রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক দিবস পালিত

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার মহান শিক্ষক দিবস। ঊনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানকালে এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। দিনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। দিবসের কর্মসূচিতে আজ ভোরে প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল ৬.৪৫টায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভিন্ন বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন, এ্যালামনাই এসোসিয়েশন ইত্যাদি প্রভাত ফেরীসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। সকাল ৮.৩০ মিনিটে অফিসার সমিতি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।

সকাল ১০টায় সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় ‘শহীদ ড. শামসুজ্জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে বিশিষ্ট চিন্তক-গবেষক-লেখক প্রফেসর সনৎকুমার সাহা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা: বিধি ও বিধিলিপি’ শীর্ষক বক্তৃতায় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সবদেশেই মুষ্টিমেয়ের আগ্রহের বিষয়। যদিও কারণ ও পরিণামফলে বিভিন্নতা স্বাভাবিক এবং তেমনটিই বেশি। সম্পন্ন ও গরিব দেশ বিষয়টি একই তরঙ্গদৈর্ঘে ফেলে দেখলে এমনটি নাও হতে পারে। আবার সমলয়ে থাকাটাই যে যৌক্তিক ও কল্যাণকর, এটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। বড়-বড় ডিগ্রি পেতে পড়াশোনা ব্যাপকতর ও গভীরতর করতেই হয়। তাতে তেমন কারো জীবন ও পরিপার্শ্ব নিয়ে, মানুষে-মানুষে আন্তঃসম্পর্কিতে ধ্যান-ধারণা বদলে যাওয়া সম্ভব, বিশেষ করে ওই পড়াশোনা যখন আপন বৃত্তে অনেকেরই আয়ত্তের বাইরে। মেধার তফাতই একমাত্র কারণ নয়। বিদ্যা চাইলে বিত্তেরও প্রয়োজন পড়ে। ইচ্ছা থাকলেও সবাই তার যোগান দিতে পারেনা।’

প্রফেসর সনৎকুমার আরো বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিতের কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত না হলে অধিক শিক্ষিতের বেকার হয়ে পড়ে থাকার আশংকা। উপযুক্ত সক্ষম মানব-সম্পদ তৈরি না হলে কাজের ক্ষেত্রও আশানুরূপ বাড়েনা। আত্মবিরোধের দুই প্রান্তকে মাথায় রেখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ভাবতে হয়।

Post MIddle

Teachers Dayআমরা যা-চাই, তা পাইনা। তেমনটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পাবার ইচ্ছাটাও মরে যাচ্ছে। এটা দুর্ভাবনা জাগায়। যদিও জানি উচ্চশিক্ষার হার দ্রুত বাড়ছে, বতু তার কার্যকারিতা কী দাঁড়াবে, অতি-অতি-অতি প্রজ এই দেশে কার কী কাজ জুটবে, সেখানে হাত-সাফাই-এর কারসাজিতে কত যোগ্যতর প্রার্থী ছিটকে যাবে, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুতেই কাটেনা। কী করলে সার্বিক মঙ্গল, এমন কিছু আমার মাথায় আসেনা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন। অবশ্যই চলমান বাস্তবতার ও ভবিষ্যতের আকাঙ্খার প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও এগিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়। সফলতার সঙ্গে বিফলতার কথাটাও যেন তাঁরা অকপটে বলেন। এসব জানার অধিকার জনগণের আছে।’

রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন স্মারক বক্তৃতার পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। সেখানে অন্যান্যের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর সায়েন উদ্দিন আহমেদও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে শহীদ ড. জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

অনুষ্ঠানে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত সুলতানা শহীদ ড. জোহার জীবনালেখ্য পাঠ এবং বিভাগের শিক্ষক ড. বিলকিস জাহান লুম্বিনী ও ড. মো. মাহবুবর রহমান বক্তৃতা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

শিক্ষক দিবসের কর্মসূচিতে আরো ছিল বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বালন। এ দিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা ছিল।

পছন্দের আরো পোস্ট