ক্লাস এইট ফেইল মিলিওনিয়ার

খুব ভালো অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্স ছাড়া আজকের দিনে বড় কোন সাফল্য পাওয়া বা সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব না, এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে। কিন্তু আজ আপনাদেরকে বলব এমন এক ব্যক্তির কথা যিনি সেই প্রচলিত ধারণাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, নিজের মত করে গড়ে তুলেছেন নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

তার নাম তৃষ্ণিত অরোরা। ক্লাস এইটই পাস করতে পারেননি তিনি। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি তার জয়যাত্রা। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি, নিরলস পরিশ্রম আর অভাবনীয় মেধার সমন্বয়ে তিনি মাত্র ২২ বছর বয়সেই গড়ে তুলতে সক্ষম হন মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ব্যবসা। এবং বর্তমানে তার ক্লায়েন্ট লিস্টে আছে রিলায়েন্স, আমুল, আভন সাইকেলসের মত নামজাদা ব্র্যান্ডসমূহ।

তৃষ্ণিতের জন্ম ভারতের লুধিয়ানায়। নিতান্তই মধ্যবিত্ত এক পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি তার দুর্নিবার আকর্ষণ, যা একটি পর্যায়ে গিয়ে পরিণত হয় আসক্তিতে। তার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কম্পিউটার সিকিউরিটি আর হ্যাকিং। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে তৃষ্ণিতকে কম্পিউটারের কাছ ছাড়াই করা যেত না। ফলে বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন যে আশংকা করতেন, সেটিই একদিন সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এসটিডি ৮ ক্লাসে দুই বিষয়ে ফেল করে বসেন তিনি। পড়ালেখাই তো করেননি কিছু, পাস করবেন কীভাবে!

এ গল্প যদি সাধারণ আর দশজন ছেলের হতো, তাদের জীবন হয়ত ওখানেই থমকে যেত। নিজেদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষার বিসর্জন দিয়ে, বাবা-মায়ের কথা মেনে অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে কেবল পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বাধ্য হতো তারা। কিন্তু তৃষ্ণিত একদমই অন্য ধাতুতে গড়া। এমন বাজে ফলাফল করে বাবা-মায়ের মুখ ডুবিয়ে এবং আশেপাশের সকলের হাসির পাত্র হয়েও তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। ইতি টানেননি নিজের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্য থেকে। বরং তিনি সিদ্ধান্ত নেন প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়াকেই চিরতরে বিদায় বলে দিয়ে, কম্পিউটার সিকিউরিটি বিষয়ক জ্ঞানার্জনে পূর্ণ মনোনিবেশ করার।

তার এমন কার্যকলাপে বিস্মিত হয় সকলেই। এবং অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করে দেয় যে এ ছেলে একদমই গোল্লায় গেছে! তবে তৃষ্ণিত তাদেরকে ভুল প্রমাণিত করতে খুব বেশি সময় নেননি।

Post MIddle

মাত্র ২২ বছর বয়সেই তিনি টিএসি সিকিউরিটি নামে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, এবং এ ব্যাপারে অগাধ জ্ঞান থাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্লায়েন্ট হিসেবে জুটিয়ে ফেলেন রিলায়েন্স, সিবিআই, পাঞ্জাব পুলিশ, গুজরাট পুলিশ, আমুল, আভন সাইকেলস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিকে। শুধু তাই-ই নয়। তিনি তিনটি বইও লিখে ফেলেন। বই তিনটির নাম যথাক্রমে Hacking TALK with Trishneet Arora, The Hacking Era এবং Hacking With Smart Phones.

এটি সত্যিই পরম আশ্চর্যের একটি ব্যাপার যে একটি ছেলে, যার সংস্লিষ্ট বিষয়ে কোন ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিল না, তিনিই আজ ‘ফরচুন ৫০০ কোম্পানি’র তালিকার মধ্যে ৫০টি কোম্পানির সাথে কাজ করছেন। এবং এমন সফলতার দরুণ তিনি নিজ দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম। অফিস খুলেছেন দুবাই ও যুক্তরাজ্যে। সব মিলিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি রুপি উপার্জন করছেন তৃষ্ণিত।

এমন একটি বয়সে, যখন অধিকাংশ ছেলেমেয়েরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মেয়াদই শেষ হয় না, আর হলেও একটি নিশ্চিত ক্যারিয়ার গঠনকে নিতান্তই আকাশ কুসুম কল্পনা বলে মনে হয়, সেই বয়সেই তৃষ্ণিত বনে গেছেন নিজ অঙ্গনের অন্যতম সফল একটি নাম। এ সবই সম্ভব হয়েছে কারণ তৃষ্ণিত মাঝপথে হাল ছেড়ে দেননি। হাজারো টিটকারি, হাজারো কুকথা শোনার পরও তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন, এবং তার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে।

তাই তৃষ্ণিত আজ কেবল ব্যক্তিজীবনেই সফল নন, বরং পৃথিবীর নানা প্রান্তে লুকিয়ে থাকা আরও লক্ষ লক্ষ তৃষ্ণিতের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম।

তথ্যসূত্র- https://www.kenfolios.com/trishneet-arora-hacker/

পছন্দের আরো পোস্ট