অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবীতে চলমান অসহযোগিতা কর্মসুচির কারণে ধীরে ধীরে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। তিন দফা দাবীতে অফিসার্স আ্যসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মকর্তাগণ এবং পাঁচ দফা দাবীতে কর্মচারী ইউনিয়ন উপাচার্যকে অসহযোগিতা কর্মসুচি চলমান থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে।

গোয়েন্দা সুত্রমতে, এই সুযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে শিক্ষকদের একটি অংশ কয়েকটি দাবী নিয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে। যেখানে শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন-প্রমোশন , সেশনজট নিরসন, ক্যাফেটেরিয়া চালুকরণসহ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংশ্লিষ্ঠ করতে শিক্ষার্থীবান্ধব দাবী থাকবে। যা পরবর্তীতে ভিসি হঠাও আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।

গত সোমবার যোগ্য কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন-প্রমোশন, পুলিশি হয়রানির শিকার কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি প্রদান করে চাকরি স্থায়ীকরণ এবং বেতন স্থগিত কর্মকর্তাদের স্বপদে বহাল রেখে বেতন চালুকরণের দাবীতে কর্মকর্তারা উপাচার্যকে অসহযোগিতা কর্মসূচি ঘোষন্ করেন এবং উপাচার্য অফিসের সকল কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রাখেন ।

পরের দিন মঙ্গলবার থেকে কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, আপগ্রেডেশন ও প্রমোশন বোর্ড গঠন, নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মচারীদের ওভার টাইম চালু এবং পুরাতন কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে লোক নিয়োগ বন্ধকরণের দাবীতে একই কর্মসুচি ঘোষনা করে কর্মচারীদের সংগঠন কর্মচারী ইউনিয়ন। এমনকি উপাচার্যের গাড়ির চালক গাড়ি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়।

এমতাবস্থায় গত বুধবার নিজের বাসভবনের ভ্যানগাড়িতে অফিসে যাতায়াত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী। যার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার নিজের বাসভবনে অফিস করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এর মিটিং প্রশাসনিক ভবনে হওয়ার রেওয়াজ থাকলেও উপাচার্যের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে চলমান সংকটের ফলে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাস। আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসায় নিরাপত্তা শাখার চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। এই সুযোগে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা অবাধে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

Post MIddle

আন্দোলন প্রশাসনিক কার্যক্রমে অসহযোগিতা কেন্দ্রিক হলেও এর প্রভাব পড়েছে একাডেমিক কার্যক্রমে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসায় অনেকটা থমকে গেছে একাডেমিক কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাফেরা। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে অজানা শঙ্কা ও আতঙ্ক। কেননা এই বিশ্ববিদ্যালযের ইতিহাসে ইতিপূর্বের আন্দোলনগুলো শুরুতে অহিংস থাকলেও তা পরবর্তিতে সহিংস রুপ নেয় যা খুব বেশি সুখকর ছিলনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, পরিস্থিতি এমন যে ক্যাম্পাসে চলতেও ভয় লাগে। কখন কি দুর্ঘটনা হয় সেই ভয়ে কয়েকদিন হতে ক্যাম্পাসে যাওযা বন্ধ করে দিয়েছি।

আন্দোলনের সাথে যেন একপ্রকার সখ্য গড়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়টির। প্রতিষ্ঠার নয় বছরে বারবার আন্দোলনের মুখে পতিত হয়ে দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল যার ফলশ্র“তিতে সেশনজটের কবলে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন অনেকটা যৌক্তিক হলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস- পরিক্ষা হচ্ছেনা। তাছাড়াও বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন হওয়ায় এমনিতেই আমরা সেশনজটের কবলে ঘুরপাক খাচ্ছি।
এক শিক্ষার্থী আক্ষেপের সুরে বলেন, আমাদের কপালে যে কি আছে আল¬াহ তায়ালাই ভাল জানেন। কবে যে এসব সমস্যার সমাধান হবে?
এ বিষয়ে অফিসার্স আ্যসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম ফিরোজ বলেন, তিনদফা দাবী নিয়ে আমরা অহিংস আন্দোলন করে যাচ্ছি। উপাচার্য ফলপ্রসু কোন পদক্ষেপ না নিলে আগামী ২৮ তারিখ অনুষ্ঠিব্য সিন্ডিকেট বৈঠক আয়োজনে সর্বাত্মক অসহযোগিতা পালন করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপাচার্যকে অসহযোগিতা কর্মসুচি অব্যাহত রয়েছে। তবুও দাবী পুরণ না করা হলে আরও কঠোর কর্মসুচি ঘোষনা করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু সালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদু রহমান তুহিন ওয়াদুদ বলেন, যৌক্তিক দাবী নিয়ে আন্দোলন করা যেতে পারে তবে একাডেমিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করে এমন কর্মসূচি দেয়া উচিৎ নয়। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম প্রশাসনিক কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, তাদের দাবির যেীক্তিকতা আছে। আমি বিষয়টি সমাধানের চেস্টা করছ্। তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে। ##

পছন্দের আরো পোস্ট