ঢাবির সাময়িক উপাচার্য হলেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আজ সোমবার এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে সই করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (শাখা-১) এর উপসচিব হাবিবুর রহমান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আফরাজুর রহমান। তিনি বলেছেন, অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এটি একটি সাময়িক নিয়োগ।

এদিকে উপাচার্য নিয়োগের ফলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনের জন্য মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেলের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে উপাচার্য নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বিশেষ সভা আহ্বানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হওয়া রিট আবেদনটি চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আদেশে আপিল বিভাগ বলেন, রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

গত ২৩ আগস্ট সেই রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই শুনানির নিষ্পত্তি হওয়ার আগে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে উপাচার্যের দায়িত্ব দিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম দফায় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য ও রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ। ওই মেয়াদ শেষে ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে আরেফিন সিদ্দিককে চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। ওই নিয়োগ অনুযায়ী তাঁর দায়িত্ব শেষ হয় গত ২৪ আগস্ট।

প্রজ্ঞাপনে যা আছে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ১৯৭৩-এর ১১ (২) ধারা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগকে নিম্নে বর্ণিত শর্তে সম্পূর্ণ সাময়িকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করেছেন।

Post MIddle

১.১. মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন।;

১.২. তিনি বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন;

১.৩. তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।

২. জনস্বার্থে জারীকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনে তিন সদস্যের প্যানেল মনোনীত করতে গত ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ সভা ডাকা হয়। ওই বিশেষ সভার জন্য গত ১৬ জুলাই সিনেট সদস্যদের চিঠি পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। গত ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ সভায় তিনজনের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হয়। প্যানেলের তিন সদস্য হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটেশনাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আজিজ। ওই তিনজনের একজনকে উপাচার্য এবং বাকি দুজনকে উপ-উপাচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল।

যে সিনেট অধিবেশনে এই উপাচার্য প্যানেল মনোনীত করা হয়, সেই সিনেটের বিশেষ সভার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিটের ওপর গত ২৪ জুলাই শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুলাই চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এই আদেশের পর সিনেট অধিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পছন্দের আরো পোস্ট