লাল সিগনাল

বন্ধুর হাক ডাকে দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘুম ভাঙলো। হুড়মুড়িয়ে উঠে তোয়ালে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। উপায়ন্তর না পেয়ে ট্রাওজার হাতে নিয়েই বাথরুমে ঢুকতে হলো। অন্যদিন গুলো যে খুব বেশি গোছালো হয় তা বলা কঠিন। তবে আজকের দিনটা যে এমন হবে ভাবিনি। অনেক পরিকল্পনা নিয়ে ঘুমোতে গিয়ে শেষমেষ তোয়ালে ছাড়া গোসল করতে হলো। পাঁচ মিনিটে চড়–ই পাখির মতো গোসল সেরে আধো ভেঁজা শরীরে চাপিয়ে দিলাম টি-শার্ট আর জিন্স প্যান্ট। হাতে এক খন্ড রুটি নিয়ে চিবোতে চিবোতে বের হলাম গটগটিয়ে। রুটিতে কামড় দিয়ে নিজেকে মমিন পাগল মনে হলো। হঠাৎ করেই মোমিন পাগলের কথা মাথায় আসলো। রুটিকে ধন্যবাদ দিলাম এই ভেবে যে, আমি এত সিরিয়াস ভুলো মনের মানুষ হয়েও রুটির কল্যাণে মোমিন পাগলকে হঠাৎ মাথায় আনতে পেরেছি। মোমিনের পরিচয় তো আর কেউ জানে না।

মোমিন আমার গ্রামের একটা ছেলে। অটিস্টিক হয়ে জন্ম নিয়েও সবকিছু বেশ ভালোই বুঝতে পারে সে। কথা বলা একটু ন্যারাব্যারা হলেও বুদ্ধিতে এক্কেবারে পাঁকা। রুটির সাথে মোমিনের গল্প কেন বললাম এঁটা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে? মোমিনকে দেখতাম সারাদিন কোমরে একটা পলিথিনের প্যাকেট নিয়ে ঘুরতো। প্যাকেটের ভেতরে আর কিছু না থাকলেও পাওরুটি থাকবেই। এটা মোমিনের আজীবনের পছন্দের খাবার। মাস খানেক আগে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। শৈশবের বন্ধুদের সাথে দোকানের মাচাই বসেছিলাম। একটু পরে মোমিন আসলো। আমি বললাম কি মোমিন সাহেব ভাল তো?

মুচকি হেসে বললো- হ্যাঁ।

ওর হাসির কল্যাণে দুপাটি পাথর বেষ্টিত হলদে দাঁতের বাগান দেখলাম। এলোমেলো দাতের মাঝে তখনো বিস্কুটের আটা লেগে রয়েছে। এরপর আমরা আবার গল্প করতে লাগলাম।

মোমিন বসে রইলো। আমাদের গল্প শুনে মাঝে মাঝে হাসে আর হু, হ্যা করে গল্পে তাল মিলাই মোমিন।

বন্ধু জাকির মোমিনকে বললো,,

মোমিন চাচা ভাল তো? জেমসের একটা গান হয়ে যাক! মোমিন চুপ করে রইল।

তারপর আমিও মোমিনকে বললাম, ভাই একটা গান হয়ে যাক না! আমি তো গ্রামে থাকিম না। তোমার গান শুনে ঢাকায় গেলে ভাল লাগবে।

আমার কথা শুনে মোমিন আচমকা দাড়িয়ে গেল।

হাতে একটা লাঠি নিয়ে গিটার ধরার মত স্টাইল করে গুং গ্যাং, ভুং ভ্যাং করে কি যে বললো চিল্লায়ে চিল্লায়ে আমি তার কিছুই বুঝলাম না।

গান শেষ হতে না হতেই মোমিন ইশারা করলো।

হাতের আঙুলের ডগা দেখে বুঝলাম ও পাউরুটি খাবে।

দোকানদারকে বললাম পাউরুটি দিতে।

পাউরুটি নিয়ে মোমিন খাওয়া শুরু করলো। এভাবে প্রতিদিন পাউরুটিতে মেতে আছে মোমিন।

মনের সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ পা পড়লো পঁচা কলার উপর।

