জাবির সাংবাদিকতা বিভাগে ফল বিপর্যয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষাথীদের চরম ফল বিপর্যয় হয়েছে। এ বিপর্যয়ের জন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে । ফাইনাল পরীক্ষার আগে টিউটোরিয়ালের ফল প্রকাশ না করা, টিউটোরিয়ালের খাতা শিক্ষার্থীদের ফেরত না দেওয়া প্রভৃতি অভিযোগের কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গত সোমবার বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেনীর ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরে ফলাফল বিশ্লেষন করে দেখা যায়, অনার্স এবং মাস্টার্সের ফলাফলের ক্ষেত্রে তুলনামূলক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ফলাফল অনার্সের চেয়ে মার্স্টাসে অবনতি হয়েছে। এদের মধ্য অন্তত সাতজন শিক্ষার্থীর সিজিপিএ অনার্সে ৩.৫০ এর ওপরে ছিল।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, মাস্টার্সের দশটি কোর্সের মধ্যে আটটি কোর্সের প্রত্যেকটিতে ২০ জন বা এর অধিক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষক পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এটা তখনই হয় যখন প্রথম পরীক্ষক থেকে দ্বিতীয় পরীক্ষকের প্রদানকৃত নম্বরের ব্যবধান ১৪ শতাংশ বা এর বেশি হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে এই ঘটনা অস্বাভাবিক।

বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত শিক্ষার্থীরা অনার্সের চেয়ে মাস্টার্সে ফল ভালো করে। কিন্তু কেন সাতজন ৩.৫০ বা বেশি পেয়েও মাস্টার্সের খারাপ করল তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে বলে মত দেন তারা।

এদিকে,কারো কারো প্রতি শিক্ষকেরা পক্ষপাতিত্ব করেছেন এমন অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা জানান, যারা মেধা তালিকা থেকে বিভাগে ভর্তি হয়েছিল তাদের প্রায় সবারই ফলাফলে অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে পোষ্য কোটাসহ অন্যান্য কোটার শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে জানা যায়, মাস্টার্সে ৩.৬৮ পেয়ে সাঈদ আল জামান (অভি) দ্বিতীয় স্থান অধিকার লাভ করেছেন। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের ছেলে সাঈদ পোষ্য কোটায় ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে গ্রেস নম্বর নিয়ে বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষে তার ফলাফল নিচের দিকে থাকলেও আকস্মিকভাবে সে ভালো করতে থাকে।

Post MIddle

৩.৫৮ পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার লাভ করা শিক্ষার্থী মিফাত নায়ারও কোটায় ভর্তি হয়েছিল বিভাগে। কিন্তু অনার্সে তার সিজিপিএ ছিল ৩.৪১।

অন্যদিকে, অনার্সে সিজিপিএ ৩.৫০ বা তার বেশি ছিল কিন্তু মাস্টার্সে ৩.৫০ এর নিচে ফল হয়েছে এমন সাতজনের মধ্যে অন্যতম বিজয়া রহমান খান, সাদিয়া আফরিন, সুমন আলী। যাদের অনার্সে সিজিপিএ ছিল ৩.৫৪। অথচ তাদের মাস্টার্সে ফল যথাক্রমে ৩.৪৩, ৩.৩৫ এবং ৩.৪৫।

এ ছাড়া অনার্সে ৩.৫২ ছিল শাহলা শাহনাজ ও মিঠুন ইসলামের। মাস্টার্সে তাদের ফল হয়েছে যথাক্রমে ৩.৪২, ৩.৪০। ইমরান হোসেনের ফল ছিল ৩.৫১ যার মাস্টার্সে ফল হয়েছে ৩.৩১।
এ বিষয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা অনেকেই পরীক্ষা ভাল দিয়েছি। অনার্সে ভাল ফলাফলে অণুপ্রাণিত হয়ে মাস্টার্সের পড়াশুনায় কোন ত্রুটি করিনি। আসলে আমরা এমন ফলাফলে খুবই হতাশ। এর বেশি কিছু বলার নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অধ্যাদেশ থেকে জানা যায়, ২৭৪ তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণের সাত দিনের মধ্য টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতা শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হবে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, গত পাঁচ বছরে বিভাগে থেকে কোনো শিক্ষক টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতা কিংবা কোনো অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতেন না। অথচ এখানে থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে জানতে পারত। শিক্ষার্থীরা বিভাগের শিক্ষকদের হাতে জিম্মি দশার কারণে এতদিন কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। কিন্তু কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এত এ বিষয়ে খোঁজ নেননি তা জানতে চেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

এ বিষয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, এটা তো তাদের বিভাগের বিষয়। তবুও আমরা বিষয়টি খোঁজ নেব।

এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উজ্জ্বল কুমার মন্ডল বলেন, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের ভূল ধারণা। তারা আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পছন্দের আরো পোস্ট