নানান সমস্যায় জর্জরিত চুয়েট

নানান সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।শিক্ষার্থীদের অভিযোগ লেখা পড়ার সুন্দর পরিবেশ নেই। ক্যান্টিন, লাইব্রেরী, লাইট পোস্ট, ইন্টারনেট সুবিধাসহ ১০ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।চলমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষে রবিবার এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মো: মশিউল হক ।শিক্ষার্থীদের দেয়া দাবির মধ্যে রয়েছে-

১। গত ১ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ক্যান্টিনে খাদ্য দ্রব্যের যে মূল্য বৃদ্ধি করা হয় তা এখনো পর্যন্ত বহাল রয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা যে ব্যাপারে অবগত নন। খাবারের মানোন্নয়ন ও খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাই মূল্যতালিকা নির্ধারণ করবেন।

২। ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন সংলগ্ন যে ফটোকপির দোকান রয়েছে সেখানে রঙিন প্রিন্টিং এর জন্য ৫ টাকা এবং সাদাকালো প্রিন্টিং এর জন্য ৩ টাকা রাখা হয়। বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ২.৫ টাকা করে রাখা হয়। এই অতিরিক্ত খরচ ছাত্রদের জন্য বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব প্রিন্টিং এবং ফটোকপির মূল্য সর্বোচ্চ ২.৫ টাকা এবং ৮০ পয়সা পর্যন্ত নির্ধারণ করতে হবে।

৩। প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি আমাদের ক্যাম্পাস। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের ক্যাম্পাস আমরা পরিষ্কার রাখতে পারি না। ক্যান্টিন ও হলের ময়লা যত্রতত্র ফেলার কারণে ক্যাম্পাসের বিশেষ কিছু জায়গা সবসময় অপরিষ্কার থাকে। এমনকি বঙ্গবন্ধু হলের পুকুর পর্যন্ত ময়লায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে বাইরের খাবার দোকানগুলো ময়লা ফেলে অপরিষ্কার করে রাখে। যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে। এছাড়াও রাস্তার মোড়গুলতে ময়লার ডাস্টবিনের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেগুলো বর্তমানে না থাকায় ছাত্ররা রাস্তার ধারে ময়লা ফেলতে বাধ্য হচ্ছে।
মূল ফটকের সামনে, ক্যান্টিন, হলের ময়লা পরিষ্কার এর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাস্তার মোড়ে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। হলগুলো অনেক পুরনো হওয়ার কারণে নানা ধরনের বৈদুতিক সমস্যা দেখা দেয়। হলগুলোতে অগ্নি সংযোগের মত দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। হলগুলোতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখা বিশেষ প্রয়োজন।

৫। চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ২৪ ঘন্টা এম্বুলেন্স রাখার যে আশ্বাস প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছিল সেই সুবিধা প্রায় সময় ছাত্ররা পায় না। এই ব্যপারে আরও বেশি তদারকি প্রয়োজন।

Post MIddle

৬। একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চুয়েটে একটি ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক দিন যাবৎ প্রসাশনের নানা আশ্বাসের পরও টিএসসি এর কাজের কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

৭। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা দ্রুত গতির ইন্টারনেটের অভাবে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ছে। দ্রুত গতির ব্রডব্যান্ড ব্যাবস্থা করা শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের দাবি থাকলেও প্রশাসন সে ব্যপারে তৎপরতা দেখাচ্ছে না। এই সুবিধাটি অবিলম্বে চালু করা হোক।

৮। রাতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আলোকস্বল্পতা দেখা যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে সজ্জিত হওয়ার পাশাপাশি নানা প্রাণীর অভয়ারণ্য এই চুয়েট ক্যাম্পাস। তাই রাতে চলাচলের জন্য ক্যাম্পাসে যেসব জায়গায় আলোকস্বল্পতা রয়েছে সেগুলো দূর করা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। জায়গাগুলো হল- শহীদ তারেক হুদা হল ও ডঃ কুদরত এ খুদা হলের সংযোগ সড়ক, ডঃ কুদরত এ খুদা হল ও মসজিদ সংযোগ সড়ক, বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন পুকুর পাড়ের রাস্তা।

৯। বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চুয়েটে মুক্তিযুদ্ধের একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকদিনের দাবি হলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন সুনজর দিচ্ছেন না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মূল ফটকটিও অনেক পুরনো। এটিকে নতুন ভাবে তৈরি করা বিশেষ প্রয়োজন বলে শিক্ষার্থীরা মনে করে।

১০। চলমান মান্ধাতা আমলের রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি বাতিল করে মোবাইল অ্যাপনির্ভর ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে হবে।

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিরূদ্ধ দাস ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, দাবিগুলো আমাদের ছাত্রদের প্রাণের দাবি । চুয়েট প্রশাসন আমাদের এ দাবিগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন । আশা করি এ দাবিগুলো মানলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাগব হবে ।
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মো: মশিউল হক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, দাবিগুলো ভিসি স্যারকে জানানো হয়েছে । স্যার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে রাতে ক্যাম্পাসে আলোর জন্য পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত ডাস্টবিন রাখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দিয়েছেন

পছন্দের আরো পোস্ট