শিক্ষাবিদ হান্নান ফিরোজের ইন্তেকাল, বিশিষ্টজনদের শোক

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক ভিসি ও ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এমএ হান্নান ফিরোজ আর নেই। গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিকসহ নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতায়  ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল সকালে তার লাশ নিজ প্রতিষ্ঠান স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে নেওয়া হলে সেখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাদ জোহর ধানমন্ডি ঈদগাহ মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মোস্তাক আহমেদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাডি বোর্ডের সদস্য,শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশ নেন। এরপর তার লাশ সিদ্ধেশ্বরী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে নেওয়া হলে সেখানেও শোকের ছায়া নামে। তার লাশ হিমাগারে রাখা হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হবে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরের বড়ইয়া গ্রামে।
Post MIddle

রাজাপুরে নামাজে জানাজা ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে ঢাকায় এনে আবার হিমঘরে রাখা হবে। তার এক মেয়ে দেশে ফিরলে আগামীকাল রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হবে। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এমএ হান্নান ফিরোজের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলা বড়ইয়া গ্রামে। তিনি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ২০০১ সালে তিনি লন্ডন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড রিসার্চ এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও কলেজ গ্রুপ থেকে মার্কেটিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে ড. হান্নান ফিরোজ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ডিগ্রি অর্জন করেন।

আজীবন পরোপকারি এই মানুষটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার অর্থায়নে দৈনিক ‘আমাদের সময়’ প্রথম প্রকাশিত হয়। তিনি অনুধালুপ্ত এস টিভির (ইউএস) চেয়ারম্যান ছিলেন, ‘বাংলাদেশ সময়’ নামে একটি পত্রিকার তিনি প্রকাশক ও সম্পাদক। এটিএন বাংলা ইউএসের যাত্রাকালে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বলা যায়, তার হাত ধরেই বিদেশে দেশি টিভি চ্যানেল দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। জনহিতৈষী ড. এমএ হান্নান ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাবেক নির্বাচিত ভিপি। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাড়াও তিনি রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ছিলেন। তিনি লেখালেখির পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সামাজিক অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের কল্যাণে অনেক অবদান রেখেছেন ড. হান্নান ফিরোজ। এ জন্য তিনি অনেকবার দেশে-বিদেশে সম্মানিত হয়েছেন।

ড. হান্নান ফিরোজের মৃত্যুতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ঝালকাটি-২ আসনের এমপি বজলুল হক হারুন, সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মনিরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বাণীতে শিল্পমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। উল্লেখ্য, হান্নান ফিরোজের দুই ভাই অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান রাজাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও শাহ আলম মন্টু বড়ইয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।

পছন্দের আরো পোস্ট