বিএমডিসি সনদ বাধ্যতামূলক করা জরুরী

ইদানিং বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সরকারী ও বেসরকারী সহ স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার-ডিপ্লোমা চিকিৎসক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন পত্র আহ্বান করা যাচ্ছে। বিপরীতে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়, মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ম্যাটস্ থেকে চার ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ডি.এম.এফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী।

এ সকল নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষ কখনোই উল্লেখ করেন না যে, আবেদনকারী প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বিএমডিসি কর্তৃক নিবন্ধনকৃত পেশাগত রেজিস্ট্রেশনধারী হতে হবে। যে কারণে একদিকে যেমন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার- ডিপ্লোমা চিকিৎসক পদের জন্য নকল বা ভুয়া ডি.এম.এফ সার্টিফিকেট তৈরী করে অনেক অসৎ, ভুয়া প্রার্থী আরামছে চাকুরী করে যায় এবং চিকিৎসা সেবা দান করে যায়। অন্যদিকে তেমনি বিএমডিসি কর্তৃক নিবন্ধনকৃত বৈধ ডি.এম.এফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা চাকুরী ও উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়।

সরকারী প্রতিষ্ঠানের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। সরকারী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলে “রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ” থেকে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার- ডিপ্লোমা চিকিৎসক পদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির সনদ যাচাই করে প্রার্থীর চাকুরী স্থায়ীকরণ করতে পারেন। কিন্তু আপনারা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এর পেশাগত নিবন্ধন সনদ ব্যতীত কখনোই নিশ্চিত হতে পারবেন না যে, আপনার কর্মস্থলের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার- ডিপ্লোমা চিকিৎসক পেশাদার ডিপ্লোমা চিকিৎসকের ডি.এম.এফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী এবং তিনি ঐ ডি.এম.এফ ডিপ্লোমা ডিগ্রি ইতোপূর্বে “রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ” অধিভূক্ত বিএমডিসি কর্তৃক স্বীকৃত ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জন করেছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেকনোলজি ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন প্রতারক ফাউন্ডেশন চক্র ভুয়া ডিএমএফ সনদ দিয়ে অনেকের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ সহ বিএমডিসি এর অনুমোদনের আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও এসব ভুঁইফোড় ভুয়া প্রতিষ্ঠান আইনের তোয়াক্কা না করেই পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে যে জনস্বাস্থ্য দিন দিন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এ নিষেধাজ্ঞা আছে। সরকার ও বিএমডিসি-র অনুমোদন ব্যতীত বিএমডিসি নিবন্ধিত প্রথম থেকে পঞ্চম তফসিলের কোনো ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করা শাস্তি যোগ্য অপরাধ। ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রি বিএমডিসি-র পঞ্চম তফসিল নিবন্ধিত। আইন অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা, তারপর প্রতিদিনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, সেই সাথে ভূয়া সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের জেল বা কারাদণ্ড। ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেয়ার এখতিয়ার কেবল বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের। তবে, প্রাইভেট ম্যাটস্ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের পাশাপাশি বিএমডিসি-র অনুমোদনও নিতে হবে। তাহলেই আপনি পরবর্তীতে বিএমডিসি থেকে পেশাদার ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকের পেশাগত রেজিস্ট্রেশন সনদ পাবেন। অন্যথায় নয়। কাজেই প্রাইভেট ম্যাটস্- এ ভর্তি হওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিবেন, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অনুমোদন আছে কিনা। বিএমডিসি কর্তৃক ম্যাটস্ অনুমোদন না থাকলে পরবর্তীতে বিএমডিসি থেকে পেশাদার ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন সনদ পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। রেফারেন্সেস; বিএমডিসি এ্যাক্ট-২০১০, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের রুসল্ এন্ড রেগুলেশনস্, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি ম্যাটস্ অনুমোদন নীতিমালা-২০১০, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গণসতর্কতা বিজ্ঞপ্তি।

Post MIddle

তাছাড়া এটা আমার মাথায় আসে না যে, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন সনদ ব্যতীত কিভাবে একজন ডিপ্লোমা চিকিৎসক আপনাদের প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবাদান করে! আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন যে, (বিএমডিসি) কর্তৃক নিবন্ধনকৃত ব্যতীত এলোপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদান আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। উল্লেখ্য: নিবন্ধন যোগ্য (ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা Bachelor Degree (MBBS/ BDS/ MD দেশের বাহিরের) এবং Diploma Degree DMF. রেফারেন্স; বিএমডিসি এ্যাক্ট’২০১০

কাজেই নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আকুল আবেদন এই যে, উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে আপনারা অবশ্যই নিয়োগদানের ক্ষেত্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার-ডিপ্লোমা চিকিৎসক পদের জন্য প্রার্থীর বিএমডিসি এর পেশাগত রেজিস্ট্রেশন সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক করবেন এবং প্রয়োজনে বিএমডিসি-তে গিয়ে তার সনদের সত্যতা যাচাই করবেন। মনে রাখবেন, ঢাকা নিলক্ষেত মোড়ে যেয়ে কোন ব্যক্তি সহজেই ভুয়া ‘ডিএমএফ’ সনদ তৈরি করতে পারবেন কিন্তু বিএমডিসি এর পেশাগত রেজিস্ট্রেশন সনদ ও সনদের নাম্বার তৈরী করতে পারবেন না। সেই সাথে সকল মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজ, ম্যাটস্ , মেডিকেল ইন্সটিটিউট, হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ সকল উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার- ডিপ্লোমা চিকিৎসক নিয়োগ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন যে, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল ডিপ্লোমা চিকিৎসক এর বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন সনদ হালনাগাদ রয়েছে এই বিষয়ে তাঁরা যেন নিশ্চিত হন। আর ডিপ্লোমা চিকিৎসক জাতির জন্য নিরাপদ কর্মস্থল প্রদানে যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হবেন।

ডা. এম. মিজানুর রহমান
তথ্য, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।

পছন্দের আরো পোস্ট