পাবিপ্রবির গৌরবময় অর্জনের কথা

বিজ্ঞান, প্রকৌশল আর প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব আজ সারাবিশ্বের সমাদৃত ও অনস্বীকার্য। একটি দেশকে উন্নত পর্যায়ে পৌছাতে হলে তাকে আধুনিক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হয়। আর দক্ষ জনশক্তি গড়ার অন্যতম মাধ্যম হলো বিজ্ঞান শিক্ষা। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন তার অন্যতম হলো পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় । আমরা বলতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী চিন্তা , আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে সমতা অর্জনের যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকরি পদক্ষেপের ফসল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দশ বছর হতে চলেছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই সময় কেবলই পরিকল্পনার । কিন্তু আমরা দেখতে পারছি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার লক্ষ ও উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে শিশুকাল শেষ করে কৈশোরে পা দিয়েছে। একটু বেশিই আশাবাদি হিসেবে বলতে পারি শিশু বয়সেই অনেক ক্ষেত্রে পরিপক্কতা অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে গৌরব করার মতো অনেক কিছু গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. আল-নকীব চৌধুরী মহোদয় ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারী যোগদানের পর থেকে নিরলসভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তাই মাত্র দশ বছরেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা একদিকে যেমন দেশে দক্ষ ও মেধাবী প্রকৌশলীদের অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে অন্যদিকে বিজ্ঞান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আমাদের শিক্ষকরা গবেষণা করছেন। পাবিপ্রবি বর্তমানে দেশের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। যার প্রমাণ আমরা কয়দিন আগেই দেখেছি। চলতি শিক্ষাবর্ষে একটি আসনের জন্য গড়ে ৪৫ জনকে লড়তে হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে এখানকার সম্মানিত শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারী সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান লাভের আগ্রহ থেকে। এর সাথে যুক্ত আছেন যোগ্য নেতৃত্ব তথা উপাচার্য ড. আল-নকীব চৌধুরী ও প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম মহোদয়ের কার্যকরি পদক্ষেপ। যার কারণে মাত্র দশ বছরেই পাবনার মতো অবহেলিত একটি জেলার মানুষের আশা আকাঙ্খা আর স্বপ্ন পূরণের প্রতীকে পরিণত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

আমরা দশ বছরের অর্জনগুলো নিয়ে হিসেব নিকেষ না করে যদি শুধু মাত্র চলতি বছরে অর্জন গুলো দেখি তাতে আমাদের সফলতার পাল্লা বেশ ভারিই মনে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মানদন্ড তথা নির্ণয়ক হলো তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্র। চলতি বছরের ১০ মাসে আমাদের ১২ জন শিক্ষক যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, চীন ও জাপানে গেছেন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য। তারা সেখানকার নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করবেন। সাথে সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পৌছে দিচ্ছেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় তথা সেই দেশের মানুষের কাছে।

আধুনিক একটি দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন। পর্যটন সারাবিশ্বের আলোচিত বিষয়। পর্যটন আয়ের উন্নতম মাধ্যম। পর্যটনকে উন্নত করার জন্য দরকার এই সেক্টরে দক্ষ জনবল। সেই দক্ষ জনবল গড়ার জন্য এের্কেবিদ্যালয়েই চলতি বছরে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ চালু করা হয়েছে।

চলতি বছরে সেন্টালম লাইব্রেরীতে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম চালু করা হয়েছে। এই ভার্সুয়াল শ্রেণিকক্ষ অনেক পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই। ভার্সুয়াল ক্লাসরুস স্থাপনের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-বিজ্ঞানীরা আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি পাঠদান করাতে পারবেন।

Post MIddle

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি সেল চালু হয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন কমিউনিকেশন ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। গণিত বিভাগে অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বুয়েটের মাষ্টার্সের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমস্থানসহ ১২জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক অর্জন করেছে আটজন শিক্ষার্থী।

হেকেপ প্রজেক্ট শিক্ষার গুনগত মানবৃদ্ধিতে কাজ করে চলেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতির উন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রমের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাবে। আগামী ২৪ জানুয়ারী প্রথমবারের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্ন্তজাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে রবীন্দ্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকারসহ দেশি-বিদেশি ৭০জন শিক্ষাবিদ অংশগ্রহন করবেন।

সারাবিশ্বের অফিস ব্যবস্থাপনায় পেপাললেস অফিস নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞরা জোড়েশারে আলোচনা করছেন। গুগল, অ্যামাজন,অ্যাপেলসহ নামীদামী অফিস পেপারলেস হয়েছে। আমাদের দেশেরও কিছু কর্পোরেট অফিসে নথি-কাগজ-ফাইল এর পরিমান একেবারে কমে গেছে। সব ফাইলের কাজ অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। আমাদের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়েও আমরা আর কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পাাবো সব ফাইল অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। এই লক্ষ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে অটোমেশনে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ পুরোদমে চলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বিডিরেন এর নেটওয়ার্কের কাজ সম্পন্ন হলেই আমরা একটি পেপারলেস অফিস ব্যবস্থাপনায় চলে আসবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেন তার অন্যতম উপায় হলো অফিস ব্যবস্থাপনার সবকিছু অনলাইন কেন্দ্রিক। যা আমাদের দেশকে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে পৌছে দেবে। সেটি আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তিবায়িত হবে।

আমাদের অর্জন ও গৌরবের অনেক লম্বা তালিকা রয়েছে। সকল অর্জন গৌরব আর আনন্দের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকমন্ডলি, ছাত্র-ছাত্রী,কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের ঐকন্তিক প্রচেষ্টার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একদিন সফলতার শীর্ষে পৌছে যাবে-এ বিশ্বাস আমাদের সকলের।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও শিক্ষকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের সবোর্চ্চ মানসম্মত শিক্ষা দিতে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পায় এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদেরদেরকে যোগ্য ‘পণ্য’ করে তুলতে পারে।

স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালের মধ্যে দেশ পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করবে। ফলে বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তিময় ‘পণ্য’র চাহিদা তৈরী হবে। প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সেই ডিজিটাল যুগের জন্য উপযুক্ত ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন “ভিশন ২০২১” রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. আল-নকীব চৌধুরী ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে দক্ষ জনবল গড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। #

পছন্দের আরো পোস্ট