বিশ্বমানের ইয়োগা আর্টিস্ট হতে চান আশরাফুন নাহার লিউজা

আশরাফুন নাহার লিউজা।স্বামী বিশিষ্ট টিভি উপস্থাপক,সাংবাদিক শামীম আল আমিন ও একমাত্র কন্যা অপর্ণা কে নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। সেখানে তিনি ইয়োগার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পাশাপাশি অংশগ্রহণ করছেন, আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন ইয়োগা উৎসবে। বিশ্বমানের ইয়োগা আর্টিস্ট হওয়াই তার লক্ষ্য। একই সাথে নিজের অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগাতে চান, বাংলাদেশেও।

এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করেন, যা শুরু করাটা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খুব একটা সহজ ছিল না। নারীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকতে ও এগিয়ে নিতে, তিনি কাজ করছেন ইয়োগা নিয়ে। নিজে ইয়োগা শিখেছেন, পরবর্তীকালে সেই বিদ্যা কাজে লাগিয়েছেন নারীদের জন্যে। গড়ে তুলেছেন, ‘লিউজাস ইয়োগা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে নারীদের ইয়োগা প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি, নানা ধরণের স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাও করেন তিনি। বিশেষ করে গর্ভকালীন এবং পরবর্তী সময়ে নারীদের পাশে দাঁড়ানোই, আশরাফুন নাহার লিউজার মুল উদ্দেশ্য।তিনি মনে করেন, ইয়োগার মাধ্যমে প্রেগনেন্সি পরবর্তী নানা শারীরিক ও মানসিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

ইয়োগা চর্চার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন। কবিতা, ভ্রমণ এবং প্রবন্ধ লেখায় বিশেষ আগ্রহ রয়েছে তার। নিয়মিত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। পড়াশোনা করেছেন রংপুরের তারাগঞ্জ গার্লস হাই স্কুল, ঢাকা উদয়ন কলেজে। এরপর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে। লেখাপড়া ২৪.কমের পক্ষ থেকে আমরা কথা বলেছি, আশরাফুন নাহাল লিউজার সাথে।

15057981_1400515489972137_217418349_n

কেমন আছেন? এই মূহুর্তে কি নিয়ে আপনার ব্যস্ততা?

ভালো আছি। নানা কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত। পরিবার এবং ব্যক্তিগত কাজ।  তার উপর ইয়োগার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। ফিটনেস ঠিক রাখার জন্যে নিয়মিত জিম করছি। চলছে লেখালেখি। সেই সাথে নিজেকে আরও বড় কাজের জন্যে তৈরি করছি। তার উপর পরিবার নিয়ে, ভালোই কাটছে দিনগুলো।

আপনি তো ইয়োগা’র উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেই প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই। সেই সাথে অন্যান্য কি কি কাজ করছেন? একটু বিস্তারিত যদি বলেন।

দেখুন বর্তমানে আমি যুক্তরাষ্ট্রে মূলত ইয়োগা নিয়েই কাজ করছি। উচ্চতর প্রশিক্ষণও চলছে সাথে সাথে। নিউ ইয়র্কের ইউএসএ দেবানন্দ ইয়োগা সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে আরও বেশি প্রস্তুত করা বলতে পারেন। সাহিত্য চর্চাটাও চলছে, জোরেসোড়ে। নিয়মিত কবিতা লিখছি। বিভিন্ন জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে, লিখছি ভ্রমণ ও নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে। এ ছাড়া নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় টেলিভিশন টিবিএন২৪ এ ‘ইতিহাসের পাতা’ নামে একটি অনুষ্ঠান নিয়মিত উপস্থাপনা করছি। সেই সাথে বিভিন্ন সেলিব্রেটিতের সাথে আড্ডার অনুষ্ঠানতো রয়েছেই। এটি অবশ্য সখের বশে করা। আমার মূল কাজ ইয়োগা আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে তৈরি করা। আর অবশ্যই সেটা আন্তর্জাতিক মানের।

 13939500_1318529748170712_6631957407707166828_n

ইতোমধ্যে ইয়োগার যেসব আন্তর্জাতিক উৎসবে যোগ দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে কিছু বলুন? 

আগেই বলেছি, ইয়োগা এখন বিশ্বজনীন। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ইয়োগা নিয়ে অন্যতম বৃহৎ আয়োজনটি হয়ে গেল, নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে। ‘সলসটাইস ইন টাইম স্কয়ার: মাইন্ড ওভার ম্যাডনেস ইয়োগা ২০১৬’ এই শিরোনামে এক মহাযজ্ঞই যেন ছিল, ২০ জুনের সেই ইয়োগা উৎসব। ম্যানহাটনের ব্যস্ত রাস্তায় ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে, রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একটানা এই আয়োজনে, পৃথিবীর নানা প্রান্তের হাজারো মানুষ যোগ দিয়েছিলেন।

সেখানে সকাল ৯টা থেকে ১০টার সেশনে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইয়োগা শিক্ষক সারাহ বেল এই সেশনে প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। বাংলাদেশের ইয়োগা আর্টিস্ট হিসেবে আয়োজকদের পক্ষ থেকে টেলিভিশনের জন্যে আমার একটি সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়। এটি ছিল বেশ ভালো একটি অভিজ্ঞতা। আরেকটি বিশ্বমানের ওপেন এয়ার ইয়োগা উৎসবে যোগ দেয়ার সুযোগ হয়েছিল, ম্যানহাটনের ব্রায়ান্ট পার্কে। প্রশিক্ষকদের মধ্যে সবাই বিশ্বসেরা। ব্রায়ান্ট পার্কের সাথে, সহআয়োজক হিসেবে ছিল ‘অ্যাথলেটা’ এবং ‘ইয়োগা জার্নাল’। সেখানে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা যে কত, তা না দেখলে বিশ্বাসই হয়তো হতো না। দারুন এক অভিজ্ঞতা।

আপনার ইয়োগা চর্চার শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?