সম্বিত ফিরে দেখলাম, মোমিনের পাউরুটি খাওয়া দেখতে দেখতে আমার হাতের পাউরুটি রয়েই গেছে। অবশ্য শহরে এই পাউরুটি ছুরি দিয়ে কেটে কেটে নাম দিয়েছে ব্রেড।

আমার ব্রেড শেষ হলো…

বাসের জন্য দাড়িয়ে রইলাম।

শহরের রাস্তায়, রিস্কায় মানুষের ছড়াছড়ি। বাসে লেগুনায় উপচে পড়া ভিড়। সবাই ছুটছে যে যার মতো। আমি দাড়িয়ে তখনো ভাবছি চাকতিটা কনফার্ম হবে কিনা?

মাসের তো শেষ প্রায়। পকেটে হাহাকার চলছে। বদোভ্যাসের ব্র্যান্ড ও নিচে নেমে গেছে। পকেটের কথা চিন্তা করে দাড়িয়ে রইলাম সরকারি গাড়ির আশায়। লাল সবুজের রঙে ঘেরা দ্বিতল বাস। মোহাম্মদপুর থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত এই দ্বিতল বাসের রুট। সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দেয়ার মতো বেশ কয়েকটা সিগনালের সাগর পাড়ি দিয়ে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌছতে হয়। সমুদ্রে নাবিকে সাথে এই দ্বিতল গাড়ির নাবিকের পার্থক্য এতটুকু যে, এই নাবিক খাঁচার মধ্যে থাকে। পুরো বাসের সবার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় তাকে। কারণ নির্লজ্জ, বেহায়া এই নাবিকেরা প্রায় উত্তম মাধ্যমের শিকার হন। যদি কেউ প্রশ্ন করে, পৃথিবীর সব থেকে শান্তিপূর্ণ, ত্যাগী ও সংবেদনশীল যান কোনটি?red signal

এক কথায় বলে দিবেন—— বাংলাদেশের বিআরটিসি সার্ভিসের যানবাহন গুলো।

যাইহোক, এসব ভাবতে ভাবতে বাস আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি হাত নাড়তে ভুলে গেলেও বাস ঠিকই থেমে গেল।

এই বাসের একটা গুন আছে। রাস্তার পাশে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলেই বাস থামিয়ে তাকে বাসে উঠানোর জন্য তেলাতেলি শুরু করে। এমনকি অন্য বাসের হেলপার, সুপার ভাইজার, ট্রাফিক পুলিশকেও এরা টেনে গাড়িতে উঠাতে পারলে বাঁচে। তো আমি বাসে উঠে একেবারে দুই তলার সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। এই চেয়ারটা আমার খুব ভাল লাগে। গাড়ি চলার সময় বা থেমে থাকার সময় রাস্তার সবাইকে খুব ভাল ভাবে দেখা যায়। নিজেকে একটু উচু উচু মনে হয়। বাস্তবে ৫ ফুট সাড়ে ৭ ইঞ্চি হলেও দ্বিতল বাসের দুই তলায় বসে অন্যদের থেকে সাত ফুট উচু ভাবা কম কিসের? হোক না সেই ভাবনা টা দুই কিংবা আড়াই ঘন্টার।

বসেই আছি, আশেপাশের সিটে কয়েকজন ছেলে আর মেয়ে বসে আছে। স্কুলের ইউনিফর্ম পরা। কয়েকজনের হাতে আইসক্রিম। দুপুর একটার সময় স্কুল থেকে বাসায় ফেরার কথা না এসব জ্ঞানতাপসদের। পরে মনে হলো, বড় শহরের বড়লোকের পোলাপানের ব্যাপার। ওসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমার মাথা কামানোর দরকার নেই।

