চুয়েট শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের-(চুয়েট) এর শিক্ষার্থীদের সাথে নগরীর চট্টগ্রাম শহরে অক্সিজেন মোড়ে স্থানীয়দের সংঘর্ষে তিন চুয়েট শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন গত ১৯ নম্ভেবর (রবিবার) রাত ৯টা সময়। এতে চট্টগ্রাম জেলার ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি আবদুর নবী লেদু এবং তার কয়েকজন অনুসারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল ২০ নম্ভেবর (সোমবার) ক্যাম্পাসে এলাকায় এই ঘটনায় জড়িত থাকার হামলার প্রতিবাদে এবং সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে চুয়েটে মানববন্ধন করেছেন চুয়েটে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত সাড়ে ৯টা দিকে চুয়েটের বাসগুলো অক্সিজেন মোড় হয়ে চুয়েটে অাসার সময় কর্ণফুলী বাসের হেলপারের সাথে স্থানীয় এক যুবকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।কথা কাটাকাটি হওয়া যুবকটি কর্ণফুলী বাসের হেলপারকে বাস থেকে টেনে বাহির করে তার সাথে কয়েকজন লোকসহ হেলপারকে মারধর করেন। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে একজন চুয়েট শিক্ষার্থীও এই ঘটনায় অাহত হন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে চুয়েটে ক্যাম্পাসগামী তিনটি বাসের শিক্ষার্থীরা অক্সিজেন মোড়ের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থা করেন। এতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যান চলাচল কিছু সময়ে জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

পরে রাত পৌনে এগারটার দিকে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল আচার্য এবং এমআইই বিভাগের প্রভাষক হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌছান। তারা চুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং বায়জিদ থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে স্থানীয়দের সাথে ঘটনার মীমাংসা করতে বৈঠকে বসেন। এই ব্যাপারে এমআইই বিভাগের প্রভাষক হুমায়ুন কবির বলেন, বৈঠকে হামলার প্রেক্ষিতে থানায় জিডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং আমাদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যারিকেড খুলে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবার প্রাক্কালে আবদুর নবী লেদু এসে শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন । একপর্যায়ে চুয়েটের শিক্ষার্থীদের সাথে আবারও তার কথা কাটাকাটি হয়। এমন সময় স্থানীয়দের সাথে আবারও চুয়েট শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী আহত হয় । সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বায়জিদ থানার পুলিশ এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং চুয়েট শিক্ষার্থীদের আমরা ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠাই ।

Post MIddle

এদিকে চুয়েট বাসে হামলার হওয়ার এমন আশঙ্কায় গতকাল সোমবার কোন বাস শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় নি এবং হামলার প্রতিবাদে এদিন ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বেলা ১২টায় বাসে চলাচলের নিরাপত্তার দাবিতে শিক্ষার্থীরা চুয়েটে এর নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এবং উপ-ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মানববন্ধনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তারা এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।

এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক রাউজান নিউজ’কে বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক এবং এতে চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চলাচলে যেন কোনরকম ঝামেলা না হয় সেজন্য আমরা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে আলোচনা করে স্থানীয়দের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছি। এর আগ পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে অক্সিজেন মোড় দিয়ে চুয়েট বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

একজন শিক্ষার্থী বলেন শিক্ষকরা পুলিশকে নিয়ে সেখানে হাজির হলে লেদু বাহিনীর সন্ত্রাসীরা পাশের কসাইপাড়া গলি দিয়ে পালিয়ে যায় এবং সেখান থেকে চুয়েট বাসের দিকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে যেতে থাকে। সেখানে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ‘মোটরসাইকেল শোডাউন’ শুরু করে। এমতাবস্থায় শিক্ষকদের নির্দেশনায় চুয়েট বাসগুলো ক্যাম্পাসের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করে। তখন বাজে রাত একটা। এই খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয় এবং ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে।

গত পাঁচ মাস আগেও অক্সিজেন মোড়ে চুয়েট বাসে হামলা হয়। এতে একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। বাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়। লেদু বাহিনীর কিছু অনুশারি কুয়াইশের বিভিন্ন যায়গায় সিএনজি তে তল্লাশি চালানো হয় শিক্ষার্থীদের খোঁজে।
এই পরিস্থিতিতে চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা সার্থে আতংকিত। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হোক, লেদু বাহিনীর বিচার জোর দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

পছন্দের আরো পোস্ট