পাবলিকিয়ান টিউশন শ্রমিকদের সংগ্রামের গল্প

প্রতি রাতে যখন টিউশনি শেষে শহর থেকে অটোতে করে হলে ফিরে আসি, তখন রাস্তায় অটোর সামনে হাত উঁচু করে সিগন্যাল দেওয়া পরিচিত মানুষগুলোর সবার হাতে থাকে চাল, ডাল, পিয়াজ, মরিচ ইত্যাদি কাঁচাবাজার। সবগুলো একেকটা পাকা রাঁধুনি। বলছি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররুপি টিউশন শ্রমিকদের কথা।

ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার এখনও অনেক বাকী। সেই ৯ তারিখে ক্যাম্পাস খুলবে। কিন্তু টিউশনি তো শুরু করতে হবে ১ তারিখ থেকে, নাহলে টাকাটাও যে পরবর্তী মাসে দেরি করে পেতে হবে। কোনমতে চুলা জ্বালিয়ে তেল নুন কমবেশি দিয়ে পেট ভরার মত কিছু একটা রান্না করে খেয়ে আরামের ঘুম। তারপর আবার পরবর্তী দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।

হলে রয়েছে তার মতই অল্প কয়েকজন শ্রমিক, পুরো ক্যাম্পাস নিশ্চুপ, রাতের বেলায় থমথমে পরিবেশ, কোথাও কেউ নেই। হলের ডাইনিং বন্ধ। যারা হলে রান্নাবান্নার কাজ করে, তাদেরও ঈদের ছুটি শেষ হয়নি এখনও। কিন্তু টিউশন শ্রমিকদের সংগ্রাম শুরু ঈদের তিনদিন পর থেকে। ঈদের বন্ধটাও শুরু হয়েছিল ঈদের অল্প কয়েকদিন আগে থেকে। যখন বন্ধুরা সবাই ফেইসবুকে ট্রাভেলিং টু স্ট্যাটাস দিয়ে বাসায় রওনা দিত, আর আমি তখন দিন গুনতাম, এইতো আর কয়েকটা দিন। নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম এই বলে যে, ঈদে এত্ত আগে বাড়ি যাবার মধ্যে কোন সার্থকতা নেই।

Post MIddle

এটা শুধু গোপালগঞ্জের ক্যাম্পাসের চিত্র নয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিচ্ছবি এটি। কারণ এখানে যে মধ্যবিত্ত আর গরীব মানুষের ছেলেমেয়েরা বেশি পড়াশুনা করে।

শত কষ্ট আর সংগ্রামের মাঝেও এক বুক স্বপ্ন তাদের সামনে এগিয়ে যাবার শক্তি যোগায়। প্রেরণা যোগায় তাদের ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠিত বড় ভাই ও শিক্ষকদের জীবনের গল্পগুলো। কারণ তারাও যে একদিন আমার মত এইভাবে দিন কাটিয়েছে। আজ তারা প্রতিষ্ঠিত, আমিও একদিন তাদের মত হব। রাত শেষে ভোর আসবেই।

শুধুমাত্র এই সামান্য ভরসাটুকু আপন করে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলে পাবলিকিয়ানরা।

মোঃ রেজোয়ান হোসেন,সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পছন্দের আরো পোস্ট