বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে জাপানে সাত দিন

চতুর্থ আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে অংশ নিতে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিশাত আলম দৃষ্টি জাপান গিয়েছিলেন। শুনুন তাঁর জাপান ঘোরার গল্প

Post MIddle

সিক্সে পড়ার সময় শরত্চন্দ্রের ‘দেবদাস’ পড়েছিলাম। মনে নাড়া দিয়েছিল। পড়ার নেশা পেয়ে বসল। একে একে রবীন্দ্রনাথের ‘নৌকাডুবি’, ‘চোখের বালি’, গল্পগুচ্ছ পড়েছি। হুমায়ূন আহমেদের ‘এপিটাফ’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ও খুব প্রিয়। তবে লেখাপড়া আর বাংলায় হলো না। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হলাম। বাংলার প্রতি ভালোবাসাটি থেকে গেল। সেটি প্রকাশের সুযোগ এসে গেল ৮ ডিসেম্বর। ‘চতুর্থ আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা সম্মেলন ২০১৫’-তে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের টিম জাপানের পথে বিমানে চড়ে বসল। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য স্যার, কোষাধ্যক্ষসহ আমাদের সাতজনের দল। ট্রানজিটের জন্য পাঁচ ঘণ্টা বসে থাকতে গিয়ে সবাই মিলে অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হলো। টোকিওর নারিতা এয়ারপোর্টে নেমে সোজা হোটেল। শুশি, স্টিকি রাইস, সামুদ্রিক মাছ দিয়ে ডিনার শেষে ঘুম।

১০ ডিসেম্বর ঘুম ভেঙে দেখি গোছানো, ছিমছাম টোকিও। নাশতা সেরে টোকিও থেকে প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরের ‘হিরোশিমা’ দেখতে চললাম। বুলেট ট্রেনে গেলেও রাত হয়ে গিয়েছিল বলে জাদুঘর খোলা পেলাম না। বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম এবং পরদিন ট্যুরিস্ট বাসে আবার গেলাম। জাদুঘরে এটম বোমায় নিহত মানুষের দেহের নানা খণ্ড আছে। হিরোশিমার বিভীষিকার ওপর তৈরি করা প্রামাণ্যচিত্র, সে শহরের মানচিত্রসহ নানা কিছু দেখে ফিরে এলাম। পরদিন ১২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর দুই দিনের সম্মেলন।

nishat alomপ্রথম দিন অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল পরিচয় পর্ব। এরপর ‘এশিয়ায় জলবায়ু অভিযোজন : প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করলেন আমাদের উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. এম আজিজুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. জীবন রঞ্জন মজুমদার। এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের ডিন ড. বিলকিস আমিন হক।

অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক আয়োজনে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জাপানি ছাত্রছাত্রীরা নাচ, গান ও নাটক করলেন। রবীন্দ্রসংগীতও গাইলেন তাঁরা। পরদিন দুটি সেশন। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা লেখা, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ বেগম, বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার শামস আলভীন আর আমি আছি তাতে।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন স্টাডিজ ফ্যাকাল্টিতে ‘সমকালীন বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করলেন মমতাজ ম্যাডাম। প্রধান অতিথি ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. বরুণ কুমার চক্রবর্তী। তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাঁশি, সেতার, তবলা সব কিছু নিয়ে জাপানি ছেলেমেয়েরা বাংলায় ‘আলো আমার আলো’ গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করল।

তারা একটি জনপ্রিয় জাপানি গানও বাংলা ভাষায় রূপান্তর করে গেয়েছিল। ‘রক্তকরবী’ নাটকের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হলো। পরদিন টোকিও শহর ঘুরে দেখলাম। সাত দিনের টোকিও ঘোরা শেষে আমরা দেশে ফিরলাম ১৫ ডিসেম্বর।

অনুলিখন : জামিল মাহমুদ ছবি : হানজালা

পছন্দের আরো পোস্ট