ডুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের প্রথম কনভেনশন

গায়ে আকাশী নীল গেঞ্জি, মাথায় একই রঙের টুপি। হাজারো মানুষের ভীড়ে সহজেই চেনা যাচ্ছে তাদের। কেউ এসেছেন সপরিবারে। কেউবা নাড়ীর টানে কেবল নিজেই। হলের কোন রুমে থাকতেন তা চেনাচ্ছেন সন্তানদের। কেউ পুরনো বন্ধুদের পেয়ে আবেগাল্পুত হয়ে জড়িয়ে ধরছেন। বিকেলে মাঠের কোন কিনারে বসে গল্প – আড্ডা হতো, কোথায় খেলাধূলা করতেন- সেসব পুরনো স্মৃতি রোমন্থনও চলছে। কেউবা ব্যস্ত পুরনো বন্ধুর সাথে সেলফি তোলাতে। সাথে আগের ক্যাম্পাসের তুলনায় এখনকার ক্যাম্পাসের পরিসর, সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রশসংসাও চলছে। আর গান-বাজনা, খেলাধূলা, আলাপ-আলোচনা তো আছেই। এসবই ছিল ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের প্রথম কনভেনশন ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত গ্র্যাজুয়েটদের কর্মকান্ড।

‘নান্দনিক সভ্যতার উত্থান, পুরকৌশলীদের অবদান’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুরের সুবজ ঘেরা ক্যাম্পাসে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের, ডুয়েট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব উদযাপিত হয় বেলুন উড়িয়ে, পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন পুরকৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. গনেশ চন্দ্র সাহা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এলামনাই এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রকৌশলী গাজী মোঃ আলতাফুজ্জামান, বসুন্ধরা সিমেন্টের পক্ষে সরোজ কুমার বড়–য়া প্রমুখ।

এ পর্বে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ১৯৮০ সালে ঢাকা কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে যে চারাগাছ রোপণ করা হয়েছিল, কালক্রমে তা বিকশিত হয়ে ডুয়েট-এ পরিণত হয়েছে। তিনি আজকের অনুষ্ঠানকে ডুয়েটের ঈদ বলে অভিহিত করেন। তিনি ডুয়েটকে ‘মা’ এর সাথে তুলনা করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে মায়ের বড় সন্তান বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বড় ছেলের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ) আয়োজন দেখে অন্য ছেলেরাও (অন্য বিভাগগুলো) এ ধরনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনে উদ্বুদ্ধ হবে এবং ‘মা’ তথা ডুয়েটকে বিকশিত করবে। আয়োজক কমিটির পক্ষে প্রকৌশলী আলতাফুজ্জামান বলেন, ডুয়েটের যেকোন প্রয়োজনে প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েটরা যার যার অবস্থান থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছেন।

Post MIddle

বিশাল এ কর্মযজ্ঞের উদ্বোধনী পর্বের পরেই শুরু হয় খেলাধুলা প্রতিযোগিতা। এখানে রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্র্যাজুয়েটদের সন্তানেরা অংশগ্রহণ করে। এরপর শুরু হয় টেকনিক্যাল সেশন। এখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোঃ শামীম জেড বসুনিয়া এবং ডুয়েটের অধ্যাপক ড. মোঃ শওকত ওসমান।
তৃতীয় পর্ব কনভেনশনে পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ মখলেসুর রহমান, ডুয়েট এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জি. ফকরুল হায়দার চৌধুরী, পরিচালক (ছাত্র কল্যান) অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েট, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় চার হাজার অতিথির মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
সারাদিনের আলাপ-আলোচনা স্মৃতি রোমন্থন শেষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ। দিনটা যদি আরো বড় হতো,

আরো কিছুটা সময় যদি পাওয়া যেতো- অংশগ্রহণকারীদের মুখে ছিল এমন অভিব্যক্তি। তারপরেও বিদায়ের সুর টানতেই হয়। তাই আবার ফিরে যাওয়া। আবার ব্যস্ত নাগরিক জীবনে সাড়া দেয়া। তবে প্রত্যেকের মুখে ব্যক্ত হয় দৃঢ় প্রত্যয়। যেকোন সময়, যেকোন প্রয়োজনে চলে আসবেন নিজের এই প্রতিষ্ঠানে। যে প্রতিষ্ঠান দিয়েছে তাদের আজকের এ সফলতা-তাকে ভুললে যে মায়ের অবমাননা হয়!

পছন্দের আরো পোস্ট