নাজমা পারভিনের কাব্যগ্রন্থ ‘দূরবাসিনী’

কবিতা বা পদ্য শব্দের ছন্দোময় বিন্যাস যা একজন কবির আবেগোত্থিত অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে। প্রেম কবিতার একটি অন্যতম অনুসঙ্গ। কবিতার একটি প্রধানতম ও গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষক বিষয় হলো প্রেম। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমজারের কবিতায় প্রেম অনুসঙ্গ হয়েছে।
“যে প্রেমিক সাহস – মাতঙ্গ পরি,
চড়ি সহিষ্ণুতা দৃঢ়বর্মে সর্বাঙ্গ আবরি,
নির্ভয়ে প্রবেশে প্রেম – বিপিন মাঝার,
নিরাশা কণ্টক নাহি ফুটে দেহে তার ”
.
আধুনিক কবিগণও প্রেম বিষয়ক রচনায় পিছিয়ে নেই। প্রেম ভালোবাসার গভীর অনুভূতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা কবিতায়। প্রেম ভালোবাসা প্রকৃতির সহজাত ও চিরায়ত প্রবৃত্তি।
‘দূরবাসিনী ‘ কাব্যে প্রেমের এই সহজাত প্রকাশ ঘটেছে। রাগ, অনুরাগ, বিরহ, ব্যথা, অভিমান, নিন্দা হলো প্রেমের অলংকার। এই অলংকারগুলো পরিয়ে দিয়েছেন কবি নাজমা পারভিন তাঁর কবিতার গায়ে।

. ‘দুরে দূরে রই ‘ কবিতায় তিনি লিখেছেন
“আমি একেলা থাকি
তুমি তারে বলো অহংকার
বলো, সে কি আমার মানায়?
যতবারই ভাবি তোমার সামনে যাবো
পিছিয়ে আসি তারও চেয়ে অনেক বেশি
দূরবাসিনীর অপবাদে তখন আমায় কর তুমি দোষী ।

ভালোবাসা এক মানবিক অনুভূতি। এই অনুভূতি যখন কারো সাথে ভাগ করে নেওয়া যায় তখন ধূসর পৃথিবী রঙিন হয়ে উঠে। কিন্তু অধরা সেই ভালোবাসা যখন মিলেনা তখন কালো আঁধারের সাথে শুরু হয় হৃদয়ের বসবাস। প্রেমিক মন নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। হয়ে যায় দূরবাসিনী। কবি নাজমা পারভিন তাঁর কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম দূরবাসিনী কবিতায় লিখেছেন,
“কারো হৃদয়ে যার ঠাঁই মেলেনি
সে তো হবেই দূরবাসিনী।”
কবি তাঁর এই সরল অথচ সর্বব্যাপী ব্যথার পাঠ শিখিয়ে দিয়েছেন প্রেমিককে।
.
ভালোবাসা আগলে রাখতে হয়। বিশ্বাসের সাথে। কবি নাজমা পারভিন লিখেছেন,
কতদূর যাবে তুমি?
সহস্র ক্রোশ দূরে যেখানে পা রাখবে,
সে পথের প্রতিটি ধূলিকণা তোমাকে ফেরাবে আমার কাছে।

Post MIddle

এই কাব্যের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে বিশুদ্ধ প্রেমের নির্যাস। ‘ দূরবাসিনী ‘ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো জানান দেয় যে, অবিনশ্বর প্রেম বেঁচে থাকে অন্তরে অন্তরে।
.

লেখক পরিচিতি : নাজমা পারভিনের জন্ম ১৯৮৫। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নিজ জেলা মাগুরাতেই পড়াশোনা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অদ্ভূত এইসব হালচাল ‘ এর মাধ্যমে কবি হিসাবে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটলেও তাঁর লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবন থেকেই। ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের বার্ষিক সাহিত্য রচনা প্রতিযোগিতায় তাঁর লেখা কবিতা সেরা কবিতার স্বীকৃতি পায়। হল বার্ষিকীতে তাঁর লেখা গল্প ও কবিতা ছাপা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর লেখা কবিতা ও ছাড়া ব্যাপক সমাদৃত। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কর ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা।
.
গ্রন্থ পরিচিতি :.
স্বচ্ছ সুন্দর ভালোবাসা জীবনের প্রতিটি পরতে ছড়িয়ে থাকে। অযত্ন অবহেলায় আর আবিষ্কারের অভাবে পতিত হয়ে রয় সে ভালোবাসা। কবি নাজমা পারভীন তা অনুভব করেছেন। লিখেছেন,
” মিশে আছি তব মায়াবী ও চোখে
রং তুলি দিয়ে মোরে নিও এঁকে
চাহ যদি মোরে বুঝিতে “

বই : দূরবাসিনী
বিষয়বস্তু : কবিতা
কবি : নাজমা পারভিন
প্রকাশনী : মুক্তভাষ ফাউন্ডেশন
গায়ের মূল্য : ২২০ টাকা মাত্র।
প্রাপ্তিস্থান ঃ স্টল নং ৩৪৯-৩৫২
বিশ্বসাহিত্য ভবন
বইমেলা’১৭

  • কামরুজ্জামান কামরুল, কবি ও গীতিকার
পছন্দের আরো পোস্ট