১১ বছর পূর্তি ও কুবির যত আন্দোলন

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১১ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হচ্চে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন সময়ে রাজনীতির জের ধরেই বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস-পরীক্ষা। গত বছর আগস্টের প্রথম প্রহরে রাজনৈতিক প্রোগ্রামের অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের বলি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ৭ম ব্যাচের ছাত্র খালিদ সাইফুল্লাহ। এই ঘটনা এবং এর আগে-পরে একাডেমিক ছুটি হিসেব করলে দেখা যাবে গত বছরের ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহার সময়কালীন ৪মাসের মধ্যে বিশ্বব্যিালয়ে একাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষা চলেছে মাত্র ১০দিন! এতে করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট দৃশ্যমান হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

উপরোক্ত ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থবির করে দিচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষক সমিতির আন্দোলন। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম, বাড়ছে সেশনজট। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এতে অচল হয়ে পড়েছে সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম। এমনকি রোববার (২২ জানুয়ারি) থেকে শিক্ষক সমিতি লাগাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে নিয়মিত চলছে  সব ধরনের সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস-পরিক্ষা ।

সূত্র জানায়, গত বুধবার মধ্য রাতে কুমিল্লা শালবন বিহারের পূর্ব দিকে নাজির ভিলার ২য় তলায় ভাড়া বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ তারিক হোসেনের বাসায় দুবৃর্ত্তরা হামলা করে বলে অভিযোগ উঠে। পরদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দরা সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেন। তবে ঐ শিক্ষক বা তার পক্ষ থেকে কেউ এখনোও পর্যন্ত থানায় সাধারণ ডায়েরি কিংবা মামলা করেননি। এমনকি বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর লিখিত কোন অভিযোগও দেওয়া হয়নি।

এই ঘটনার জের ধরেই বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জন করে এবং পরে ঘটনার বিচার দাবিতে রবিবার থেকে সব ধরনের ক্লাস-পরিক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় সীমানার বাহিরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের এই ধরনের কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। সে সব স্ট্যাটাসের মধ্যে উঠে আসছে শিক্ষকদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব।

ইমরান খান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, “এতো কথার দরকার কি ভাই? ছাত্র-ছাত্রীরা যদি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের বিপক্ষে মানব-বন্ধন/আন্দোলন করে তাহলে শিক্ষকেরা আন্দোলন ছাড়তে বাধ্য।শাবিপ্রবির দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন।’’

Post MIddle

কামরুজ্জামান নামে আরেক ছাত্র লিখেন, “সন্মানিত শিক্ষকবৃন্দ আপনাদের সার্কাস বন্ধ করুন, দয়া করে মাঠে খামারে খেটে উপার্জন কারী বাবাদের রক্ত বিক্রি করে দেওয়া অর্থ অযথা নষ্ট করা বন্ধ করুন। কোন ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ চাই না। সকল বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ জেগে উঠুন পিতা মাতার কষ্ট একটু লাঘব করুন।আমরা শিক্ষকদের অপরাজনীতির বলির পাঠা হতে চাই না আর।’’

শরিফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, “আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসন এর নাম দিয়ে তার অপব্যবহার করছে, আমরা সাধারণ ছাত্ররা এই স্বায়ত্বশাসন চাই না, আমরা চার বছরের কোর্স চার বছরেই শেষ করতে চাই”।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ আবু তাহের এর কাছে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, “এখনো পর্যন্ত উপাচার্য মহোদয়ের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছি। তবে তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, আশা করি শীঘ্রই সংকট নিরসন হবে।’’ এছাড়াও সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু সান্ধ্যকালীন কোর্স প্রাইভেট প্রোগ্রাম, তাই এটা আমাদের আন্দোলনে পড়েনা।’’

আন্দোলন কতদিন চলবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘‘আগামী রোববার অথবা সোমবার আমরা শিক্ষক সমিতি বৈঠকে বসবো ওখানে সিদ্ধান্ত হবে।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষক তারিক হোসেন বলেন, “আমি মামলা অথবা জিডি করতে চাই  না, যেহেতু শিক্ষক সমিতি এ নিয়ে কাজ করছে সুতরাং আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে মামলা করতে পারেন।’’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বাসায় হামলা কোন মতেই কাম্য নয়, এমনকি কোন শিক্ষার্থীর উপরও যদি হামলা করা হয় তাও বরদাশত করা হবেনা। এ ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মর্মাহত এবং আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষক এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর অথবা প্রক্টরিয়াল বডি বরাবর কোন ধরনের লিখিত্ অভিযোগ দেননি।’’

পছন্দের আরো পোস্ট