সমাবর্তনপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখরিত জাককানইবি

মনে হয় কিছুদিন আগেই ক্যাম্পাসে এসেছিলাম উচ্চ শিক্ষা নিতে। দেখতে দেখতে কেমন করে প্রিয় বিদ্যাপীঠে কেটে গেছে জীবনের পাঁচটি বছর। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গায় জুড়ে রয়েছে আমাদের কতশত স্মৃতি যা আজও হৃদয়মাঝে বেঁচে আছে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই ক্যাম্পাস থেকে চিরিতরে বিদায় নিচ্ছি আমরা। সারাজীবন হয়ত আজকের এই দিনের মুহূর্তগুলো জমা হয়ে থাকবে। হাজার চাইলেও আর পাবো না সেজন্য আজ বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি।

এভাবেই আবেগতাড়িত কণ্ঠে অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও নিউজ টুয়েন্টিফোরের সিনিয়র রির্পোটার শেখ জায়েদ।

আজ জায়েদের মতো হাজারো গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাত পোহালেই (বুধবার ১৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হাজারো প্রাণের মিলনমেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১  বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরনীয় দিন প্রথম সমাবর্তন।

Convocation Najrul Universityসমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আগেই সকালেই গ্র্যাজুয়েটদের দেওয়া হয় গাউন, ক্যাপ ও সমাবর্তন ব্যাগ। এর পর থেকেই শুরু হয় নিজেদের স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাসের শেষ মুহূর্তগুলোকে ধারণ করে রাখার মধুর প্রতিযোগিতা।

১৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকেলে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সমাবর্তন ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ক্যাম্পাস। ব্যানার ফেস্টুনসহ নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় একাডেমিক বিল্ডিং সহ গোটা ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সব জায়গাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য সাবেক হওয়া শিক্ষার্থীদের পদচারণা।

Convocation Najrul Universityবিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী চক্রবাক কেন্টিন, জয়বাংলা ভাস্কর্য, স্বাধীনতা চত্বর, কলা ভবন, বটতলা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রুদ্রমঙ্গল ছাতা সহ সব জায়গাতে সমাবর্তনের আগে নিজেদেকে স্মৃতিরফ্রেমে বন্দি করছেন গ্রাজুয়েটরা। পাশাপাশি সমাবর্তনের ক্যাপ আকাশে ছুড়ে দিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাস–উচ্ছ্বাসের প্রকাশে মেতে উঠছেন।

নিজের বিভাগের বন্ধু আবার হলের বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ হয়ে ছবি তুলছেন। আবার অনেকে প্রাণের ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছেন পরিবারের সদস্যদের। এসময় তাদের সঙ্গে আসা মা-বাবাদেরও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় ।

Post MIddle

Convocation Najrul Universityএদিকে, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন খেলার মাঠে সমাবর্তন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর (ভারপ্রাপ্ত), প্রক্টর ড.মোঃ জাহিদুল কবীরসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা অংশ নেন।

সামনে এগুতেই কথা হয় হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০০৭-০৮ সেশনের শিক্ষার্থী ফাহাদুজ্জামান মোঃ শিবলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সমাবর্তন প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্ববহ সম্মাননা। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়ে জীবনের আরও বড় পর্যায়ে পদার্পণ করে একজন শিক্ষার্থী। দেশের মানুষের জন্য আত্মনিয়োগ করাই এখন আমার প্রধান লক্ষ্য। আমার এই প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা শিখেছি তা বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো।

Convocation Najrul Universityসমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হবে দুপুর ২ টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীনা হল প্রাঙ্গণ থেকে। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে পুরাতন কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের চ্যান্সেলরের মঞ্চে আগমন এবং জাতীয় সংগীত শুরুর মাধ্যমে হবে সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আপেল মাহমুদ বলেন, সমাবর্তনে আসা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যাতে কোন সমস্যা পোহাতে না হয় সে জন্য ছাত্রলীগের সর্বস্তরের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে।

Convocation Najrul Universityঅনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আল। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিবেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান।

Convocation Najrul Universityউপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম বলেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সমাবর্তন দিবস শিক্ষার্থীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিবসটির জন্য শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই এগার বছরে প্রথম সমাবর্তন করতে পেরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমি নিজেও আনন্দিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) এস.এম. হাফিজুর রহমান জানান, প্রথম সমাবর্তনে ১ হাজার ৩৯৯ জন গ্র্যাজুয়েটদের কে সমাবর্তন দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ ২৯ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩২ টি স্বর্ণপদক তুলে দিবেন।

Convocation Najrul University

পছন্দের আরো পোস্ট