দারিদ্র্য যাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হতে পারেনি

দারিদ্র্য ওদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হতে পারেনি। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর তিন মেধাবী শিক্ষার্থী। এরা হচ্ছে বোয়ালমারী উপজেলার রাঙ্গামুলারকান্দী হাজী আব্দুল্লাহ একাডেমি ও বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির তিন শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ কুমার মিত্র এবং শাকিল ও শাকিক।

তিনজনই এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেছে। কিন্তু ভালো ফল করেও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তারা। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে এ তিন মেধাবীর। কারণ উচ্চ শিক্ষার খরচ কোথা থেকে আসবে এ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে তারা।

বিশ্বজিৎ কুমার মিত্র: উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামুলারকান্দী হাজী আব্দুল্লাহ একাডেমি থেকে এসএসসি (বিজ্ঞান) বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে বিশ্বজিৎ কুমার মিত্র। সে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ ৫ পেয়েছিল। পিতৃহীন হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র সন্তান বিশ্বজিৎ মিত্র অদম্য ইচ্ছা শক্তি, মেধা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এসএসসিতে ভালো ফল অর্জন করেছে।

বিশ্বজিৎ উপজেলার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মৃত বিজয় মিত্রের একমাত্র সন্তান। মাত্র  চার বছর বয়সে সে তার বাবাকে হারায়। নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘরে মা লিপি রানী মিত্রের সঙ্গে ছেলে বিশ্বজিৎ থাকে।  মা লিপি রানী মিত্র অন্যের বাড়ি কাজ করে আর দুই-একটা প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান। বিশ্বজিতের চাচা হোমিও চিকিৎসক দিলীপ কুমার মিত্র বিশ্বজিতের পড়ালেখার খরচ দিয়ে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী মৃধা বিভিন্নভাবে বিশ্বজিৎকে সহযোগিতা করেছেন। স্কুলে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।

Post MIddle

প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, “হতদরিদ্র ঘরের ছেলে বিশ্বজিৎ মেধাবী হওয়ায় আমরা তাকে সহযোগিতা দিয়েছি। আগামীতেও সবার সহযোগিতায় সে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে মানুষের মতো মানুষ হোক সেই আর্শীবাদ করছি। তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে বিশ্বজিতকে সহযোগিতার আবেদন জানান।

বিশ্বজিৎ বলে, “আমার বাবা চেয়েছিলেন আমি যেন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করি। বাবা তো নেই। আমি তার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। তাই সবার সহযোগিতা পেলে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারতাম। “

শাকিল-শাকিব: উপজেলার ডোবরা গ্রামের বাসিন্দা মুদি দোকানি লোকমান শেখ। তার দুই স্ত্রীর দুই সন্তান শাকিল ও শাকিব। দুই ভাই বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি থেকে এ বছর এসএসসি (বিজ্ঞান) বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। জেএসসি পরীক্ষায়ও তারা জিপিএ ৫ পেয়েছিল। শাকিল-শাকিবদের নয় ভাই-বোনের সংসার। তাদের বাবা লোকমান শেখ ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে গিয়ে বাড়ির ভিটের জমি বাদে আর সব জমি বিক্রি করেছেন। শাকিল ভবিষ্যতে চিকিৎসক আর শাকিবের ইচ্ছা প্রকৌশলী হওয়া।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, “ওরা দুই ভাই মেধাবী। ওদের নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। উচ্চ শিক্ষার জন্য দুই ভাইয়ের আর্থিক সহায়তা দরকার। “

পছন্দের আরো পোস্ট