পাঠাও.কম এর সুযোগ সুবিধা

বেলা ২টা বেজে ত্রিশ মিনিট এবং ঘড়ি বেশ দ্রুত যাচ্ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আবীর কে ৩টার মধ্যে বনানী থাকতে হবে। মিরপুর ১২ এর বাস স্ট্যান্ডের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নিজের ভাগ্যকে দোষ দিচ্ছিলো সে। বনানী-গামী কোনো বাসই এ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে না। যদি সে বাস পেয়েও যেত, সে সময় মত গৌন্তব্যে পৌঁছাতে পারতো না।. কিছুক্ষণ পরে আওলাদ হোসেন নামের এক মোটরচালক ব্যক্তি তাকে “উদ্ধার” করে। আওলাদ হোসেন তার কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন, গুলশান ১ এর একটি হোটেলে। আওলাদ, আবীর কে ৩টা বাজার কিছু সময় আগে বনানী নামিয়ে দেয় এবং নিজের কর্মস্থলের দিকে চলে যায়, এর মাঝে সে নিজের জন্য কিছু অর্থ আয় ও করে নিলো। সুবিধা প্রদান এবং সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে যে নাম তাদের দুজন কে এক করলো তা হলো ঢাকার নতুন বাণিজ্য – পাঠাও।

পাঠাও সর্ব প্রথম যাত্রা শুরু করে ডেলিভারি কোম্পানি হিসেবে, শহরের ই- কমার্স জগতে আলোড়ন জাগিয়ে। এটি ২০১৬ এর প্রথম ১০০ টি বাণিজ্যের মধ্যে ১টি যা “ইশেলন” এ অংশগ্রহণ করে, যে ইভেন্টটি বিশেষ ভাবে এশিয়া প্যাসিফিক ও এর আশে পাশের অঞ্চলের বাণিজ্যের উপর আলোকপাত করে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বাদে এই বানিজ্যের চাহিদা তত নয়, ফলে দিনের বাকিটা সময় পাঠাও অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে। সুযোগ সুবিধার এবং যাত্রার সম্ভাবনার সেবার প্রশংসার দিকে লক্ষ্য রেখে, দুই মাস আগে পাঠাও তাদের যাত্রা শুরু করে। কিছুদিনের মাঝেই পাঠাও তাদের শততম যাত্রী বহন করে এবং এখন প্রতিদিন হাজারো যাত্রী তাদের সেবা নিচ্ছে।

যদিও পাঠাও এর প্রধান বিক্রয় বিন্দু হলো সুলভমূল্য, মোটরসাইকেল ভ্রমণে সুবিধাজনক, মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রী উভয়ই এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। পাঠাও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিয়াস হুসেইন বলেন, “যে কেউ পাঠাও এর অংশ হতে পারেন যদি তাদের একটি স্মার্ট ফোন আর একটি মোটরসাইকেল থাকে। আমরা প্রতি মাসে উদ্যোগতা ও ফ্রিল্যান্সারদের কমপক্ষে বিশ হাজার টাকা উপার্জনের সুযোগ দিয়ে থাকি।“

পাঠাও এর মাধ্যমে একটি স্মার্ট ফোন ও মোটর সাইকেল ধারী একজন শিক্ষার্থী বা কর্মজীবী চালক হিসেবে কাজ করতে পারেন এবং তাদের মোট ভাড়ার ১২০% পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। একজন চালক যে কোন সময় তার স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে পারেন, যার মাধ্যমে তিনি যখন খুশি, যেখানে খুশি মোটরসাইকেল চালাতে পারেন। এই স্বাধীনতার কারণে অনেকেই এই পেশা কে তাদের শখ হিসেবে নিচ্ছেন।

Post MIddle

দক্ষ চালকেরা পাঠাও ডট কম এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। পাঠাও এর প্রতিনিধিগণ আইডি এবং অন্যান্য কাগজপত্র এর জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। অ্যাপটির সাথে পরিচিত করতে, গ্রাহক শিষ্টাচার এবং নিরাপদ চালনার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে পাঠাও আরো চালককে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। ইলিয়াস পাঠাও কে একটি অভিনব প্রকল্প হিসেবে দেখছেন। তিনি আশা করেন সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পাঠাও এর সাথে কাজ করে যাবে। এই মুহূর্তে দৈনিক ২০-৩০জন চালক পাঠাও এর সাথে যুক্ত হচ্ছেন। ইলিয়াস আশা করেন এই সংখ্যা একদিন বেড়ে ১০০ হবে। ইলিয়াস দাবি করেন, পাঠাও চালকের সংখ্যার সাথে সেবার মান ও বৃদ্ধি করতে পারবে। তিনি চালক ও যাত্রীদের অংশগ্রহণের বাঁধা গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন।

“পাঠাও এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি সমস্যা যানবাহন ও ট্রাফিক জ্যামের সমাধান করছে। যে এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সে মূলত সমাজের সেবায় অংশগ্রহণ করছে। গতকাল আমি বনানী থেকে ধানমন্ডি যেতে পাঠাও এর সেবা গ্রহণ করি এবং এটি ছিল মাত্র ৩০ মিনিটের যাত্রা। পরিবহণের অন্যান্য মাধ্যমগুলো ব্যবহার করলে কমপক্ষে দেড় ঘন্টা সময় ব্যয় হতো এবং ২-৩গূন ভাড়া বেশি গুনতে হতো। তাই, যে এই সেবা প্রদান করছে, বিশেষ করে চালক, তিনি মানুষের জীবন অনেক সহজ করে দিচ্ছেন।“ ইলিয়াস তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন। “প্রতিদিন রাস্তায় যুদ্ধ করে যদি মানুষকে অফিস বা বাড়ি যেতে হয় তাহলে একটা মানুষ কিভাবে ভালো থাকে?” যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয় তাহলে তা জীবনকেও সহজ করে তোলে। এবং পাঠাও এ এটিই আমরা করে থাকি।“

পাঠাও এমন একটি সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান নিয়েছে যার মাধ্যমে দুজন অপরিচিত ব্যক্তি এক হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের মাঝেও সুলভ ও দ্রুত যাতায়াতের সুবিধা লাভ করে, অন্যজন সহজে অর্থ উপার্জনের সুযোগ এবং একটি চমৎকার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে অপরকে খুশি করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

আগ্রহীরা Pathao.com এ নিবন্ধন করতে পারেন।

 

পছন্দের আরো পোস্ট