রুমডেট

মেয়েটি ঘন্টা খানেক আগে প্রেমের দাম দিতে রুমডেট করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরছে। অপর দিকে ছেলেটি বুক টান করে চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে তার রুমডেট এর বিবরন দিয়ে যাচ্ছে। এক বন্ধু বলে উঠলো “দোস্ত মধু কি একাই খাবি? আমাগো দিবি না”

– কি কস দিমুনা। শায়লার ভিডিও বানাইছি, আরেকবার ওরে পটিয়ে রুমডেট এ আনবো তারপর সবাই মিলে খাবো, যদি রাজী না হয়, তাহলে ব্ল্যাকমেইল করবো।
— তোরে তো বলদ মনে করছিলাম, কিন্তু তুইতো সেই দাচুমাল রে।

এমনি রংগমঞ্চের মেলা বসেছে বন্ধুদের আড্ডায়, কারো সতীত্ব যায়, কেউ ভোগ করার প্ল্যানিং এ ব্যস্ত। কয়েকদিন পরেই মেয়েটির কাছে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধুমকি আসতে লাগলো। শুধু তার বয়ফ্রেন্ড না, তার বন্ধুরাও তাকে বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে লাগলো। সেদিনের সেই ভিডিও ফুটেজ ব্লুটুথ, শেয়ারইট এর মাধ্যমে তার বন্ধুরা কৌশলে নিয়ে, মেয়েকে ফেসবুকে হোয়াটসাপ এ সেক্সের আবেদন জানায়। রাজী না হলেই, ইউটিব, ফেসবুক, চটি ব্লগে ছড়িয়ে দেবার হুমকি।

মেয়েটি আমাকে শেষ যেদিন ম্যাসেজ করেছিলো, আমি কোন কারনে তার ম্যাসেজের রিপ্লে দিতে পারিনি। অনেকের ধারনা আমার লেখা জীবন বদলে দিতে পারে। কিন্তু আমার নিজের জীবন নিয়েই বড্ড দোটানায় থাকি, এমতাবস্থায় কার জীবন আমি পালটাবো। আমি তো তাই লিখি যা আমি দেখি, যা শুনি, যা পর্যবেক্ষন করি। ১ সপ্তাহ সিংগাপুর ভ্রমনের মধ্যে আমি ফেসবুকে আসিনি। তার ম্যাসেজটি ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট বক্সে জমা ছিলো। যতদিনে তার ম্যাসেজ দেখলাম, ততদিনে তার আইডি রিমেম্বেরিং অবস্থায় রয়েছে। তার মানে সে আর এই পৃথিবীতে বেচে নেই।

বড্ড খারাপ লাগছিলো, কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা আমার। আমি তার প্রোফাইল ঘুরতে লাগলাম, যতটুকু তার স্ট্যাটাস পড়েছি তাতে বুঝতে বাকি নেই, মেয়েটি কতটা ভালোবাসতো ছেলেটিকে। কিন্তু ভালোবাসার মুল্য তার জীবন দিয়েই দিতে হলো।

পাশাপাশি আমি কিছু মেয়ের আইডি দেখছিলাম। একসময় ফেসবুক পর্ণস্টার নামে যে জ্যাকলিন মিথিলা নামক মেয়েটি উদাম বুক দেখিয়ে ছেলেদের উত্তেজিত করতো, সেও এক সময় আত্মহত্যা করে। সানি লিওন, মিয়া খলিফা হতে চেয়েও সে আনন্দ ভোগ করতে পারেনি, এই জ্যাকলিন।

আজ মরলে কাল যখন দুদিন হয়, সেই মানুষটি শুধুমাত্র ক্ষনিক সুখের জন্য কতটা নিচে নামতে পারে তা আমার জানা নেই।

আমাদের সমাজে দুই ধরনের ধর্ষক থাকে, “১। অসামাজিক ধর্ষক, ২। সামাজিক ধর্ষক।”

তাদের ধর্ষন করার কৌশল সম্পুর্ন আলাদা, অসামাজিক ধর্ষক, যে জোর করে কিডন্যাপ করে, চার পাঁচজন মিলে মেয়েটিকে কামড়িয়ে কামড়িয়ে খাবে। আর সামাজিক ধর্ষক প্রেমের নাম নিয়ে, বন্ধুত্বের নাম নিয়ে, কিংবা স্বামীর নাম নিয়ে ধর্ষন করবে।

