অ্যানিমেশন শিক্ষার অগ্রপথিক আরিফ আহমেদ
আরিফ আহমেদ একজন লেখক, গবেষক, অ্যানিমেটর, প্রশিক্ষক একং চিত্রশিল্পী। বাংলাদেশে অ্যানিমেশন শিক্ষার অগ্রপথিক হিসেবেও তিনি সমোধিক পরিচিত।
শিক্ষাজীবনঃ
বিজ্ঞানের ছাত্রহিসেবে আরিফ আহমেদ তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন মতিঝিল টি এন্ড টি হাই স্কুল থেকে। নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সময় তিনি এক ব্যতিক্রমি সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এ স্থাপত্য বিদ্যায় অধ্যায়নের সুযোগ পেয়েছিলেন আরিফ আহমেদ। যেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল একটি নিশ্চিত ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ। কিন্তু নিরাপদ ভবিষ্যৎ আর জ্ঞান অন্বেষণের দৌড়ে সব সময়ই জ্ঞানের প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। তাই পদার্থ বিজ্ঞানের অপার জ্ঞানের রাজ্যের প্রতি মোহবিস্ট হয়ে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বেছে নেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ফলিত পদার্থ বিদ্যায় সম্পন্ন করেন তার ¯œাতক পর্ব। নিজের ভেতর সবসময়ই একজন উদ্যোক্তার হাতছানি দেখতেন আরিফ আহমেদ। তাই সেই সম্ভাবনাকে আরো বাস্তবতার দিকে নিয়ে যাবার জন্য পরবতীতে তিনি এম. বি.এ ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবনঃ
আরিফ আহমেদের বর্ণাঢ্য কর্মযজ্ঞের শুরুটা অবশ্য ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং কারণ তিনি এমন একটি ক্ষেত্রকে বেছে নিয়েছিলেন যা ছিল তৎকালীন বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। ১৯৯৫ সাল থেকে আরিফ আহমেদ থ্রিডি অ্যানিমেশন নিয়ে পথচলা শুরু করেন। স্বীয় চেষ্টায় শেখেন থ্রিডি সফটওয়্যারের কলাকৌশল এবং কাজ শুরু করেন নানা বিজ্ঞাপন চিত্র একজন কারিগরি কৌশুলী হিসাবে। এরপর বাংলাদেশের নামকরা বেশকিছু প্রোডাকশন হাউসে দায়িত্ব পালন করেন একজন উচ্চপদস্থ কারিগরী কর্মকর্তা হিসেবে। প্রায় দুই শতাধিক বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা এখন অব্দি আরিফ আহমেদের একক রেকর্ড।
অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি তিনি এই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেবার তাগিত অনুভব করেন। ১৯৯৫ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থ্রিডি অ্যানিমেশনের প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসাবে কর্মরত আছেন।
আভা থ্রিডি (AAVA3D)ঃ
বাংলাদেশে অ্যানিমেশন শিক্ষা ও বিশ্বমানের কাজের নিশ্চয়তায় আভা থ্রিডি একটি পরিচিত নাম। দেশে বসেই অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উপর আদর্শমানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ আরিফ আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেন আভা থ্রিডি। কার্টুন ক্যারেক্টার অ্যানিমেশন, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস, গেম ডেভেলপমেন্টের মত বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এখানে চলে অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উপর নিবিড় গবেষণা যার নেতৃত্ব আরিফ আহমেদ নিজে। এছাড়াও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্টুডিও আভা থ্রিডি ও আভা থ্রিডি ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি। এই প্রতিষ্ঠান দুটি যথাক্রমে থ্রিডি অ্যানিমেশন প্রোডাকশন ও থ্রিডি অ্যানিমেশনের উপর কনসাল্টেন্সির কাজ করছে।
গবেষণা ও প্রকাশনাঃ
১৯৯৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এই দীর্ঘ ২২ বছরে অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উপর প্রচুর গবেষণা মূলক কাজ করেছেন আরিফ আহমেদ । সেগুলো প্রকাশিত হয়েছে দেশী-বিদেশী নানা মাধ্যমেও। ২০০৩-২০০৫ সালে তিনি ধারাবাহিক ভাবে থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স ও মায়া সফটওয়্যারের উপর নিবন্ধ লেখেন যেগুলো প্রকাশিত হয় কম্পিউটার টুমরো ও কম্পিউটার জগতের মত ম্যাগাজিন গুলোতে। ২০১৪ সালে শিশু শিক্ষায় মাল্টিমিডিয়ার প্রয়োগের ফলপ্রসূতার উপর করা গবেষণাকর্ম দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।
২০১৭ এর একুশের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গবেষণাধর্মী বই ‘‘ অ্যানিমেশনে পদার্থবিজ্ঞান’’ যা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে টপরেটেড প্রযুক্তিবিষয়ক বইয়ের ভেতর স্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত আরিফ আহমেদ থ্রিডি অ্যানিমেশনের উপর অর্ধশতাধিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন প্রধান বক্তা হিসেবে যেগুলোর অধিকাংশই আয়োজিত হয়েছে খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে।
চিত্রকর্মঃ
শুরু থেকেই চিত্রশিল্পের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা ছিল আরিফ আহমেদর। তাঁর নিজস্ব মতামত-চিত্রশিল্পের প্রতি ভালোবাসা ও পদার্থবিজ্ঞানের উপর দখল তাঁকে পরিচালিত করেছে থ্রিডি অ্যানিমেশনের পথে। ১৯৯৬ সালে ‘‘বার্জার ইয়ং পেইন্টাস আর্ট কম্পিটিশনে ’’অংশ নেন তিনি। ২০০৫ সালে জয়নুল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত ‘ দি টারান্টেলা-মাল্টিন্যাশনাল গ্রুপ এক্সিবিশনের ’ মত জায়গায় তার চিত্রকর্ম স্থান পায় এবং ব্যাপক দশর্কপ্রিয়তা অর্জন করে। ২০১৭-এর জানুয়ারিতে দৃক গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর এক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী‘‘ সাইন্স ইন্সপায়ার্ড পেইন্টিংস’’ যা বাংলাদেশে চিত্রশিল্পের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বিজ্ঞান ও মহাকাশ-এই থিমের উপর বাংলাদেশে এটিই প্রথম চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।
Web Site: www.aava3d.com
Aava3d official face book page link :