আমি একটা বই বের করে সিটে বসে রইলাম।

বইটার নাম মুখবই।

কোন এক কালার বøাইন্ড মাস্টার এই বই তৈরী করে বাতাসে ছেড়ে দিয়েছে। তারপর থেকেই মানুষ সময়ে অসময়ে এই বইয়ে পড়াশুনা করে। এখানে পড়াশুনাটা অন্যরকম। প্রেমে পড়া, গালি পাড়া, ধোকাই পড়া, আরো কত রকম পড়া হয় এখানে। আমিও যে পড়িনা তা নয়। আমি নিয়মিত এই বই পড়ি। এর জন্য খরচা বাবদ প্রতিমাসে আমার চারশ পচাত্তর টাকা লাগে। মুখবই পড়ছি ঠিকই তবে কান আমার পেছনের ওই আড্ডারত ছেলেমেয়েদের কাছে। ক্লাস-নাইন টেনে পড়া অবস্থায় প্রেম করার একটা মজা আছে। গালে মুখে নতুন গজানো গোঁফ দাড়ির প্রস্ফুটিত ডগা বেশ শোভা বাড়ায় ছেলেদের মুখে। অনেকে আবার কেটে কুটে মাকুন্দু সাঁজে। তা যে যা পারে সাজুক। ওদের আড্ডা চলছে আর চলছে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে মুখে লাগাম লাগানোর কোন মানে হয়না। তবে এখনকার ছেলে মেয়েরা শুধু মুখের লাগামই খুলে দেয় না। শুনেছি সবকিছুর লাগামই খুলে দেয়। এরা এখন আর আগামীকাল আর পরশু নিয়ে ভাবে না।

Post MIddle

ওরা বাস্তববাদী ওরা আজ এখন এই বর্তমান নিয়েই ভাবে। এক মিনিট আগের কথা ওরা মনে রাখে না, এক মিনিট পরের অবস্থা কেমন হতে পারে তা ওরা ভাবতে চাই না। ওরা উপভোগের জগতে ডানাকাটা পরী, ওরা সুখের রাজ্যের সুলতান সুলেমান। বড়লোক বাবার বেহিসাবি টাকায় ওরা স্কুল ফাঁকি দিতে শিখেছে। ওরা জানে গা ঘামিয়ে কষ্ট করে না পড়ে বাবাকে বলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা সার্টিফিকেট কিনে নিলেই হবে। আর বাবা যদি দু এক টাকা ঘুষ টুস খায়, তবে ভীন দেশে দেব পাড়ি। এসব ভেবেই এই শহরের ছেলে মেয়েরা রাস্তায় বের হয় স্কুল ফাঁকি দিয়ে। এসব ভাবছি আর নিজের উপর আনস্মার্টের খেতাবটা ভাল করে বসিয়ে নিচ্ছি। গাইয়্যা, খ্যাত হিসেবে নিজেকে ভাবতে বেশ ভালই লাগছে। আমরা কয়েকজন তখন সামনের সারির সিটগুলোতে বসা। দু একজনের সাথে একটু আধটু কথা হচ্ছে আমার। এরপর আচমকা এক সমবয়সী ছেলে সিটে না বসে বাসের সামনে গিয়ে আমাদের দিকে মুখ করে দাড়ালেন। কোমরে একটা কালো ব্যাগ ঝুলছে। হাতে একটা ছোট বই। ভাবলাম বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা সর্বোচ্চ পনের হবে। একটা ব্যাপার কি জানেন? আমি সব কিছু নিয়েই বেশি বেশি ভাবি। এটা হয়তো আমার সমস্যা। কি জানি?

বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা ভাবতে ভাবতে আগন্তুক ছেলেটি বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা জানিয়ে দিলেন।

জানলাম ওই বইয়ে ১৭টি পৃষ্ঠা আছে।

ওটা আসলে বই না। একটা ছবির এ্যালবাম। ওই ছবির উপর এক ধরণের ঝক্কর মক্কর কার্বন পেপার রেখে হালকা নাড়া চাড়া করলে ছবি গুলোর প্রাণীরা নড়াচড়া শুরু করে দিচ্ছে। ছেলেটি হকারি করে ওই ম্যাজিক এ্যালবাম বিক্রি করে বাসে বাসে। পোশাক পরিচ্ছদ, বাচনভঙ্গি দেখে মনে হলো ছেলেটি শিক্ষিত। আমি চুপ করে থাকলাম। ছেলেটির উপস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই ওই এ্যালবাম কিনলেন। বেচাকেনা শেষে ছেলেটি আমার পাশেই দাড়ালেন। আমি আড় চোখে তাকিয়ে একটু হেসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম..