তার সাথে আমার ব্যক্তিগত একটি একটি অভিজ্ঞতা জড়িয়ে আছে। আমার মেয়েটার জন্মের পর, আমি বুঝতে শুরু করি, পোস্ট প্রেগনেসি সময়টা অনেক কঠিন। এই সময়ে মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়। নিজের প্রয়োজনে ইয়োগার প্রশিক্ষণ নেই। পরে মনে হয়, আমি যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেই অবস্থার মধ্যে নিশ্চয়ই অন্যেরাও যায়। সেইসব নারীদের জন্যে কিছু করার ভাবনা থেকে, ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল গড়ে তুলি ‘লিউজা’স ইয়োগা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো, সে বছরই বিশ্বজুড়ে ইয়োগা ডে পালিত হচ্ছিল। তখন ঢাকায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে লিউজা’স ইয়োগার পক্ষ থেকে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এরপর বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে লিউজা’স ইয়োগা।

পছন্দ 

পেশাগত কাজ, মানে ইয়োগাই আমার মূল কাজ। আগেই বলেছি, এর বাইরে লেখালেখি করি। বিভিন্ন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি সখের কারণে। আর এর বাইরে যদি জানতে চান, তাহলে বলবো ইন্টেরিয়র নিয়ে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে আমার। যে কারণে ঘর সাজাতে খুব পছন্দ করি। আর একলা থাকলে গান শুনতে ভালো লাগে। জীবন থেকে যতটা সময় বের করতে পারি, তার পুরোটাই দিতে চাই একমাত্র মেয়েটাকে অপর্ণাকে। তার সঙ্গ আমার খুব ভালো লাগে।

যারা ইয়োগা নিয়ে সফল হতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ 

একাগ্রতা প্রয়োজন। শারীরিকভাবে নিজেকে ফিট করে তুলতে প্রয়োজন মনসংযোগও। সেই সাথে ইয়োগা সম্পর্কিত পড়াশোনাও দরকার। কাজটিকে ভালোবেসে করতে হবে। নিয়মিত হতে হবে। ছেড়ে দিলে হবে না। এগিয়ে যেতে দরকার, সাহস ও প্রজ্ঞা। তাহলেই কেবল মিলবে, শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি।

14610922_1365787540111599_4459588301539231404_n

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে

Post MIddle

মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। কোন কিছু মুখস্থ নয় আত্যস্থ করতে হবে। বুঝে পড়া। তার চেয়েও বড় কথা, নিজেকে জানা। নিজেকে কিসের জন্য প্রস্তুত করতে হবে, সেটা জানা। নিজের লক্ষ ঠিক করা। অস্থির না হয়ে, মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবা। সেই সাথে স্বপ্ন দেখা। আর সেই সাথে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। অসম্ভব ভেবে পিছু হটলে চলবে না। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রিয় 

বিভিন্ন কাজ এবং আবহাওয়া উপযোগী পোশাকতো পরতেই হয়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যদি প্রশ্ন করেন কোন পোশাকটি আমার প্রিয়, তাহলে বলবো অবশ্যই শাড়ী পড়তে ভালো লাগে। সুযোগ পেলেই আমি শাড়ী পড়ি।

পছন্দের রঙ 

বেগুনি এবং হালকা নীল।

প্রিয় খাবার

আমি সাধারণত সবজি ও সালাদ খেতেই বেশি পছন্দ করি। পেশাগত কাজে ফিটনেস ধরে রাখতে, এই খাবারগুলো আমাকে সাহায্য করে। তবে পেস্ট্রি আমার খুব প্রিয়। কখনো বিরিয়ানি খেতেও ভালো লাগে।

10978687_986226994734324_6875138321306256307_n

প্রিয় গান

 রবীন্দ্র সঙ্গীত বিশেষ ভালো লাগে। তবে আধুনিক গানও শুনি। অবশ্য সময় ও মুড অনুযায়ী সব ধরণের গানই শোনা হয়।

প্রিয় শিল্পী

বাংলাদেশে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। আর ভারতের শ্রেয়া ঘোষাল। ভালো লাগে সুইফট টেলরের গান।

প্রিয় উপন্যাস

সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন। আর হুমায়ূন আহমেদের সব লেখাই পড়তে ভালো লাগে।

প্রিয় চলচ্চিত্র

বাংলা চলচ্চিত্র জাতিস্মর এবং ইংরেজি রোমান হলি ডে।

10408130_997000406990316_6740784869309258156_n

প্রিয় ব্যক্তিত্ব

আমার স্বামী সাংবাদিক শামীম আল আমিন। আমার প্রিয় বন্ধু, গাইড ও ফিলোসোফার।

লেখাপড়া২৪.কম কে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

 

পছন্দের আরো পোস্ট