বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রবীণ বান্ধব দেশ

২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম প্রবীণ বান্ধব দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে বেশ কয়েকজন সমাজবান্ধব সাহসী ব্যক্তি ।বিজ্ঞান বলে, এই পৃথিবীর অস্তিত্ব একদিন ছিলোনা । বিগব্যাং এর মতে, হঠাৎ করেই এর সৃষ্টি হয়েছে । আপনার জন্মটা দশ মাস দশদিন পরে হলেও হঠাৎ করেই পৃথিবীর বুকে এসে পড়েছেন । এই পৃথিবীর অনেক কিছুই এখন ব্লাকহোলের পথে হারিয়ে যাচ্ছে । হয়তো পুরো পৃথিবীটাই একদিন ব্লাকহোল হজম করে ফেলবে । হজম হবেন আপনিও । এর প্রমান আপনার দাদা-দাদি, নানা নানি, সহ আপনজনদের মৃত্যু আপনি নিজে দেখেছেন । সুতরাং আপনি আস্তিক হোন অথবা নাস্তিক । আপনার যে মৃত্যুু হবেই এটা নিশ্চিত । তাই কতটা সুন্দরভাবে নিজের জীবনটাকে আপনি সাজাচ্ছেন এটা একটা গুরত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে ।

শৈশব ,কৈশোর ,যৌবন ,বার্ধক্য এই নিয়েই আমাদের মানব জীবন। পৃথিবী ছেড়ে যেতে কারোরই ইচ্ছে হয় না । আপনাকে যদি বলা হয় আপনার চুল তো পেকে যাচ্ছে অথবা আপনি তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, স্বভাবতই আপনার সহজ মন এমন মন্তব্য শুনতে প্রস্তুত না । আর মেয়েদের কাছে বার্ধক্যে শব্দটি যেন বেশ বেমানান । বয়স কত হলো আপা, এমন প্রশ্ন করা যেন এক ধরনের অপরাধ। এ দিক থেকে বলা যায় ,মনের দিক থেকে নারীর চেয়ে পুরুষই আগে বুড়ো হয়। এ কারণেই বোধ হয় এদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর গড় আয়ু বেশি।

বার্ধক্য মানব জীবনের একটি চক্র। তাকে মেনে নেয়াই শুভ বুদ্ধির লক্ষণ। বার্ধক্যই মানব জীবনের শেষ ধাপ ,আপনি যদি বার্ধক্যকে অবহেলা করেন , বার্ধক্যে যেতে না চান, তবে তো বার্ধক্যের আগেই আপনি বুড়ো হয়ে যাবেন যাবেন। আর যদি বেশি দিন বাঁচতে চান, তবে বার্ধক্যকে অবহেলা না কওে, তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। এটা কোন পরামর্শ নয়, বাস্তবতাকে মেনে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ ।

জাতিসংঘের সংজ্ঞানুযায়ী, ৬০বছর বয়সী এবং তার উর্ধ্বের ব্যক্তিকে প্রবীণ বলা হয়। জাতিসংঘের এক হিসাবে দেখা যায়, বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যা ৭০ কোটি।বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ প্রবীণ। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি পাঁচ জনে একজন মানুষ প্রবীণ হবেন। আর আমরা বেঁচে থাকলে বার্ধক্যকে অবশ্যই বরণ করতে হবে।বর্তমানে তরুণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও, আর মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে প্রবীণদের মোট সংখ্যা অপ্রাপ্ত বযয়স্কদের ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশে ২০৩০ সালের আগেই প্রবীণ জনগোষ্ঠির বাংলাদেশে সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে, যার একটি বিশাল প্রভাব পড়বে সমাজের ওপর।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এখন থেকেই আমাদের সকল নবীনদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ । এদিকটি মাথায় রেখে সকল নবীনের আওয়াজ তোলা উচিত প্রবীণদের অধিকার নিয়ে। গবেষণা বাড়ানোর দিখে নজর দেয়া এখন সময়ের দাবি।

প্রবীণ বয়সে মানুষ যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তার মধ্যে অন্যতম ব্যাপার হচ্ছে অর্থনৈতিক দিকটি । এ দিক থেকে বয়স্ক মানুষেরা দূর্বল হয়ে পড়েন ,স্বাস্থ্যহানি ঘটে ,পরিবার ও সমাজের মানুষের কাছ থেকে অবহেলার শিকার হন।

Post MIddle

নবীন বয়স থেকেই আমরা যদি আয়ের কিছু অংশ প্রবীণ জীবনের জন্য সঞ্চয় করি তবে পরবর্তীতে অর্থনৈতিক সমস্যামুক্ত থাকতে পারি । প্রবীণ মানুষদের যখন আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন পরিবার তাকে অবহেলা শুরু করে। অবহেলার মাত্রাগুলো ভিন্ন হয় মাত্র। যেমন সম্মান না করা । ছোট ছোট অনুরোধগুলোকে অবজ্ঞা করা । এমনকি বয়স্কদের বড় প্রয়োজনগুলোকেও আমরা গুরত্ব দেই না । এটি বাস্তব এবং নির্মম সত্য।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এখন থেকেই আমাদের সকল নবীনদের প্রস্তুতি নেয়া দরকার । যে সমাজ আমাদের বড় করে তুলছে সে সমাজের প্রতিও রয়েছে আমাদের বেশ কিছু দায়িত্ব ।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে “পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিল-২০১৩” পাশ হয়েছে। আইন করে কখনো শ্রদ্ধা আদায় সম্ভব নয়। এটি একটি মানবিক বিষয়। এখানে আমাদের মানবিকতা, বিবেকবোধকে জাগ্রত করে তুলতে হবে। তবুও এই আইন পাশ, প্রবীণদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সন্মান প্রদর্শনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

প্রবীণরা অভিজ্ঞতার সম্পদ, আমাদের কাছে উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে চলমান ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক। তবে আশার বার্তা এই যে , আমাদের দেশে এখনও প্রবীণদের নবীনরা সম্মান করে, সালাম দেয় ,বাসে সিট ছেড়ে দিয়ে বসতে দেয় , অধিকার নিয়ে কথা বলতে কাজ করছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । সমাজ পরিবর্তনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীন এবং প্রবীনের অবদান অনস্বীকার্য।

ভবিষ্যতে ভালো থাকার জন্য ,বাংলাদেশকে প্রবীণ বান্ধব দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নবীন প্রবীণ এক হয়ে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়। এখন থেকে সকল নবীণ যদি প্রস্তুতি নেয়, তবে ২০৫০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম প্রবীণ বান্ধব দেশ।

জাতীয় সংসদেও প্রবীণদের প্রায় ৭৫ ভাগ। সম্মানজনক পদবীর কারণে তারা হয়তো এখনো সবার কাছে সম্মান পান । তবে যাদের কোন পদবী নেই, তবে বয়সে একদিনের জন্য হলেও বড়ে, আমাদের অবশ্যই উচিৎ হবে তাদের সম্মান করা । নিজের সক্ষমতা ও ক্ষমতার সীমানার মধ্যে, সমাজে বড়দের বিপদ আপদে এগিয়ে আসা একান্ত কর্তব্য । বড়দের যদি অবজ্ঞা করি, আমরা যখন বড় হবো, ছোটরাও আমাদের নিশ্চিত অবজ্ঞা করবে, করবেই । কারণ প্রকৃতির একটা নিয়ম আছে ।

[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা প্যারেন্টস এজিং ফাউন্ডেশন]

পছন্দের আরো পোস্ট