মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ফারুকের রেকর্ড

প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম তার। শৈশব কেটেছে গ্রামের অন্য দশটি ছেলের মতো। বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টামি, দৌড়ঝাপ, সাইকেল চালিয়ে আর পুকুরে সাঁতার কেটে পার করে দিতেন পুরো দিন। পড়াশুনায় কিছুতেই মন বসতো না তাঁর। একে একে পরিবর্তন করেছেন ১৪টি স্কুল। হয়তো অনেকেই ভেবেছেন এই ছেলেকে দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু এই ছেলেই একদিন সবাইকে চমকে দিয়ে দেশ সেরা রিপোর্টার হবেন এমনটি হয়তো কেউ ভাবেনি।

বলছিলাম সম্প্রতি চতুর্থবারের মতো ইউনেসেফ মিনা মিডিয়া এওয়ার্ড বিজয়ী মোহাম্মদ ওমর ফারুকের কথা।  জন্ম কুমিল্লায় জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া প্রত্যন্ত গ্রামে। পিতা আলী আশ্রাফ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা পরিজা বেগম গৃহিনী। বাবা মায়ের চার সন্তানের মধ্যে ওমর সবার বড়।

স্কুল শিক্ষক বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় আর্মি অফিসার হবে কিন্তু ছেলে চাইতেন সৃজনশীল কিছু করতে। সেই ধারাবাহিকতায় লেখালেখিসহ বিভিন্ন সংগঠন করতেন তিনি। স্কুল জীবনে নিজেই ছিলেন বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোক্তা। লিখতেন কবিতা, ক্লাস অষ্টম শ্রেনী প্রকাশ করেছেন নিজের কবিতার বই ‘বিদ্ব্যান’। তখনই বইটির জন্য ইয়ং রাইটার হিসেবে পেয়েছিলেন পুরস্কার।

ওমরের সাংবাদিকতা জীবনটা নানান বৈচিত্রময়। মফস্বল উঠে আসা এই তরুণ কাজ করছেন রাজধানীতে জাতীয় গণমাধ্যমে। মফস্বলের সরল পথ পেরিয়ে রাজধানীতে আসার পথটি মোটেও সরল ছিল না তার জন্য। নানান প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করে ছিনিয়ে আনতে হয়েছে কাঙ্খিত বিজয়। সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তরুণ এই সংবাদকর্মী।

Post MIddle

বর্তমানে কাজ করছেন ইত্তেফাকের ফিচার রির্পোটার হিসেবে।  ফিচার রির্পোটিং করেও তিনি অনেক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে, প্রমাণ করেছেন সাংবাদিকতা মিশে আছে তার রক্তে। সদা হাস্যজ্জল ওমর নিজের কাজ গুলোকে নিয়ে গেছেন অন্যমাত্রায়, প্রমাণ করেছেন- মেধা, পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় সবই সম্ভব। সাংবাদিকতা জগতে ছুটে চলেছেন দুরন্ত গতিতে। মানবিকতা, সচেতনতা এবং দেশের কল্যাণেই সাংবাদিকতা- এমন বিশ্বাসে ই এগিয়ে চলেছেন একনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমের এই কনিষ্ঠ তরুণ। তুলে ধরছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কষ্টগুলো। কাজ করছেন সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষ গুলোর জন্য। সাংবাদিকতা করে মানুষের জন্য যে কিছু করা যায়, সেটাই দেখিয়েছেন তরুণ এই সাংবাদিক।

সাংবাদিকতার শুরুর গল্পটা কিভাবে জানতে চাইলে ওমর ফারুক জানান, নিজের লেখার পাশাপাশি অন্যের লেখা প্রকাশের জন্য সংবাদ ভিত্তিক ম্যাগাজিন মাসিক বিশ্বের আলো বিশ্বকন্ঠ সম্পাদনা দিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকতা। চৌদ্দ কি পনেরো বয়সেই সম্পাদক! সেটা দিয়েই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সেই বয়সেই। পরে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান কুমিল্লার স্থানীয় সাপ্তাহিক কুমিল্লার আলোতে এবং দৈনিক আমাদের কুমিল্লাতে।

এরপর কাজ শুরু করেন দেশের প্রথম মফস্বল বৈকালিক পত্রিকা কুমিল্লার ডাকে। কুমিল্লার ডাকে কাজ করার পাশাপাশি কুমিল্লার সকল পত্রিকায় তখনকার সময়ের কলামও লিখতেন তিনি। আর সেই সুবাদে কুমিল্লার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ওমর। কুমিল্লায় কাজ করার সময় চ্যানেল আইয়ের ‘সাপ্তাহিক’ এ তার অসংখ্য লেখা প্রকাশ হয়।

সাংবাদিকতার স্বীকৃতি স্বরুপ শিশুদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে সেরা রির্পোটার হিসেবে চার বার পেয়েছেন ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ১১, ১২, ২০১৬ সর্বশেষ ২০১৭ সালে। পেয়েছেন বিএফটিএসএসি অ্যাওয়ার্ড ২০১১। ২০১৫ সালে তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে কাজ করে পেয়েছেন বন্ধু মিডায়া ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ সহ সেরা রির্পোটার হিসেবে নয়টি অ্যাওয়ার্ড আছে তার ঘরে। ওমর মূলত পলিটিক্যাল ইন্টারভিউ, নারী, শিশু, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাস হালচাল, তরুন প্রজন্ম, অর্থনীতি, তৃতীয় লিঙ্গ বা সংখ্যালঘু, সমকামীর মতো স্পর্শকাতর ইস্যু গুলো নিয়ে কাজ করছেন।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওমর ফারুক রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি সব সময় মাস্টার প্ল্যান করে পথচলি। বর্তমানের মতো আগামীদিনেও আমি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করবো। আমি সাংবাদিকতা তাদের জন্যই করবো।

পছন্দের আরো পোস্ট