 

ভাই কি করেন?

ছেলেটির সফেদ দাঁত বের করে বললো,,, পড়াশুনা করি স্যার।

আমি বললাম স্যার বইলেন না। ভাই বলেন। কিসে পড়েন?

ছেলেটি বললো, স্যার বললে তো আর আমি ছোট হচ্ছি না, বা আপনিও বড় হচ্ছে না। স্যার বলে সম্বোধন করাটা সম্মানের। তবে ভাই বলার সুযোগটা কেউ ছাড়তে চাইলেও আমি ছাড়ছি না ভাই।

ছেলেটির এরকম বুদ্ধিদীপ্ত কথা খুব ভাল লাগলো আমার। পাশের সিটে বসতে বললাম।

ছেলেটি বলে, না ভাই থ্যাংকুউ। সিটে বসলে ভাড়া দেয়া লাগবে। হকার হিসেবে উটেছি। যাত্রীদের অধিকার নষ্ট করা উচিত নয়।

আবারো মুগ্ধ হলাম। বললাম, কিসে পড়েন বললেন না তো।

সে জবাব দেয়, তিতুমীর কলেজে অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষ।

আমি বললাম, তো এই কাজ করেন কেন? টিউশনি করাতে পারেন না? বা অন্য কোন পার্ট টাইম জব?

ছেলেটি বললো, টিউশনি করানো খুব কঠিন। নিজের নৈতিকতা ঠিক রেখে টিউশনি করানো এখন হাতে আগুন রাখার মত যন্ত্রণার। আর পার্ট টাইম জব করি একটা। বেলা আড়াইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। আজ ডে অফ।

প্রতিদিন রাত সাড়ে নয়টা থেকে  রাত বারোটা পর্যন্ত হকারি করে ব্রাশ, বই, খেলনা বিক্রি করি। পার্ট টাইম জবের টাকার পুরোটা গ্রামে বাবা মায়ের জন্য পাঠাতে হয়। বাবা মাকে দেখার তো কেউ নেই। হকারি করে নিজের পড়াশুনার খরচ মেটাই। ছেলেটির কথা শুনে নিজের উপর খুব ঘৃণা হলো। আমরা কত ভাল ভাবে সুখে শান্তিতে পড়াশুনা করেও বাবা মাকে সুখ দেয়ার কথা মনে করতে পারিনা। আর এই ছেলে সেটি ইতিমধ্যে করছে।

নাম জিজ্ঞেস করলাম..

বললো সাজেদুর রহমান আমার নাম। কলেজের আইডি কার্ডটাও মেলে ধরলো আমার কাছে।

ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত করেন কিনা জানতে চাইলে সাজেদুর বললো.

দুই একটা ক্লাস থাকে। ক্লাস শেষ করেই চাকরিতে যাই। তারপর রাতে হকারি করে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে সাড়ে আট টা পর্যন্ত পড়াশুনা করি। তারপর তৈরি হয়ে কলেজে যাই। সপ্তাহে চারদিন টিউশনি করতে হয়। ওই চারদিন খুব কষ্ট হয়। এভাবে অনর্গল নিজের কথা বলে গেল সাজেদুর। হঠাৎ আমার আর সাজেদুরের আলাপ থেমে গেল পেছনে চিল্লানীর আওয়াজ শুনে। পেছনে তাকালাম। কি কান্ড! একটা মাস্তান টাইপের ছেলে আরেকটা ছেলেকে ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। একটু আগে  যারা আড্ডারত ছিল ওদের একজনকে ঘুষি দিয়েছে এই ছেলেটা। একজন ঘুষি খাওয়ার সাথে সাথে বাকিরা সব নেমে পালিয়েছে। ঘুষি খাওয়া ছেলেটাও পালিয়েছে। বসে আছে একটা মেয়ে ভয়ে জড়সড়। যুবুুথুবু হয়ে বসে আছে। এরপর আগ্রাসী ওই ছেলেটা মেয়েটাকে বললো.. ল. বাড়িতে লা. আইজ তর খবর কইরা ফালামু।

