যেভাবে ঠিক করবেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য

প্রথমত, আমরা শুরুতেই হার্ভার্ড অক্সফোর্ড এমআইটির কথা মাথায় আনি। অর্থাৎ, সবসময় চাই টপ র‍্যাংকড কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাবো। এই ইচ্ছাটা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আমাদের নিজেদের ‘সেলফ জাজমেন্ট’ থাকা লাগবে। আপনার পূর্বের রেজাল্ট, ইংলিশ টেস্ট রেজাল্ট, রিকমেন্ডেশন, জব এক্সপেরিয়েন্স, লেডার অফ মোটিভেশন কি সত্যি ঐ লেভেলের নাকি সেটা জাজ করার ক্ষমতা আপনার থাকা উচিৎ।

আপনি যদি নিজেই জানেন যে কখনোই আপনাকে দিয়ে হার্ভার্ড হবে না সেক্ষেত্রে আপনি অন্য কিছু ট্রাই করুন। এর কারন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যেতে ব্যর্থ হওয়ার হতাশা খুবি খারাপ। ২০টি এপ্লাই করে ১ টি তে হয়। এক বড় ভাই ১০০ এর উপরে এপ্লাই করে ১টা স্কলারশীপ পেয়েছে। তাই আপনি যদি শুরুতেই আকাশ কুসুম কল্পনা করে পরে ব্যর্থ হন সেটা সামলাতে পারেবন কিনা এটা ভাবা খুবি জরুরী।

দ্বিতীয়ত, টপ র‍্যাঙ্কড ইউনিভার্সিটি নিয়ে কিছু মিথ বা কল্পকাহিনী আছে। আমি এমন মানুষ চিনি যিনি সুইডেন থেকে ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিং-এ ১০০০ এর বাইরের এক ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ে এখন সেখানেই একটা ভালো কোম্পানিতে আছেন। আবার এমন মানুষও চিনি যিনি ইউকের ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিং-এ ৩০০ এর মধ্যে থাকা এক ইউনিভার্সিটিতে পড়ে এসে বাংলাদেশে বেল পাচ্ছেন না। এটা হওয়ার কারন কি? এখানে বেশ কিছু ফ্যাক্টর আক্ষরিকভাবে কাজ করে যা আগে থেকে আমাদের মাথায় কাজ করে না।

১। আমি যেই ইউনিভার্সিটি পছন্দ করেছি তা আসলেই ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিং-এ টপ কিনা? কি ভাই ভরকে গেলেন? কিছু জিনিস আপনাকে নিজেই চেক করে নিতে বলি। আপনি টপ ১০০ ইউনিভার্সিটি সার্চ করে দেখেন। এদের মধ্যে ৮০% ইংরেজী ভাষাভাষী ইউনিভার্সিটি এবং এদের অধিকাংশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া এই দেশগুলোতে অবস্থিত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই দেশগুলোর যেকোন ইউনিভার্সিটি আপনি ইন্টার্নেটে সার্চ করলেই টপ র‍্যাঙ্কড হিসেবে পাবেন। তাহলে বাকী সব উন্নত দেশগুলো পড়ালেখাতে এতটাই পিছিয়ে? আসলে সত্যিটা হলো এই দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা একটি বানিজ্য। দেখবেন তারা বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের থেকে একটা মাস্টার্স বা ব্যাচেলরের নামে কত হাজার ডলার নেয়। এবং দেখবেন ঐ ওয়েবসাইটগুলোতে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির এডভারটাইজ আসে। আমি জানিনা টপ ২০০ এর মধ্যে থাকা একটা ইউনিভার্সিটি কেন এড দিবে অথবা বিভিন্ন দেশে যেয়ে নিজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার ক্যাম্পেইন করবে! এটা সত্যি যে পৃথিবীর প্রথম শ্রেনীর ইউনিভার্সিটিগুলো ইউকে ইউএস কানাডা অস্ট্রেলিয়াতেই অবস্থিত। কিন্তু এর মানে এই না যে আপনি ইন্টারনেটে যা দেখেন সবই সত্য।

Post MIddle

most-beautiful-university২। সাবজেক্ট একটা অনেক বড় ফ্যাক্ট। ধরুন আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ‘দি হাইয়ার এজুকেশন’ টপ র‍্যাঙ্ক ১০০ এর মধ্যে। কিন্তু আপনি এমন কোন মেজরে পড়ছেন যেটার সাথে আপনার পরিকল্পিত ভবিষ্যতের কোন যোগাযোগ নেই তাহলে আপনি কতটুকু লাভবান হবেন সেটা সত্যি ভেবে দেখার বিষয়। যেমন আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি। আমাকে হাইডেলবার্গ (বিশ্বের টপ র‍্যাঙ্কে ৪৩তম) থেকে বলা হয়েছিলো কিছু ডক্যুমেন্টস জমা দিতে তাহলে আমি ‘হেলথ এন্ড কালচার ইন সাউথ এশিয়া’ সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারব। আমি আবারো বলি, এটা বিশ্বের ‘৪৩’ র‍্যাঙ্কের ইউনিভার্সিটি। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম জার্মানির এমন এক ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যেতে যেটা টপ র‍্যাঙ্কড না। কিন্তু কেন? কারন আমি যেই সাবজেক্টে চান্স পেয়েছি তা পুরো বিশ্বে শুধু এই ইউনিভার্সিটি পড়ায় এবং এই সাবজেক্ট জাতিসংঘের ফিল্ড লেভেলের কিছু কাজ নিয়ে প্র্যাক্টিকেল পড়ালেখা করায়। এলামনি বোর্ডে ভিজিট করে দেখলাম ম্যাক্সিমাম মানুষ সেসব জায়গায় আছে যেসব জায়গায় আমি মন থেকে যেতে চাই। কোর্সগুলো দেখলাম সেগুলো আমার মনের মত। কেন আমি ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং দেখে বাস্তবতাকে উপেক্ষা করবো?

৩। আপনার রেজাল্ট ম্যাটারস। আপনি যত ভালো জায়গায় পড়েন না কেন কেও কখনো শুধু ইউনিভার্সিটির নাম দেখে আপনাকে মূল্যায়ন করবে না। আপনার রেজাল্ট আপটু দা মার্ক না হলে দুই পয়সা দাম নাই।

আপনার এজ্যুকেশন এবং লিভিং কস্ট অনেক বড় একটা ব্যাপার। অনেক সময় আমরা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় দেখে সেখানে যাবার পরের পরিনতির কথা না ভেবে চোখ বন্ধ করে চলে যাই। ধরুন কোন একটি মাস্টার্স কোর্সের ফি ৪৮,০০০ ডলার। আপনাকে ৫০% স্কপলারশিপ দেয়া হলো। এখন প্রশ্ন হলো আপনি দুই বছরে নিজের থাকা খাওয়া চালিয়ে সেখানে আরো ২৪,০০০ ডলার পে করতে পারবেন কিনা। নাকি যাবার ৩ মাস পরেই আপনি নিজের জীবনকে গিলতেও পারবেন না ফেলতেও পারবেন না এমন অবস্থায় নিয়ে যাবেন?

তাই আমার মনে হয় শুধুমাত্র সারা পৃথিবীতে কোনটা বেস্ট এটা চিন্তা না করে আপনি আসলে যেখানে পড়তে চান তা আপনার জন্য বেস্ট কিনা সেটা ভাবাটাই অনেক বেশী জরুরী।

পছন্দের আরো পোস্ট