অভিভাবকহীন মাভাবিপ্রবি

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিনের চার বছর মেয়াদ শেষ হয়। এর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ শুন্য রয়েছে। এদিকে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারের পদ কয়েক বছর যাবৎ শুন্য থাকায় উপাচার্যর অবর্তমানে তার দায়িত্ব পালনের কেউ নেই। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির চেইন অব কমান্ড সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়াও ১৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ সিরাজুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্পূর্ণ রূপে অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়টি।

উপাচার্য নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় পরীক্ষার ফল প্রকাশ, মূল সনদপত্র উত্তোলন, অর্থ সংক্রান্ত অনুমোদন, একাডেমিক সভা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বিদেশ গমন, বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছেন শিক্ষা ও গবেষণার কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য আবেদন করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য গত ৫মে বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভের সময়ে শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ ও অতিথি ভবনে ভাংচুরের ঘটনায় শিক্ষকরা সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে। উপাচার্য না থাকায় যার এখনো কোন সুরাহা না হওয়ায় শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যাননি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শেষ হলেও ক্যাম্পাস তার প্রাণ ফিরে পায়নি। শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন ও ভিসি না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এখনো ক্যাম্পাসে আসেনি।

শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপাচার্যর সাক্ষর ব্যতীত পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না এটা তো শিক্ষকদের জানা ছিল। তবে কেন উপাচার্য চলে যাওয়ার পূর্বে শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেননি? তাছাড়া এদের অনেকেই দেশের বাইরে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিনই পরীক্ষার ফলপ্রকাশ ও মূল সনদের জন্য এসে ফিরে যাচ্ছেন।

Post MIddle

কতিপয় শিক্ষার্থী আরো জানান, ২৮ জুলাই এর মধ্যে মূল সনদ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা প্রদানে ব্যার্থ হলে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে। এই আশঙ্কায় প্রত্যেকেই তারা প্রচন্ড হতাশায় ভুগছেন, এমনকি কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।

এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রায় এক বছরের সেশনজটে পড়েছি। এমতাবস্থায় অতিদ্রুত পরীক্ষা যদি না শুরু হয় তবে নিশ্চিত ভাবেই আবারও সেশনজটে পড়তে যাচ্ছি। এতগুলো শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানান শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, উপাচার্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই মাস যাবৎ উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্থগিত আছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা যাচ্ছেনা এবং পরীক্ষা নেয়াও যাচ্ছেনা।

অতিদ্রুত যদি উপাচার্য নিয়োগ না হয় তরে আমরা কোন ভাবেই সেশনজট এড়াতে পারবো না। আমরা মহামান্য আচার্যর কাছে দ্রুত একজন উপাচার্য নিয়োগ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। তারা আরও বলেন, গত ১১জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংকট তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র প্রেরণ করেছি।

উল্লেখ্য, ১২জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্সও করেছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, উপাচার্য ও  উপ-উপাচার্য এই গুরুত্বপূর্ণ পদ দুটি নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি)।

পছন্দের আরো পোস্ট