ইস্কুলে না যাইয়া নটিগিরি কইরা বেরাও। তর আইজ কাইটা ফালামু।

এসব শুনে মেয়েটা চুপ করে আছে। বাস ততক্ষনে থেমে গেছে।

জানালা খুলে নিচে তাকালাম। ওই ছেলে আর মেয়েটা সম্ভবত ভাইবোন সম্পর্কের হবে হয়তো। বাসের পাশে একটা প্রাইভেট কারে চেপে ওরা চলে গেল। মেয়েটার চোখে মুখে ভয়, লজ্জা, শংকা, আতংক। আর ওদেরকে দেখে বাসের সবার চোখে মুখে ঘৃণা, বিস্ময়, বিরক্তির ছায়া। এরই মধ্যে বাস থেকে গেছে গুলশান এক নম্বরের লাল সিগনালে। আমি তখন ওই মেয়ে আর ওদের বন্ধুদের নিয়ে ভাবছি।

সাজেদুর বললো,

ভাই, আজ আমি আসি।

এখানে নেমে আবার আমাকে মহাখালী পর্যন্ত বাসে গিয়ে হকারি করতে হবে। সামনের মাসে পরীক্ষা, টাকা দরকার বেশ কিছু। কাজ না করলে খাবো কি? জীবনে তো নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।

সাজেদুরের প্রত্যেকটি কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। মাথা নেড়ে ওকে বিদায় দিলাম। কিন্তু কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। সাজেদুরদের বিদায় বলতে ইচ্ছে করে না। ওরা আসলেই আকাঙ্খার। ওরা অনেক বড় তারকা ভবিষ্যতের। আজকের সাজেদুর আবেগের বসে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেয়ার সময় পায় না। ভাল খাওয়া, ভাল পরার সুযোগ নেই সাজেদুরের। তবে সাজেদুরের সুযোগ আছে পরিশ্রমের উপর ভর করে সততা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার শক্তিতে নিজের পায়ে দাড়ানোর। সাজেদুর জ্ঞান অর্জন করছে, কলেজে, রাস্তায়, মোড়ে মোড়ে। সাজেদুর ভুলবে না শিক্ষা। সাজেদুর যখন রাস্তায় ঘুরে বেড়াই উপার্জনের মাধ্যমে পড়ার জন্য, তখন অনেকেই অর্থের দমকায় পড়াশুনা ছেড়ে রাস্তায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার নেশায় থাকে মত্ত। যে নেশা ক্ষনিকের সুখ বিলিয়ে ডেকে আনে আজন্ম অনুশোচনা আর অনুতাপের ধারাপাত। যে অমায়িক শক্তির আলো জ্বলে সাজেদুরের বুকে, ওই আলো ছড়িয়ে একদিন ছড়িয়ে পড়বে সমস্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে। জ্বলে উঠবে ল্যাপপোস্টের আলোয় আলোয়। এসব যখন ভাবছি, তখন ডান দিকে ফিরে দেখি সাজেদুর নেই। সাজেদুর তখন বিহঙ্গ বাসের দরজায় ঝুলছে। একরাশ আশা আর স্বপ্ন নিয়ে সাজেদুর ঝুলছে কালো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে। হঠাৎ নিভে গেল ট্রাফিক সিগন্যালের লাল আলো। বিহঙ্গ ছুটলো হেলে দুলে। সাজেদুর ও অজস্র সম্ভাবনার বাতিঘর নিয়ে ছুটলো বিহঙ্গ পশ্চিমের দেশে।

 

পছন্দের আরো পোস্ট