Post MIddle

যে মেয়েটি প্রতি রাতে নিজ বিছানায় স্বামীর কাছে ধর্ষন হয়, তাকে আমরা পবিত্র প্রেম বলি, স্বামী স্ত্রীর প্রেম। কিন্তু কোন মেয়ে যদি “নো” বলে তাহলে বুঝে নিতে হবে “নো মিনস নো” তার কথার তোয়াক্কা না করে কিছু করা মানেই ধর্ষন।

যে মেয়েটি বিশ্বাস করে আপনার সাথে রুমডেট যেতে পারে, সে আর যাই হোক আপনার সাথে প্রতারনা করতে চায়নি। ভালোবেসেছিলো বলেই গিয়েছিলো। তাকে ধোকা দেওয়ার অধিকার আপনার নেই।

যে মেয়েটি মা বাবা ছেড়ে অজানা অচেনা এক পরিবারে এসে সেই পরিবারকে আপন করে নেয়, তার সাথে জোরজবরদস্তি করা আর যাই হোক একজন স্বামীর ভালোবাসা হতে পারেনা।

আমাদের শরীরের যে যৌনসংগম নামক এক নেশা রয়েছে, তা নিভাতে কোন মেয়ের জীবন কেড়ে নিতে হয়না। আপনি দৌলতদিয়া, জামালপুর, টাংগাইল পতিতা নগরে গেলে কয়েক’শ টাকাতেই নিভিয়ে আসতে পারেন। বেশিরভাগ যৌনকর্মী তাদের পেটের দায়ে দেহ বিক্রি করে। তাদের পেশা যতই নিম্নতম হোক না কেন, আপনার পুরুষত্বের খানিকসুখ মেটানোর জন্য যথেষ্ট। এতে তাদের পেটও বাঁঁচবে আর আপনার কারনে কারো জীবন নষ্ট হবেনা।

মেয়েটির শেষ স্ট্যাটাস ছিলো, কেউ যেন কোনদিন ভালো না বাসে। যে পৃথিবীটি শুধু টিকেই আছে ভালোবাসার উপর সেও আজ ঘৃনা নিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো।

মেয়ে এবং ছেলে দুজনকেই বলছি, যৌনসুখ ঘড়ি ধরে করলে এক ঘন্টা। এই এক ঘন্টার চক্করে পুরো জীবনের সুখ লুটিয়ে আসবেন না। আজকাল তো সেক্স টয়, আর শ্যাম্পুর দামটাও কমে গেছে, আর পতিতা নগরের দামতো হোটেলে গিয়ে আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাবার সম খরচ। তবে কেন আজো আমাদের মাঝে এই পশুত্ব জেগে থাকবে।

উপদেশ নয়, সত্যি বলছি আপনি যেমন করেছেন, আপনার সাথেই তাই হবে। হয়ত আপনার মেয়ের সাথে, তখন আমার এই স্ট্যাটাস কপি করে নিজের ওয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েন আর বলিয়েন ভাই জাপানিজ সেক্স টয়’স গুলো কিনে নিলেও পারতি আমার মেয়ের জীবন নষ্ট না করে।

মাথায় হাত দিয়ে নিজ জন্মদেওয়া মেয়ের যখন এভোরশন করাবেন গোপনে। তখন নিজের কপালেই হাত দিয়ে বলবেন্ শায়লার জীবন নিয়ে না খেললে আমার মেয়ে, স্ত্রীর সাথে এমন হতোনা।

কেইবা জানে, আপনার মেয়েও এমন ব্যাকমেইলিং এর শিকার হয়ে শায়লার মত গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নেয়। আর আপনি বসে তামাশা দেখবেন আর বলবেন এই দেশে কোনদিন বিচার হবে না। যখন আপনার বিচার কেউ করতে পারেনি, তখন অন্যের বিচারের দায় দেশের উপর না চাপালেই ভালো থাকবেন।

পছন্দের আরো পোস্ট