে কিছু মানবিক গুণাবলী যেমন- সততা, দায়িত্বশীলতা এসব বিষয়ও নিয়োগের সময় দেখা হয়।

এ বিষয়ে অবসর প্রকাশনা সংস্থার বিপণন ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান মাসুদ গণমাধ্যমকে জানান, যাদের ইতিপূর্বে বইমেলায় কাজের অভিজ্ঞতা থাকে এমন তরুণদেরই অগ্রাধিকার দেন। পাশাপাশি নতুনদেরও নিয়োগ দেয়া হয়। বইমেলায় খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এমনিতে পত্রপত্রিকায় তেমন একটা বিজ্ঞাপন দেয়া হয় না, তবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ, প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর মাধ্যমে বইমেলায় কাজের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে সিভি চাওয়া হয়।

সুযোগ-সুবিধা : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় খণ্ডকালীন কর্মীদের প্রতিষ্ঠানভেদে এই এক মাসে ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়া হয়। এছাড়া দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার নাশতাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। রয়েছে কমিশনে বই কেনার সুবিধাও।

কাজের ধরন : বইমেলার কাজের ধরন একটু আলাদা। রোজ বইমেলা শুরু হয় বেলা তিনটা থেকে। চলে রাত আটটা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে মেলা চলে রাত ৯টা অব্দি। মেলা চলাকালে সেলস অ্যাসিসটেন্টদের খাওয়ার বিরতি বাদে প্রায় পুরোটা সময়ই স্টলে থাকতে হয়। দোকানের বইগুলো ক্রেতার কাছে সুন্দরভাবে প্রদর্শন করতে হয়। সেই সঙ্গে পাঠক-ক্রেতাদের চাহিদা ও পছন্দের দিকে বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়। সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থার বই, লেখক ও পাঠকদের সম্পর্কে বাড়তি জ্ঞান রাখতে হয়।

স্থায়ী চাকরির হাতছানি : বইমেলা চলাকালীন ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে এই বইমেলা ছাড়াও সারা বছর বিভিন্ন বইমেলায় তাদের কাজের সুযোগ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে স্থায়ীভাবেও নিয়োগ দেয়া হয়। এমনটিই জানালেন সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, বইমেলায় খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এমনিতে পত্র-পত্রিকায় তেমন একটা বিজ্ঞাপন দেয়া হয় না, তবে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর মাধ্যমে বইমেলায় কাজের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে সিভি চাওয়া হয়। সেখান থেকে খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। বইমেলার পারফরমেন্সে যে নিজেকে মেলে ধরতে পারে তাকে স্থায়ীভাবেও নিয়োগ দেয়া হয়।

পছন্দের আরো পোস্ট