ইস্টার্নের স্ট্যান্ডার্ড বালক আশিক আল মামুন

সফল ভবিষ্যত গড়ার অনেক উপায় হয়ত অনেকেই খুঁজতে চায়। কিন্তু কত জন মানুষ আছে যারা সফল ভবিষ্যতের কাছে পৌঁছাতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলিটারি কায়দায় পড়ালেখাই কি সব? এই পড়ালেখা অর্জন এর পাশাপাশি যে বাস্তব জ্ঞান জীবনে জরুরি সেরকম চর্চা ক’জনেই করে? গিয়েছিলাম ঢাকার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। অনেক বড় বড় উদ্যোক্তার বাণীতো সবাই শুনতে চায়। কিন্তু এছাড়া যে ভীড় ঠেলে সামনে দাড়ানোর চেষ্টা করে যাওয়া মানুষগুলোকেই বা ক’জন চিনে? এই ভীড় ঠেলে আসা একজনকে নিয়ে লিখছি……

আশিক আল মামুন তাদেরই একজন। ছোট বেলা থেকেই অধিকার বঞ্চিত মানুষের কথা ভাবেন আশিক। মানুষকে খুশী রাখার ছোট প্রয়াসে তিনি আগ্রহী।  আশিকের কাছে ‘শুধু নিজে ভাল থাকাই প্রকৃত ভাল থাকা নয়, আশপাশের মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে ভালো থাকাটাই জীবনের আসল শিক্ষা।

বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকার তীব্র ইচ্ছা থেকেই কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন “আমরা ক’জন” নামে একটি সামাজিক সংগঠন। যার লক্ষ্য অসহায়, নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিতদের বিশেষ করে গ্রামের মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান সহ মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করা।

যেকোনো অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদেও তিনি থাকেন সামনের সারিতে। বলছিলেন, অন্যায়ের সাথে মাথা নতো করার মতো তিনি নন। তীব্র প্রতিবাদ আর স্লোগনে রাজপথ মুখোরিত করারও অভিজ্ঞতা আছে তার।

আশিকের জন্ম গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। স্কুল জীবন বেশ ভালোই কেটেছে তার। ৫ম শ্রেণিতে জুটেছিল ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। শিবরাম স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০১১সালে জিপিএ ৫.০০ নিয়ে এসএসসি এবং ২০১৩ সালে জিপিএ ৪.৩৫ নিয়ে এইচএসসি শেষ করে বর্তমানে ঢাকার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়ছেন। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থেকেও তার একাডেমিক রেজাল্ট প্রশংসার দাবি রাখে।

Post MIddle

আশিক মনে করেন, আধুনিক বিশ্বে স্বার্থকতার মাপকাঠি যদি ৫০ ভাগ মূলধারার শিক্ষা হয়, তবে বাকিটা সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমের। এই বিশ্বাস থেকেই আশিক একাডেমিক পড়ালেখার বাইরে বাকি সময়টুকু ব্যয় করেন নিজের ও সহকর্মীদের বহুমুখী দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে। স্কুল জীবন থেকেই তার মাঝে এই প্রবনতা বিদ্যমান। খেলতেন ক্রিকেট, পেয়েছেন অনেক পুরষ্কারও। প্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। আশিকের বই পড়ার অভ্যাস খুব। প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। লেখালেখি করতেও ভালোবাসেন। শখের বশেই লিখেন। ভীষণ আড্ডাবাজ আশিক। সময় পেলেই আড্ডা জমিয়ে তুলেন বন্ধুদের সাথে। এর মধ্যে ভ্রমণের ইচ্ছাটাও মনের কোণায় সবসময় গোপন থাকে। সময়-সুযোগ পেলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন দল বেঁধে কিংবা একাকি।

আশিকের কাছে ‘নেতৃত্ব’ দেয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ। ভালো নেতৃত্ব দিতে পারেন তিনি। স্কুল-কলেজ জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসেও একই পথে চলছেন। বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজনেস ক্লাব’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তো আছেই। নেতৃত্ব দেয়ার অসাধারণ গুণের কারণেই বন্ধুরা তাকে ডাকে ‘নেতা’ বলে। এই জিনিসটা তাকে অনুপ্রাণিত করে, মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শক্তিকে দ্বিগুণ করে দেয়।

কেবল একটি সংগঠন নয়, কাজ করছেন প্রথম আলো বন্ধুসভাতেও। কাজের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের জন্য তার স্থান হয় দেশের জনপ্রিয় অনলাইন পাঠশালা টেন মিনিট স্কুলের প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর হিসেবে। তিনি বিশ্বাস করেন, আনন্দ ও সুস্থ শিক্ষা নিয়ে কাজ করার মত অভিজ্ঞতা সব থেকেই সেরা।

এমন প্রবণতা থেকেই আশিক হতে চায় একজন সফল উদ্যোক্তা।  ‘চাকরি করবো না, চাকরি দেব’-এমন মনোভাবই পোষণ করেন তিনি। এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা মানেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকেন আশিক। নিজের সৃজনশীলতাকে ফুটিয়ে তুলতে হলে চাকরি নয়, উদ্যোগ নেয়া দরকার মনে করেন তিনি। সমাজটাকে বদলাতে প্রয়োজন ইতিবাচক কাজ, এর মধ্যে যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের জন্য কাজ করতে চায় আশিক।

বলছিলেন, “শখের বশে অনেক কাজ করি, কিন্তু নিজের সামর্থ্য আর দায়িত্ব সম্পর্কে জানি আমি। আর এ জন্য পড়াশোনা শেষ করে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই এবং আর দশজন মানুষকে পথ দেখাতে চাই’।

পছন্দের আরো পোস্ট