বার্থডে কেক
সকালের মুখে অর্ধচন্দ্রের হাসি। এই হাসিই বলে দিচ্ছে, আজ আবার কোন কিছু ঘটেছে বা ঘটতে যাচ্ছে। কী হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। তবে এইটুকু জানি আমাদের মধ্যে কাউকে বাঁশ দিতে যাচ্ছে। রোজকার নিয়মে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়েছি। যাচ্ছি রেডিও পদ্মায়। আমি, সকাল আর সৌরভ। বেশ পুরানো রুটিন। খানিকটা একঘেয়ে। মাঝে মাঝে খুব বিরক্তিকর ও মনে হয়। বিকেলের আড্ডাটা দেয়া হচ্ছে না। এতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে ফেসবুকে ঢোকার ও সময় পাচ্ছি না। অটোতে বসে আড্ডা দিতে দিতে যাচ্ছি। এখন যতটুকু আড্ডা হয় তা শুধু ভোরবেলার নাস্তায় আর বিকেলের অটোতে।
আড্ডার বিষয় কিছুদিন থেকে চেঞ্জ হচ্ছে না। সকাল নতুন নতুন প্রেম করায় আমরা সবাই ভালোই মজা নিচ্ছি। একসময় চলে এলাম রেডিও পদ্মায়। সবাই কাজ করছি। ঠিক কাজ করছি না, কাজ শিখছি। সাদী ভাই অতি আদরের সাথে আমাদের কাজ শেখাচ্ছেন। কাজ করতে করতে হঠাৎ সকাল কানে কানে ফিসফিস করে বলল আজ শুভ্রর জন্মদিন। শুভ্রর মন খারাপ, ফেবু থেকে বার্থডে তারিখ লুকিয়ে রেখেছে। কেউ তাকে শুভেচ্ছা জানায় নি। জানাবে কীভাবে? কেউ তো জানেই না। আমার তো জানার প্রশ্নই আসে না। দিন ও তারিখই বলতে পারি না। আর জন্মদিন মনে রাখার মতো ফালতু কাজ কীভাবে করি? এগুলো সবসময় ফালতু মানুষের দ্বারাই সম্ভব। মানে সকালের পক্ষেই সম্ভব।
সাথে সাথে প্ল্যান করে ফেলল। আমাদের গ্রুপের সবাইকে ফোন দিয়ে জানালো বিষয়টা। সবাইকে সতর্ক করে দিলো যেনো শুভ্র কিছু টের না পায়। সাদী ভাইকে বলে দ্রুত ছুটি নিয়ে নিলো। আমাদের সাথে শান্তা ও বের হলো। একসাথে কিছুদূর হাঁটার পর শান্তাকে বলল চলো আমাদের এক বন্ধুর জন্মদিন আজ। কেক কেঁটে আসি। শান্তা এক কথায় রাজি হয়ে গেলো। আমি আর সৌরভ শুধু দেখে যাচ্ছি। শান্তা কিন্তু মোটেও শান্ত মেয়ে না, এক ছেলেকে ঘুসি মেরে নাক ফাঁটিয়ে দিয়েছে। তবে ছেলেটা কে তা জানিনা। কেক পছন্দ করে কিনলাম সবাই। কেকে খুব সুন্দর করে লেখা হলো ওর ছদ্মনাম। যা সবাইকে জানানো যাবে না।
ক্যাম্পাসে পৌছাতে পৌছাতে আটটা বেজে গেলো। সবাই জোহা চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু শুভ্রর খোঁজ নেই। তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা। অবশেষে পেলাম আমি। বললাম খুব জরুরি এখনই আসতে হবে। ওপাশ থেকে শুভ্র বললো পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসবে সে। এদিকে সমসময় লেট করা লেট সজীব দ্রুত আসতে গিয়ে গিফট রুমে রেখে এসেছে। জন্মদিনের গিফটাও দেরীতেই দিতে হবে বুঝতে দেরী হলো না। শুভ্রর দেওয়া পাঁচ মিনিট পেরিয়ে দশ মিনিট হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবাইকে অবাক করে দেখা মিলল সেলফি কুইন শ্রাবণীর।
