জাতির পিতার মাজার জিয়ারত ও গোপালগঞ্জের মিষ্টি

জাতির পিতার সমাধিস্থলে গমন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন আওয়ামী পরিবারের প্রতিটি সদস্যেরই একটি অন্যতম চাওয়া। গত ২০ জানুয়ারী মাননীয় উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরাট টিমের আমিও একজন সদস্য ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে এর আগেও আমি কয়েকবার গিয়েছি। আবেগ, ভাললাগা ও ভালবাসা থেকেই বারবার যাওয়া। প্রতিবারই নতুন নতুন উপলব্ধির পরও প্রথমবারের অনুভুতিই ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া যা ভূলার নয় এবং এ জীবনে ভূলবো না।

Post MIddle

২০০৩ সনের এপ্রিল মাসের শেষভাবে আমি তখন সিন্ডিকেট সদস্য, জাবির সাবেক উপাচার্য বায়েস স্যার রাতে ফোনে বলল, কাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গী পাড়ায় একটি অনুষ্ঠানে যাবা নাকি? বলার সাথে সাথেই রাজী হয়ে গেলাম। আমাদের সফরসঙ্গীদের মধ্যে মান্নান স্যার এবং কাফি ভাই ছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান শেষে মাননীয় নেত্রীর সাথে বায়েস স্যার আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। নেত্রী এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আমাদের দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ জানালেন। হাত মুখ ধোয়ে আমরা একটি টেবিলে বসলাম। সভায় আওয়ামী নেতারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাহরিয়ার কবির, মুনতাছির মামুন স্যারসহ অনেক বুদ্ধিজীবিরা। খাবার টেবিলে সাজানো, হঠাৎ দেখি জননেত্রী শেখ হাসিনা টেবিলে টেবিলে গিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাস করছেন। আমাদের টেবিলে আসা মাত্রই বায়েস স্যার আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং নেত্রী আমাদের সাথে পরিচয় হওয়ার পাশাপাশি আমাদের প্লেটে পাবদা মাছ তুলে দিলেন এবং বললেন প্রফেসর সাবরা এটা গোপালগঞ্জের নদীর মাছ- অনেক মজা, আমি আসলেই এই মাছটা নিয়ে আসে। আমরা অভিভূত এবং আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আমার প্লেটে জননেত্রী শেখ হাসিনা মাছ তুলে দিচ্ছেন.. আমার নাম জিজ্ঞাস করছেন.. ইত্যাদি ইত্যাদি।

খাবার শেষ করে আমরা যখন হাত ধোয়ে সোফায় বসে গল্প করছি, তখন দেখি বড় একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে হাজির। মাথা ঘুড়িয়ে তাকিয়ে দেখি ওনি আর কেউ নন, আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আবারও বলছেন প্রফেসর সাবরা একটি মিষ্টি খান, অনেক মজার, এই বলে নিজ হাতে বাটি এনে আমাদেরকে মিষ্টি তুলে দিলেন এবং বললেন যাওয়ার সময় মিষ্টি নিয়ে যাবেন। এবারও অনেক মিষ্টি খেয়েছি, তবে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে নয়, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে। উনিও বলেছেন এখানকার মিষ্টি অনেক মজার, আপনারা যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন।

আমার উপলব্ধিও তাই, গোপালগঞ্জের মিষ্টি অনেক অনেক মজার এবং প্রথমবারেরটা ছিল আরও মজার কেননা ঐটা যে ছিল জননেত্রীর হাতে উঠিয়ে দেয়া মিষ্টি? এবার উপস্থিতি বেশী বলে মিষ্টি আনার প্রতিযোগীতাটাও ছিল আগের বারের চেয়ে বেশী। সেবার অনেক মিষ্টি নিয়ে বাসায় এসেছিলাম এবং এবার আমিসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক মিষ্টি কিনেননি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যখন বাসার গেইটে নামতে গেলাম তখন গাড়ী থেকে নামার সময় আমার হলের আবাসিক শিক্ষক এজহারুল এক প্যাকেট মিষ্টি সামনে এনে বলল স্যার এটা আপনার জন্য, কেননা আমি লক্ষ্য করেছি আপনি কোন একটা কারণে মিষ্টি কেনেননি তাই আমি আপনার জন্য কিনেছি। ধন্যবাদ এজহারুল তোমাকে, কারণ এটা যে কোন সাধারণ উপহার নয়, এটা গোপালগঞ্জের মিষ্টি। এটা বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়িতে আমার নেত্রীর উঠিয়ে দেয়া মিষ্টির সমতুল্য।#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট