সফল উদ্দোক্তা সাজিদের গল্প

ঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে আইপিও সম্মেলন। সারা পৃথিবীর বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দ এউপলক্ষ্যে এখন বাংলাদেশে। ১৩২টি দেশের বিশ্বনেতাদের সফরে সেখানে বসেছে দেশী বিদেশী পণ্যেরর সমারোহ, বসেছে দেশী উদ্দোক্তাদের স্টল, সবচেয়ে চোখে পড়ছে যে স্টলটি সেটি কেপিসি পেপার কাপের স্টল। পরিবেশবান্ধব দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী কেপিসির বিশটির মত পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে আয়োজনে।

Post MIddle

কাজি সাজিদুর রহমান জানালেন,  বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় সম্মেলন প্রথম যেখানে ১৩২টি দেশের স্পীকার ও পার্লামেন্টারিয়ানরা উপস্থিত। ইপিবি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেপিসিকে বিশেষভাবে স্টল প্রদান করেছেন। আশার কথা হচ্ছে,  বিশ্বনেতারা কেপিসিকে আন্তর্জাতিক মানের বলছেন এবং আমদানীর আশাবাদও দেখাচ্ছেন,যা কেপিসি পরিবারকে গর্বিত করেছে।

এবার আমরা জেনে নেবো সফল উদ্দোক্তা সাজিদের গল্প
কাজী সাজিদুর রহমান। বাড়ি খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ২০০৩ সালে বিএসসি শেষ করেন। আরো পড়াশোনার আগ্রহ ছিল। তবে মনের মধ্যে ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। শুরু করেন ছোট পর্যায়ে ঠিকাদারি দিয়ে। এরপর ইভেন্টিং। তবে সবকিছু গুটিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কাজী পেপার কাপ বা কেপিসি ইন্ডাস্ট্রি। এখন দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এককভাবে কাগজের তৈরি কাপ, প্লেট, বক্স সরবরাহ করছেন তিনি। এসব উদ্যোগের কারণেই ২০১৬ সালে তিনি হয়েছেন বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এসএমই ফাউন্ডেশন তাকে দিয়েছে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০১৬’। মাত্র ৪ বছরেই দেশে তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে কেপিসি’র গ্রাহক সংখ্যা ১৯০টিরও বেশি করপোরেট হাউস। ইতিমধ্যে নেপাল ও মালয়েশিয়াতে কাপ-প্লেট রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডসের ক্রেতাদের কাছ থেকে পেপার কাপ নেয়ার জন্য ক্রয় আদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলাপকালে ভাগ্য বদলের এসব কথা বলেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।

পরিবেশবিদরা জানান,

বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এ ক্রান্তিকালে পৃথিবী খুঁজছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের উপায়। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে পারলে দূষণের পরিমাণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বিকল্প একটি পণ্য হলো কাগজের কাপ। দূষণমুক্ত সবুজ পৃথিবী গড়তে বিশ্বজুড়ে এ পণ্যটি এখন দারুণ জনপ্রিয়। আর এ কাগজের কাপ বাংলাদেশসহ বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন কাজী সাজেদুর রহমান।

কাগজের কাপ ব্যবসায় আসার ধারণা সম্পর্কে কাজী সাজেদুর জানান, সময়টা ২০১০ সাল। মাকে নিয়ে পবিত্র হজে যান। একদিন একটি মসজিদের প্রথম সারিতে বসে ইফতার পেয়েছিলেন। ইফতারের আইটেমগুলোর মধ্যে ছিল বড় এক কাপ খেজুর। তখনই কাগজের কাপের ব্যবসার পরিকল্পনাটা মাথায় আসে। এরপর দেশে ফিরেই এ সম্পর্কে বিশদ জানতে আর প্রশিক্ষণ নিতে মালয়েশিয়া চলে যান। এরপর অনেক শ্রম আর একনিষ্ঠতার জোরে দেশে কাজী সাজিদুর রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গড়ে তুলেন কেপিসি ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি কোম্পানি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

প্রতিষ্ঠান গড়ার বিষয়ে

কাজী সাজিদ বলেন, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার কাছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার মতো ছিল। মূলধন স্বল্পতা দূর করতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বললেন। তারা অর্থায়ন করে। তবে তার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই অল্প। মূলধন ছিল ৩৩ লাখ আর ব্যাংক দিলো ৪০ লাখ। তিনটি মেশিন দিয়ে পেপার কাপ ও প্লেট তৈরি করেন তিনি। এখন মূলধন দাঁড়িয়েছে প্রায় চার কোটি টাকার ওপরে। তার প্রতিষ্ঠান থেকে এখন প্রতিদিন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি হচ্ছে প্রায় তিন লাখ পিস কাগজের কাপ ও প্লেট। শুরুতেই পেপসি, ইস্পাহানি, ঈগলু এবং বিএফসির মতো বড় বড় ব্র্যান্ডের অর্ডার পেতে শুরু করেন তিনি।

দেশের দামি দামি প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে সাজিদ তার পণ্য ব্যবহারে উৎসাহী করলেন? তার মতে, বিশ্বের সব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিই অনেক কিছু বিবেচনা করে বিজনেস পার্টনার নির্ধারণ করে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখার জন্য কারখানায় নিযুক্ত আছে সুশিক্ষিত ও সুপ্রশিক্ষিত কর্মচারী ও শ্রমিক। এসব কারণে গুণগত মান সবসময় নিশ্চিত হচ্ছে।

সাজিদুর জানান, তার কারখানাতে এইচএসিসিপি বা হেসাপ (হ্যাজারড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কন্ট্রোল পয়েন্টস) প্র্যাকটিস করা হয়। এছাড়া নিজস্ব ল্যাব রয়েছে। এখানে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা করা হয়। কাগজের গায়ে তারা যে আস্তরণ বা প্রলেপটা ব্যবহার করছেন, তা ১০০ ভাগ পরিবেশবান্ধব। কাগজের ওপর পলিথিলিন নামক পদার্থের একটি প্রলেপ বা আস্তরণ রয়েছে এটি শতভাগ পচনশীল পদার্থ। এটি মাটির সংস্পর্শে যাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।

কাজী সাজিদ জানালেন, বিশ্ববাজারে কাগজের তৈরি এই শিল্পের একটি বড় বাজার রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও এসব ওয়ানটাইম পণ্যের প্রচলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা ব্যবহারের ফলে সময় বাঁচে। পরিবেশবান্ধব আবার স্বাস্থ্যসম্মতও। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে শিক্ষিত ও সচেতন ব্যক্তিদের অনেকেই কাগজের কাপ ও প্লেট ব্যবহার করছেন। আগামীতে সব শ্রেণির মানুষ এই পণ্য ব্যবহার করবেন। এসব কারণে এই পণ্য একদিন দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প হিসেবে পরিগণিত হবে।

পছন্দের আরো পোস্ট