আত্মপ্রেম ও আত্মতৃপ্তির ফেসবুকিং

গ্রীক মিথলজি অনুসারে,শিকারী নার্সিসাস ছিলেন নদী দেবতা সেফিসাস এবং স্থলপরী লিরিওপের পুত্র!!নার্সিসাস ছিলেন অসম্ভব রুপবান এক পুরুষ!!তাকে দেখামাত্র সবাই তার প্রেমে পড়ে যেতেন!! কিন্তু নার্সিসাস ছিলেন ভীষন অহংকারী আর ঔদ্ধত!!মানুষের এই ভালবাসার কোন মুল্যই ছিল না তার কাছে!!

বিখ্যাত রোমান কবি ওভিড এর লেখা মাস্টারপিস “মেটামরফসিস” এ বর্নিত আছে,একজন ভবিষ্যত দ্রস্টা জাদুকর লিরিওপে কে বলেছিলেন- তার পুত্র যেন কোনদিন নিজের চেহারা দেখতে না পারে,নইলে সে নিজের জন্য সর্বনাশ বয়ে আনবে!!একবার “ইকো” নামের এক স্থলপরী নার্সিসাস এর প্রেমে পড়ে!!সে তার ভালবাসার কথা নার্সিসাসকে জানাতেই অহংকারী নার্সিসাস তাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়!!

এই ঘটনায় অদৃষ্টের দেবী নেমেসিস খুব বিরক্ত হন!!তিনি নার্সিসাস কে শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাকে দিকভ্রষ্ট করে একটি জলাশয়ের কাছে নিয়ে যান!!মেটামরফসিস এর বর্ননা অনু্যায়ী নার্সিসাস পানিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে তার নিজের প্রেমে পড়ে যায়!!এত সুন্দর,এত!!সে বুঝতেও পারে না ওটা তার নিজের চেহারা!!এরপর যখন সে রিয়েলাইজ করে এই ভালবাসার কোন পরিনতি নেই তখন সেই পানিতে ঝাপ দিয়েই সে আত্মহত্যা করে!!

ইংরেজী নারসিসিজম টার্মটির উতপত্তি গ্রীক চরিত্র নার্সিসাস এর ঘটনা থেকেই!!১৯১৪ সালে মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড এর “এসে অন নার্সিসিজম ” থেকে সর্বপ্রথম নারসিসিজম এর ধারনা জনপ্রিয়তা লাভ করে!!

নারসিসিজম এর সবচেয়ে উপযুক্ত বাংলা অর্থ আত্মপ্রেম!!

এই আত্মপ্রেম যখন মানুষের মশ্তিস্ক,তার আচার আচরন কে নিয়ন্ত্রন করা শুরু করে তখন তা তার নিজের এবং তার আশেপাশের মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে !!

এমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন এই বিপজ্জনক অবস্থাকে একে “নার্সিসিস্টিক পার্সনালিটি ডিজঅর্ডার”নামক মেন্টাল ডিজঅর্ডার হিসেবে এনলিস্টেড করেছেন!!

এই যে এতক্ষন এত জ্ঞান ঝাড়লাম তার এক্টাই কারন!!সেটা হচ্ছে আমরা বেশীরভাগ মানুষই আজকাল এই রোগে আক্রান্ত!!

Post MIddle

ফেসবুক আসার আগেও হয়ত এর প্রাদুর্ভাব ছিল কিন্তু অন্যরা তা বুঝতে পেত না!!কিন্তু ফেবু আসার পর থেকে আমরা প্রত্যেকে সিল দেয়া পাগল এ পরিনত হচ্ছি!!

এর প্রথম উদাহরন হচ্ছে ছবি পোস্ট করা রোগ!!আমরা সারাক্ষন নিজেদের একজিবিট করতে থাকি!! চেহারা দেখে মানুষ বলবে,আপ্পি নাইস লাগছে,ভাল লাগছে,আপ্নি এত সুন্দরী এই আত্মতপ্তির জন্য সারাক্ষন নিজেকে শো করতে থাকি!!লাইক কমেন্ট হচ্ছে সে আত্মতৃপ্তির প্যারামিটার!!যত বেশী লাইক তত বেশী আত্মতৃপ্তি!!

এই রোগ ধীরে ধীরে ভয়ানক অবস্থায় চলে যাচ্ছে!!সেদিন দেখলাম এক মেয়ে তার দাদার কবরের সামনে দাড়িয়ে এক হাতে মোনাজাত ধরে আরেক হাতে সেলফি তুলে পোস্ট করেছে!!

আমার তো আজকাল মনে হয় মানুষ বাচার জন্য ছবি তোলেনা ছবি তুলে পোস্ট করার জন্যই বাচে!!মাম্মির সাথে,ড্যাডির সাথে,হাবির সাথে ছবি,বেবির সাথে ছবি,বুয়ার সাথে ছবি এমন কি মরা মানুষের সাথেও ছবি পোস্ট করতে হবে!!

এই নার্সিসিজম এমন অবস্থায় পৌছেছে যে রাস্তায় রক্তাক্ত কোন মানুষ পড়ে থাকলে আমরা তাকে বাচানোর চিন্তা করার বদলে সেলফি তুলি!!

আমার ধারনা,আমরা যা কিছু করি,ঘোরাফেরা খাওয়া দাওয়া এমকি টয়লেট পর্যন্ত ফেবুতে ছবি দেয়ার জন্যই করি!!

এই আত্মপ্রেম আমাদের ভয়নক পরিনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে!!নিজেকে ছাড়া আর কাওকেই ভালবাসিনা আমরা!!আজকাল মরা বাড়িতেও লিপ্সটিক দিয়ে আই মেক আপ করে যাই!!মরা বাড়িতে কত মানুষ,মিনিমাম মেক আপ ছাড়া যাওয়া যায়??সেলফি তুলতে হবে না??

যেদিন ইহরাম বাধা এক বাঙ্গালী মহিলাকে ফুল মেক আপ এ কাবা শরীফ এর সামনে সেলফি তুলতে দেখলাম সেদিন বুঝলাম মানুষ আর মানুষ নাই,ফ্রাঙ্কেন্সটাইন হয়ে গেছে…………

পছন্দের আরো পোস্ট