একজন সফল ফতেহ আলীর গল্প

একজন ফতেহ্ আলীর গল্প। ফতেহ্ আলী আমার আন্ডার গ্রাজুয়েট ছাত্র ছিল। তেমন চিনতাম না। এরপর সে আমার বিভাগে মাষ্টার্সে ভর্তি হলো। ভালো ভাবে চিনলাম। ঘন ঘন আমার চেম্বারে আসতো। হাসি- খুশি মুখ। অত্যন্ত বিনয়ী। ওকে কখনো আমি বিমর্ষ হতে দেখিনি। শত প্রতিকূলতার মাঝেও ওকে শান্ত থাকতে দেখেছি। ফতেহ্ আলী প্রায় আমার চেম্বারে আসতো। আমি ওর সংগে দেশ-বিদেশ নিয়ে আলোচনা করতাম। সিষ্টেম নিয়ে আলোচনা করতাম। ফতেহ্ আলী শুধু চেম্বারেই নয়। অফিস থেকে দুপুরে লান্চ করার জন্য যখন হেটেঁ হেটেঁ ক্যাম্পাসের বাসায় ফিরতাম তখন ফতেহ্ আলী আমার সংগে সংগে বাসার গেট পর্যন্ত আসতো। এভাবেই ক্রমশ আলোচনা গাঢ় হতো। আমার ধারনা এভাবেই ফতেহ্ আলী বিদেশে তথা ইউরোপে উচ্চ শিক্ষার্থে যাবার inspiration পায়। এক দিন ফতেহ্ আলী জানায় সে SI Scholarship এ apply করবে। আমার পরামর্শ চায়। Scholarship এর নিয়ম অনুযায়ী চুড়ান্ত Scholarship পাবার আগেই Selected subject এ প্রায় ৯০০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। ফতেহ্ আমাকে জানাল কি করবে। বল্লাম আমি একটু ভাবি। ভাবছিলাম Scholarship না হলে ৯০০০ টাকা ওর loss হবে। বিষয়টা ওকে বুঝালাম। ফতেহ্ শুধু বল্লো – স্যার আপনি শুধু আমার সংগে থাকলে আমি যেকোন ঝুঁকি নিতে পারি। ওর আত্ববিশ্বাস দেখে অবাক হলাম। রাজী হলাম। ফতেহ্ সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। আমিও ওকে নিয়ে ভাবা শুরু করলাম। আমার জানার সর্বোচ্চটা দিয়ে ওকে সহযোগিতার চেষ্টা করলাম। Motivation letter লিখতেই আমাদের সপ্তাহ লেগে গেল।

Post MIddle

ফতেহ্ সপ্তাহের প্রতি সন্ধায় আমার বাসায় আসতো। আমরা এক দিন মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর তৈরী করতাম। নিখুত Application এর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম। ফতেহ্ আমার বাসায় প্রত্যহ আসার কারনে আমার ছোট্ট কন্যার সংগে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। দুই হাসি-খুশি মানুষের খুন-সুটি দেখতে আমার খুব ভালো লাগতো। একদিন Application এর সব কিছু আমার নিখুঁত মনে হলো। ফতেহ্ চুড়ান্ত Application Send করলো। আমি জানতাম ওর হবে। তারপর একদিন রাত ৯ টার দিকে ফোন দিয়ে জানালো ওর Scholarship হয়েছে। শুনে শুধু বলেছিলাম- আলহামদুলিল্লাহ্। ফতেহ্ তখন জীবিকার প্রয়োজনে কুড়িগ্রামের কোন এক চড়ে – CLP Program এ।

যাহোক, ফতেহ্ সুইডেন চলে গেল। এর কয়েক মাস পর আমিও সুইডেন গেলাম। ফতেহ্ নিজ হাতে ভূনা খিচুড়ি রান্না করে ছুটে এলো স্টকহোমে আমার হোটেলে। এরপর একদিন নিয়ে গেল ওর হোষ্টেলে উপসালায়। রান্না করে খাওয়ালো। ফতেহ্ কিছু দিন আগে মাষ্টার্স শেষ করেছে। Ph D এর চেষ্টা করছিলো। আমার সংগে যোগাযোগ ছিল। কাল জানালো ওর USA এর নাম করা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে Ph D হয়েছে। শুনে খুব ভালো লাগলো। শিক্ষক হিসেবে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমার ছাত্র আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে- এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে। আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা- ফতেহ্ আরো এগিয়ে যাক। আমাদের মুখ উজ্জল হোক। আমরা অনেক ফতেহ্ আলী কে দেখতে চাই। হাস্যোজ্জল বিনয়ী ফতেহ্ আলী ইনশাল্লাহ্ তাঁর অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারবে!!!

  • ড.সফিকুল বারী, প্রফেসর, হাবিপ্রবি, দিনাজপুর
পছন্দের আরো পোস্ট