নতুন টিউশনি
নতুন টিউশন পেলাম।ছাত্রী আমার ক্লাস টেন-এ পড়ে।প্রথম দিন গেলাম।ছাত্রী আসল।নিয়মানুযায়ী আমিই প্রথম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব।কিন্তু দেখলাম উল্টো কাণ্ডটা ঘটে গেল।
আমি কিছুবলার আগে ছাত্রীই আমাকে বলল,”স্যারআপনার পুরো নাম কী?”
প্রশ্নটা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলাম,”মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন রনি।”
ছাত্রী,”ওরে বাপরে! কত্তবড় নাম।স্যার আপনি কোথায় পড়েন?”
“চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
“কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়েন, স্যার?”
“বাংলা।”
“কোন ইয়ারে পড়েন স্যার?”
“এখন মাস্টার্স করছি।”
“ও! তাহলে তো আপনি আমার থেকে অনেক বড়।তাস্যার আপনি কোন বছরে S.S.C. পাস করেছিলেনস্যার?”
বলাবাহুল্য প্রথম দিনে সওয়াল-জওয়াব চলেছিল প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো।
এর মধ্যে আমি প্রশ্ন করেছিলাম পাঁচ মিনিট আর বাকি সম্পূর্ণ সময়ে দিয়েছিলাম ছাত্রীর প্রশ্নের জবাব। একঘণ্টা পড়ানোর পর চলে আসার কিছুক্ষণ আগে ভাবলামরএভাবে চলতে দিলে আমার জন্য অবস্থাটা হয়ে পড়ে মর্যাদাহানিকর আর ছাত্রীর জন্য হয়ে পড়ে সময় হানিকর।তাই বললাম, “দেখো আজ প্রথম দিন বলে তোমাকে এত বেশি কথা বলার সুযোগ দিলাম।পরবর্তীতে পড়ার বাইরে একটা প্রশ্নও করবে না।
কথা যা বলার আমি বলব আর তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে।বুঝতে পেরেছ?”
ছাত্রী কিছুক্ষণ গম্ভীরভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল তারপর হেসে বলল,”জ্বি ঠিক আছে
স্যার কালকে থেকে আমি আর কথা বলব না।শুধু আপনার কথা শুনব।”
আমি সন্তুষ্টচিত্তে বাসায় ফিরলাম।কিন্তু কে জানত কপালে কত যে দুর্দশা লিখা ছিল!!!
পরদিন গেলাম ছাত্রীকে পড়ানোর জন্য।প্রথমে নতুন কিছু অধ্যায় বুঝিয়ে দিলাম।তারপর গত দিনের পড়া থেকে একটা প্রশ্ন লিখতে দিলাম।ছাত্রী এরমধ্যে কোনও প্রশ্নই করল না।কিন্তু লেখার সময় শুনলাম ছাত্রী শুধু লিখছে না; গুনগুন করে গানও গাচ্ছে।কি আর করার! বসে বসে ছাত্রীর গুনগুনানি শুনতে লাগলাম।
একসময় ছাত্রীর লেখা শেষ হলো।আমাকে খাতাটি দিল নিরীক্ষণ করার জন্য।আমি খাতাটি দেখছি।এ সময় শুনলাম ছাত্রী একদম পরিষ্কারভাবে খুবই চাপাস্বরে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে গাচ্ছে,”তোমায় দেখলে মনে হয় হাজার বছর তোমার সাথে ছিল পরিচয় বুঝি! ছিল পরিচয়!!!”
আমি গানটা শুনে অবাক হয়ে ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি, সে আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বলল,”স্যার আপনি তো কথা বলতে মানা করেছিলেন কিন্তু গান গাইতে তো মানা করেননাই! তাই গান গাচ্ছি।
আমার গানের গলাকেমন স্যার?”
কী আর বলব?এ মেয়ের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও বিপদজনক।আর কোনো কথা না বলে সোজা বের হয়ে গেলাম।ছাত্রী পেছন থেকে বলল,”স্যার আগামিকালের জন্য হোমওয়ার্ক কী করব স্যার।”
মুখে কিছু না বলে মনে মনে বললাম, “নিকুচি করি তোর হোমওয়ার্কের!”
————————————————————————————————————————————————–
কিছুক্ষণ আগে ছাত্রীর বাবাকে ফোন করে বললাম যে, আমার কিছু ব্যস্ততার কারণে ওনার মেয়েকে আর পড়াতে পারব না।ফোন কাটার পর একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।যাক আমার মতো মানীর মান আল্লায় বাঁচাইছে।