ঢাবিতে স্বর্ণপদক ও বৃত্তি পেলো যারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন নাহার হলে ‘শামসুন নাহার মাহমুদ ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক ও বৃত্তি, প্রভোস্ট বৃত্তি এবং বার্ষিক সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান গতকাল (১৯ মার্চ ২০১৭) রবিবার সন্ধ্যায় হল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বৃত্তির চেক ও সনদপত্র তুলে দেন। একই সঙ্গে উপাচার্য হলের বার্ষিক সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও পুরস্কার বিতরণ করেন।

শামসুন নাহার মাহমুদ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে “মন্দাক্রান্তা ছন্দে বঙ্গনারীর সংস্কৃতিচর্চা” শীর্ষক ফাউন্ডেশন বক্তৃতা প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র চেয়ার অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়। সদস্য-সচিবের বক্তব্য প্রদান করেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সুপ্রিয়া সাহা এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রিন্সিপ্যাল আবাসিক শিক্ষক সৈয়দা মমতাজ শিরিন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই মহান স্বাধীনতার এই মাসে মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ প্রাণের আত্মদান এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস। এই মাস আসার অর্থ আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। কেননা একাত্তরের মার্চ মাস আমাদের অস্তিত্বের ভীত রচনা করেছে। এ মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস, আমাদের তা উপলব্ধি করতে হবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, তোমরা হল থেকে কিছুদিন পর চলে যাবে, এই হল যার নামে পরিচিত তাঁকে সবসময় স্মরণ করা তোমাদের দায়িত্ব। শামসুন নাহার মাহমুদ নারী শিক্ষা ও নারীর সামাজিক উন্নয়নে আজীবন কাজ করে গেছেন। তোমাদের নারী উন্নয়নের কাজে প্রেরণা হিসেবে শামসুন নাহার মাহমুদকে জানতে হবে। সর্বোপরি তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নবীণ শিক্ষার্থী ও পদকপ্রাপ্তদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া, শামসুন নাহার মাহমুদ-এরা কঠিন সময় পার করে অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন। তাদেরই দেখানো পথে, তাদেরই জাগরণ প্রচেষ্টার আলোকস্পর্শে আজ প্রতিটি পেশায় নারীরা দৃশ্যমান। পরিশেষে উপাচার্য ইতিহাসে নারী সমাজের সাহিত্য ও সংস্কৃতির দিক বিশদভাবে উপস্থাপনের জন্য ফাউন্ডেশন বক্তা মহুয়া মুখোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানান। প্রতিবছর সুষ্ঠুভাবে এই অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখার জন্য হল কর্তৃপক্ষকে উপাচার্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Post MIddle

রবীন্দ্র চেয়ার অধ্যাপক মহুয়া মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় বিভিন্ন দশকে বঙ্গসমাজের নারীরা যে সংস্কৃতিচর্চা করে গেছেন সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে আলোকবর্তিতা হাতে যারা এগিয়ে গেছেন তাঁদের মধ্যে শামসুন নাহার মাহমুদ একজন বটবৃক্ষ সদৃশ। বেগম রোকেয়া মুসলমান বাঙালি নারীদের মধ্যে যে আন্দোলন ও নবজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন শামসুন নাহার মাহমুদ সেই জাগরণের মশাল এগিয়ে নিয়ে চলেন। বেগম রোকেয়া যে মুক্তির বাণী দিয়েছিলেন মুসলিম নারীদের জন্য মন্দাক্রান্তা ছন্দে সেই আন্দোলনের ঢেউকে শামসুন নাহার পূর্ণ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। সবশেষে যে পথ শামসুন নাহার উন্মুক্ত করে দিয়ে গেছেন তাঁর কর্ম সাধনার মাধ্যমে সেটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাঁকে আরও গতিময় প্রাণবন্ত করে তুলে সেই পতাকা বহন করে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করার জন্য ছাত্রীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

২০১৭ শিক্ষাবর্ষে শামসুন নাহার মাহমুদ ফাউন্ডেশনের স্বর্ণপদক পেয়েছেন

তনুশ্রী দেব নাথ (উন্নয়ন অধ্যয়ন)। মেধাবৃত্তি লাভ করেছেন- তামান্না আক্তার (ইসলামিক স্টাডিজ), শিখা সাহা (গণিত), রিফাত পারভীন (অণুজীব বিজ্ঞান), ইফতিসাম প্রীতি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), মোছা: বিউটি খাতুন (একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস), রিফাত আরা মাসুদ (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল) ও কনিকা আক্তার (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট)। সাধারণ বৃত্তি পেয়েছেন- রাব্বি সুলতানা (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি), নাসরিন (সমাজবিজ্ঞান), সুমনা হক (শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন), মোছা: বিউটি আক্তার (শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন) ও মরিয়ম হাসনা (ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স) এবং এককালীন বই সাহায্য বৃত্তি পেয়েছেন রিকছেমিন সুমনা (ফারসি ভাষা ও সাহিত্য), কেয়া দত্ত (একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস) ও লিমা আক্তার (মৎস্যবিজ্ঞান)। প্রভোস্ট বৃত্তি লাভ করেছেন- নুসরাত জাহান (আরবী), জ্যোতি রায় (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), ইসরাত দিলরুবা শিশু (অণুজীব বিজ্ঞান), ইমা আক্তার (ফলিত পরিসংখ্যান), শারমিন আক্তার (ভূগোল ও পরিবেশ) ও জয়শ্রী পাল (ফিন্যান্স)।

এছাড়া, বার্ষিক সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’র পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, সংস্কৃতি চ্যাম্পিয়ন- আনন্দময়ী কুন্ডু (সংগীত), সাতিহ্য চ্যাম্পিয়ন- সাঈদা বিনতে আসাদ (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক), ক্রীড়া আউটডোর চ্যাম্পিয়ন- সাদিয়া ইসলাম মুনা (দর্শন), ইনডোর চ্যাম্পিয়ন- সামিয়াজ জাহান প্রাপ্তি (গণিত) এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বৃত্তি লাভ করেছেন রতœা বিশ্বাস (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট)।

পছন্দের আরো পোস্ট