অনন্য এক ক্রিকেটার মাইশুকুর

বাবা মা বাড়িতে। তাদের তরফ থেকে রিয়ালকে বাহিরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।একটু পর দরজায় ঠক ঠক শব্দ…… এপাশ থেকে, ’কে? আন্টি আমরা …কি চাই? আন্টি আমাদের একটা খুব গুরত্বপূর্ণ খেলা আছে, রিয়ালকে খুব দরকার। ’না রিয়ালকে খেলতে যেতে দিবনা’। ’প্লীজ প্লীজ আন্টি, ও অনেক ভাল খেলে ওকে ছাড়া আমরা হেরে যাব, অনেক কষ্ট করে আমরা সেমি ফাইনালে উঠেছি’…… ’এতো খেলা করে কি হবে’? ’আন্টি আমরা কিছু না করতে পারলেও ভবিষ্যতে আপনের ছেলে রিয়াল অনেক কিছু করতে পারবে, আর আপনি কোন চিন্তা করবেন না, খেলা শেষ হলেই ওকে আমরা বাড়িতে রেখে যাব’………

ছোট বেলায় বালিশের পাশে ক্রিকেট বল নিয়ে ঘুমাতো রিয়েল, ঘুম থেকে উঠে বল না পেলে কান্না কাটি শুরু করে দিত। বাড়ি থেকে খেলার প্রতি খুব বেশি সমর্থন না পেলেও পাড়ার বড় ভাইয়েরা তাকে খেলানোর জন্য এভাবেই প্রতিনিয়ত বাবা মার কাছে অনুরোধ করে অনুমতি নিয়ে নিয়ে যেত। এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় মুখ ও বাংলাদেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটার মাইশুকুর রহমান রিয়েলের ছোট ভাই মুশফিকুর রহমান রিয়াদ……

ছোট হয়েও সবসময় বড়দের সাথে খেলত রিয়াল কারন তার সমবয়সী কেও তার মত খেলতে পারত না। সিনিয়ররাই তাকে ডেকে নিত।

১৯৯৯ বগুড়ায় দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট দিয়ে যাত্রা শুরু। সে বছরেই বগুড়ায় প্রথম ক্রিকেট ক্যাম্পে বেস্ট পারফর্মার এওয়ার্ড লাভ করেন । তারপর বি কে এস পি ইকঝচ ক্যাম্পে চান্স ভাল পারফর্ম করায় ৬ মাসের ক্যাম্পে ডাক পান। ভাল করায় বিকেএসপি কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করানোর আগ্রহ দেখায়। তারপর সেখান থেকেই সেকেন্ড,থার্ড ডিভিশন খেলায় অংশগ্রহণ করেন।

রাজশাহী বিভাগীয় অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে ১ টি সেঞ্চুরি ২ টি ফিফটি করেন। যেখানে তিনি পুরো বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তারপর থেকে তাক আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
রাজশাহী বিভাগীয় অনূর্ধ্ব ১৭ এর হয়ে ২ টি সেঞ্চুরি ২ টি ফিফটি করেন। যেখানে ম্যান অব দি সিরিজ নির্বাচিত হয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হিসেবে।

২০০৬ সালে এস এস সি ২০০৮ সালে এইচ পাশ করেন বিকেএসপি থেকে ।
তারপর প্রথম পেশাদার প্রিমিয়ার লীগ, ডিভিশন লীগ সিটি ক্লাব এর হয়ে খেলেন ২০০৮ সালে। এখানে পর পর ৪ টি ম্যাচে ফিফটি হাঁকান। ফলে রিয়েল জি পি বি সি বি একাডেমীতে সুযোগ পান যেখানে ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের নাসির হোসেন, সোহাগ গাজী, মারশাল আইয়ুব সহ আরও অনেকেই ছিলেন।

তারপর ২০০৯ সালে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় লীগে ২ সেঞ্চুরী সহ ভাল পারফর্ম করায় প্রথম বিসিবি একাদশে জায়গা পায় যেখানে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৬৮ রান সংগ্রহ করেন যা সেই ম্যাচে বাংলাদেশীদের মধ্যে সর্বাধিক। তারপর থেকে নিয়মিত ন্যাশনাল লীগ, প্রিমিয়ার লীগ খেলছেন।
সর্বশেষ,ওয়ালটন এলইডি টিভি ১৮তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের শেষ রাউন্ডে ১৬১ দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছেন মাইশুকুর রহমান।

Post MIddle

বগুড়ায় রংপুরের বিপক্ষে রাজশাহীর দ্বিতীয় ইনিংসে মাইশুকুর করেন ১৬০। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও। শুক্রবার ড্র হওয়া এই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ও হয়েছেন বগুড়ার ২৫ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান।

জানতে চাইলে মাইশুকুর রহমান বলেন, ‘ক্রিকেটই আমার ধ্যান-জ্ঞান। অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। জাতীয় দলে সুযোগ পেলে দেশের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।’

এক নজরে:
অনুর্ধ্ব১৫, ১৭,১৯, ‘বিসিবি একাডেমি’ ও ‘এ’ দলের হয়ে বিভিন্ন ম্যাচ খেলেন প্রতিভাবান ক্রিকেটার মাইশুকুর রহমান রিয়েল।

২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়ে বিকেএসপির আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি। সেখানেই ক্রিকেটের খুঁটিনাটি শিখেছেন তিনি। পড়াশুনায়ও পিছিয়ে নেই তিনি। দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীও তিনি।

পেশাদার ক্রিকেটে ২০০৮ সালে সিটি ক্লাবের হয়ে ৪টি অর্ধশত রান করে নির্বাচকদের নজরে আসেন। জিপি বিসিবি একাডেমি দলেও সুযোগ পান।

জাতীয় ক্রিকেট লীগে সিলেটের হয়ে অভিষেক ম্যাচে ৫৩ রানের ইনিংসও খেলেন তিনি। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে সিটিক্লাব, ভিক্টোরিয়া, সূর্যতরুণ ক্লাবের হয়ে খেলেছেন।

জাতীয় লীগের ১৪তম রাজশাহী বিভাগের হয়ে ১৫৮ রানের ইনিংসসহ প্রায় ৫০০ রান করেন তিনি। এছাড়া প্রিমিয়ার ডিভিশনের শেখ জামালের হয়েও প্রায় ৪০০ রান করেন তিনি।

জিপি বিসিবি একাদশের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অর্ধশত রানের ইনিংস এবং জাতীয় লীগে ২ টি শতক ও ৯৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে নির্বাচকদের নজরে আসেন। সুযোগ পেয়ে বিসিবি একাদশের (এ দল) হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৮ রানের ইনিংসও খেলেছেন তিনি।

পছন্দের আরো পোস্ট