ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ‘ল’ অ্যালামনাই সম্মেলন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেছেন, অ্যালামনাই এসোসিয়েশন হচ্ছে একটি ভালবাসার সেতু। এই সেতু নতুন এবং পুরাতনদের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে। পুরাতনদের অভিজ্ঞতানির্ভর একটা পরামর্শের মধ্যদিয়ে নতুনদেরকে যুগোপযোগী গ্রাজুয়েট এবং পোষ্ট গ্রাজুয়েট করে গড়ে তুলবার জন্য অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, শুধু মাত্র বাংলাদেশ নয়, আমাদের সাবকন্টিনেন্টসহ বিশ্বের অনেক দেশের রাজনৈতিক ভাগ্যবিধাতার দায়িত্ব নিতে হয়েছে আইন বিভাগের ছাত্র এবং শিক্ষকদের। ভারতের ‘বাবুজি’ বলে খ্যাত মহাত্মাগান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন বিশিষ্ট আইনবিদ। স্বাধীন এবং সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন কিন্তুু চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবী আদায়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি একজন আইনবিদ, মহান জাতীয় সংসদের স্পীকারও একজন আইনবিদ। তিনি বলেন, আমরা ২১ শতকে যদি গ্রাজুয়েশনের পেশাগত দিকেও লক্ষ্য করি, আমার মনে হয় আইন বিভাগ সেই দিক থেকে সকল বিভাগকে ছাড়িয়ে যাবে। পেশাগত নিশ্চয়তা সব বিভাগের চেয়ে আইন বিভাগেরই বেশি। তিনি বলেন, সবার প্রতি অনুরোধ রাখতে চাই, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের সকলের আলমা মেটার অর্থাৎ শিক্ষা জননী। আপনি যত বড়ই হোন না কেন, আপনি কংক্রিটের সভ্যতার যত উঁচুতলায় অবস্থান করেন না কেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আপনাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করবে। সুতরাং সার্টিফিকেট নিয়ে চলে গেলেই যে আপনার দায় শেষ হয়ে গেলো সেটি মনে করবেন না। অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের মধ্যদিয়ে সকল প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা যদি আইন বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাদের পথনির্দেশনা দেন তাহলে আমাদের এই শিক্ষাজননী প্রতিষ্ঠানটির প্রতি অনেকখানি দায়িত্ব পালন করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আয়োজনে দিনব্যাপী প্রথম ‘ল’ অ্যালামনাই সম্মেলন ২০১৭ উপলক্ষ্যে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি’র বক্তৃতায় ভাইস-চ্যান্সেলর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী এসব কথা বলেন।
আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা।
বিশেষ অতিথি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টার’। তোমরা যেখানেই অবস্থান করোনা কেন তোমাদেরকে দেখা যায়। কারন তোমরা বিভিন্নভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রেখে চলেছ। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আইনী ভূমিকা রাখবে, এই কামনা করি। ভিষণ ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মনে করেন।
অপর বিশেষ অতিথি ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে প্রায় সকলেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছ। বিভাগের একজন শিক্ষক হিসেবে এর থেকে গর্বের আর কি হতে পারে। তিনি বলেন, আজকের এই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে তোমাদের মধ্যে যে সেতুবন্ধন তৈরি হলো তা সারাজীবন অটুট থাকবে এই কামনা করি। তিনি বলেন, একজন সাবেক ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তোমাদের যে দায়বদ্ধতা এবং দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি তোমাদের যে কর্তব্য তা অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের মাধ্যমে তোমরা পালন করবে এই প্রত্যাশা রাখি। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ সম্মেলনের আয়োজন করায় তিনি আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বিভাগের ছাত্রী শাহিদা আক্তার আশার পরিচালনায় আলোচনাসভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইন ও শরীয়াহ্ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. নূরুন নাহান, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও ইবি ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবী ও ইবি ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম মাসুদ রুমী ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও ইবি ‘ল’ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহ্ মঞ্জুরুল হক।
আলোচনাসভার পূর্বে আইন বিভাগের প্রক্তন ও বতর্মান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্যাম্পাসে এক বর্ণঢ্য র্যালি বের করা হয়। সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।