সেমিনার শেষ করে মেসে ফিরছিলো সে। আমাদের দেখে থমকে দাঁড়ালো। যোগ দিলো আমাদের সাথে অপেক্ষায়। অবশেষে শুভ্র এলো। সে আজ পাঞ্জাবি পড়েছে। আমাদের সবাইকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে সে। ভাবতেই পারেনি যে আমরা ওর জন্মদিনের কথা জানি। সবাই শহীদ মিনারের মাঠে বসলাম। কেক কাটার আগে সকাল বলল কেকের লাল ফুলটা যেনো কাটা না হয়। বুঝতে পারলাম না কেনো একথা বলল। মাথা ঘামালাম না এ ব্যাপারে। ছবি তোলায় ব্যস্ত সবাই। শুধু আমাদের সেলফি কুইন সেলফি তুলতে পারল না আলোর স্বল্পতার কারণে। কেক কাটা, কেক খাওয়ানো এমনকি মাখামাখি পর্বও শেষ। তবে এমনভাবে কেক মাখিয়েছে শুভ্র আমাকে যে এ অবস্থায় কেউ দেখলে ভাববে জন্মদিনটা আমার ছিলো।
রাত সাড়ে নয়টা। শান্তা ও শ্রাবণীকে মেসে এগিয়ে দিয়ে আসলো সুজন। এর পরই ঘটল মূল ঘটনা। সকালের সিগ্ধ হাসির রহস্যটা কেবল উন্মোচিত হলো। সকাল বলল কেকের লাল ফুল নিয়ে তাপসী রাবেয়া হলে যেতে হবে। শুভ্রর জন্মদিনে শোভা যদি কেক না খাওয়ায় বা শোভাকে না খাওয়ানো হয় তাহলে কীভাবে হয়? জোর করেই নিয়ে যাওয়া হলো শুভ্রকে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে শুভ্র। বলা হয়নি, শুভ্র একটি মেয়েকে খুব পছন্দ করে। সেই মেয়েটাই হলো শোভা। আমার ধারণা শোভাও বিষয়টা বুঝতে পারে। কিন্তু শুভ্রকে বুঝতে দেয়না। লেট সজীব জীবনে প্রথমবারের মতো লেট করলো না। ফোন দিয়ে গেটে আসতে বলল শোভাকে। শোভা গেটের ওপাশ থেকেই রাগ ও সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো।
সকালে কেকের লাল ফুলটা এগিয়ে দিলো শোভার কাছে। বলে দিলো শুভ্রর মনের কথাগুলো। শুভ্র কেকের লাল ফুল তোমার ভালোবাসার জন্য নিয়ে এসেছে। বন্ধুর জন্য এটুকু তো সামান্য, আরো অনেক কিছুই করা যায়। গেটের ওপাশ থেকেই শোভা কেক খাওয়ালো শুভ্রকে। দুজনেরই লজ্জায় লাল হওয়া মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। দৃশ্যটা ফ্রেমে বন্দি করার ইচ্ছে করলেও ফ্রেমে বন্দি করলাম না। বন্দি করলাম মনের ফ্রেমে। ফিরে আসার সময় দেখতে পেলাম শোভা তার হাতের রুমালটি শুভ্রকে দিল কেক মোছার জন্য। শুভ্র রুমালটি দিয়ে কেক মুছল না। পকেটে রেখে দিলো।
আসার সময় আমাদের বলল, তোদের কারণেই আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শুভ্র বার বার পেছনে তাকাচ্ছিলো। সে তো ভালোবাসা পেছনে ফেলে আসেনি। রুমালে বেঁধে পকেটে করে নিয়ে এসেছে। রুমাল খুলে সেই ভালোবাসাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে, মাঝে মাঝে সেই রুমালে চোখ মুছে শুভ্র।
ইয়াজিম ইসলাম পলাশ । গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়